নবমীর নিশি পার হলেই বিষন্নতা গ্রাস করে প্রায় সব বাঙালিকেই। ফের একটি বছরের অপেক্ষায় থাকেন মানুষ। রায়নার আনগুনা গ্রামে অবশ্য ব্যাপারটা অন্য রকম। এই গ্রামের বাসিন্দারা বিজয়া দশমীর অপেক্ষায় থাকেন। কারণ, তার পরেই তো গ্রামের সামন্ত পরিবারে লক্ষ্মীপুজো। পারিবারিক এই পুজো এখন সর্বজনীনের রূপ পেয়েছে। ৭৩ বছরের পুরনো এই পুজোয় নিমন্ত্রিত গোটা গ্রামের মানুষ।
সামন্ত পরিবারের সদস্যেরা জানান, বাড়ির আর্থিক অবস্থা ফেরাতেই চার শরিকের এই পুজোর প্রচলন হয়। বাড়ির সদস্য আদিত্যনারায়ণ সামন্ত বলেন, “আমার বাবা ভোলানাথ সামন্ত গরিব ছিলেন। আমাদের শুধু একটা কুঁড়ে ঘর ছিল। সামান্য জমির ভাগ চাষি ছিলেন বাবা। শেষে বাড়িতে ছোট লক্ষ্মীমূর্তি এনে তিনি পুজো শুরু করেন। এর পরেই সমৃদ্ধি হতে থাকে। দিনে দিনে বাড়তে থাকে পুজোর জাঁকজমকও।’’ |
পরিবারের এক প্রবীণ সদস্য লক্ষ্মীনারায়ণ সামম্তের কথায়, “পরিবারের সদস্যেরা প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করেন। তার পরেই আমরা ঠিক করি, দেবীর কৃপা গ্রামের মানুষের কাছেও পৌঁছে দিতে হবে। তাই পারিবারিক পুজোকে সর্বজনীনের রূপ দিয়েছি আমরা।”
আনগুনায় তাই দুর্গা পুজোর চেয়েও বেশি উৎসাহ লক্ষ্মী পুজোকে ঘিরে। সামন্ত পরিবারের প্রায় পঞ্চাশ জন সদস্য এখন দেশের বিভিন্ন জায়গা বা বিদেশে রয়েছেন। তাঁরাও প্রায় সকলেই এই পুজো উপলক্ষে গ্রামে ফেরেন। এ বার অস্ট্রেলিয়া থেকে বাড়ি এসেছেন পেশায় চিকিৎসক রাহুল সামন্ত, পঞ্জাবের লুধিয়ানার বাসিন্দা, বাড়ির মেয়ে বাসবদত্তা মুখোপাধ্যায়রা। তাঁদের কথায়, “সারা বছর অপেক্ষ করি, দুর্গাপুজো কবে মিটবে। কবে লক্ষ্মীপুজোর জন্য গ্রামে ফিরব।”
পুজো উপলক্ষে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বাজি ফাটানোর প্রতিযোগিতা। নবীন সদস্য সুদীপ্ত সাঁই ও সৌম সামন্তরা বলেন, “গ্রামের মানুষ নতুন জামাকাপড় পরেন লক্ষ্মীপুজোয়। দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে আমরা লক্ষ্মীপুজোর পরিকল্পনা করেই কাটাই।”
সামন্ত পরিবারের লক্ষ্মী প্রতিমা একচালার। দেবীর মাথার দু’পাশে রয়েছেন দুই পরী। নীচে দুই সখি জয়া এবং বিজয়া। বছরভর অপেক্ষার পরে তাই এ বার পুজোয় মাততে তৈরি আনগুনা। |