আজ, লক্ষ্মী পুজো। বাঙালির ঘরে ঘরে চলছে তারই আয়োজন। একই ছবি দেখা গিয়েছে জেলার শহর থেকে গ্রামসর্বত্রই। এই পুজোকে ঘিরে বাজার আগুন থাকলেও আয়োজনে খামতি নেই। নানুর, বোলপুর, সিউড়ি, দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট, ময়ূরেশ্বর প্রভৃতি এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেল সর্বত্র সব্জি, ফলের বাজারে ভিড়। কেনাকাটাতে খামতি নেই ছোট, বড় প্রতিমারও। পুজোর এক দিন আগে থেকেই দোকানে দোকানে ভিড় লেগে গিয়েছে।
ফুলের দোকান থেকে মুদি দোকান সর্বত্র ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও ক্রেতাদের মুখে একটাই কথা বাজার আগুন! তবু লক্ষ্মীকে ঠাঁই দিতে হবে তো। তাই সব ধরনের বাজারে কাটছাঁট করে চলছে কেনাকাটা। লক্ষ্মীপুজো মানেই বেশিরভাগ ঘরে ভোগে খিঁচুড়ি রান্নার আধিক্য। সঙ্গে নানান রকম সব্জি ভাজা, তরকারি। আর সেই খিঁচুড়ির ভোগ দিতে গিয়েই পুজো কর্তার মাথায় হাত। চালের দাম যাই থাক মুগ ডাল যেটা ছাড়া খিঁচুড়ি হবে না তার দাম দুর্গাপুজোর সাত দিনের মধ্যে ১০ থেকে ৮৫টা কেজি হয়েছে। এখন ৯৫ টাকা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সব্জি ছাড়া লক্ষ্মীর ভোগ সম্পূর্ণ হবে না, সেখানে ক্রেতাদেরকেও ভাবতে হচ্ছে।
অন্য দিকে, জেলার ময়ূরেশ্বর থানার কোটাসুর, রামনগর, সাঁইথিয়া এলাকায় আলুর উৎপাদন বেশি। ওই সব এলাকায় আলুর যোগান বেশি থাকায় কেজি প্রতি ৬-৭ টাকা করে মিলছে। কিন্তু রামপুরহাট, সিউড়ি, বোলপুর, দুবরাজপুর, নানুরে আলুর দাম কেজিতে ১টাকা করে বেশি। কুমড়ো পুজোর সময় থেকে ১৪টাকা কেজি দরে বিকোচ্ছে। অন্য সময় যেখানে ৭-৮ টাকা করে থাকে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, টম্যাটোর দামেও তারতম্য আছে। লক্ষ্মী পুজোর জন্য সব্জির পাশাপাশি ফলের বাজারও আগুন। কোথাও আখ ১৫-২০ টাকায় বা আতা ১৫টাকায় বিকোচ্ছে। ডাব ১৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পুজোর সময় ছাড়া অন্য সময়ে যার দাম থাকে ১০ টাকা। সোমবার বোলপুর বাজারে আপেল ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সিউড়ি ও রামপুরহাটে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আবার দুবরাজপুরে ফুলের বাজারে গিয়ে দেখা যায় ২০ পিস ফুলের দাম ৮০ টাকা। প্রতিমার ক্ষেত্রেও সিউড়িতে দেখা গিয়েছে, ছোটটির দাম ১০০ টাকা। আর বড়মাপের দাম ১৬০ টাকা।
বাজারের জিনিসপত্রের দাম যাই থাক না কেন ক্রেতাদের কিনতেই হবে। তাই বাজেটে কাটছাট করেও সব জিনিসই কমবেশি করে নিয়ে যেতে হচ্ছে তাঁদের। বোলপুরের বাসিন্দা অনুপম মণ্ডল, সঞ্জয় চৌধুরী, নানুরের সুকুমার গড়াইরা বলেন, “বাজারে জিনিসপত্রে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। মায়ের পুজো বলে কথা। বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাই অল্প করে হলেও সব জিনিসই কিনতে হচ্ছে।”
অন্য দিকে, সব্জি বিক্রেতা রামপুরহাটের বংশীধর লেট বলেন, “পাইকারি বাজারে জিনিসের যোগান যে ভাবে থাকছে আমাদের সে ভাবেই বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারি বাজারে দাম বেশি থাকলে আমাদেরও বাড়াতে হচ্ছে।” একই বক্তব্য বোলপুরের সব্জি ব্যবসায়ী বাপি সরকারেরও। দুবরাজপুরের বাসিন্দা সুখেন হালদার বলেন, “আর্থিক অবস্থা ভাল না হলেও প্রত্যেক বছর বাড়িতে পুজো হয়। এ বার বাজার দর যা, তাতে কাটছাট করতে হয়েছে।” বধূ লক্ষ্মী চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “বাড়ির অবস্থা স্বচ্ছল নয়। এ বার পুজোর বাজার করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।”
তবে কেন এই দামবৃদ্ধি। সে ব্যাপারে ব্যবসায়ী স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না। |