লক্ষ্মী লাভের আশায় বছরভর বাইরে কাটান গ্রামের যুবকেরা।
আর লক্ষ্মী পুজোর সময়ে দল বেঁধে ফিরে আসেন গ্রামে। কাটোয়ার বিষ্ণুপুর গ্রামে সব মিলিয়ে তিনটি সর্বজনীন লক্ষ্মী পুজো হয়। যার মধ্যে দু’টি পুজোর জাঁকজমক বেশি।
এই গ্রামের অন্তত ৫০ জন যুবক কলকাতা, দিল্লি, জয়পুরে গয়না তৈরির কাজ করেন। দুর্গাপুজোর সময়ে ব্যস্ততা তুঙ্গে থাকায় তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারেন না। পুজোর পরে বাড়ি ফিরে এসেও বিষণ্ণতার মধ্যেই দিন কাটত তাঁদের। বিষণ্ণতা কাটাতে ১৮ বছর আগে গ্রামে সবর্জনীন লক্ষ্মীপুজো শুরু হয়।
এসটিকেকে রোডের ধার থেকেই কাটোয়ার বিষ্ণপুর গ্রামের গিনি স্টারের পুজো দেখা যাবে। ফি বছর তারা দৃশ্যাঙ্কনের মাধ্যমে লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা করেন। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এ বছর ধানের শীষ দিয়ে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। এছাড়া মণ্ডপের সামনে বড় পুকুর ঘিরে দেখা যাবে বাহারি আলোকসজ্জাও।
এই পুজোর উদ্যোক্তা সুদেব সরকার, জয়ন্ত সরকাররা বলেন, “পুজোর পরে আমরা ১০-১৫ দিন ছুটি পাই। পুজোর পরে বিষণ্ণতা কাটাতে আমরা লক্ষ্মী পুজো শুরু করি। এ বছর আমাদের পুজো ১৯ বছরে পা দিল।” উদ্যোক্তারা জানান, এ বছর পুজোর বাজেট প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। তবে সেই টাকা তোলার জন্য কারও কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয় না। |
তাহলে এত টাকা আসে কী ভাবে? মধুসূদন সরকার, সনাতন দে-র কথায়, “আমরা যাঁরা গ্রামের বাইরে থাকি, তাঁরাই পুজোর সমস্ত খরচ ভাগ করে নিই।” উদ্যোক্তারা জানান, অন্য জায়গায় লক্ষ্মীপুজো এক দিনের হলেও বিষ্ণুপুর গ্রামে চার দিন ধরে উৎসব চলে। দুর্গা পুজোর মতো সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীর পুজো হয়। দশমীর সন্ধ্যায় দেবীর বিসর্জন হয়। এ বার আজ, মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত চলবে এই উৎসব।
আগে এই গ্রামে গিনিস্টার ক্লাবের উদ্যোগে একটি মাত্র পুজো হত। বছর তিনেক আগে মাঝেরপাড়া নাগিনস্টার আরও একটি পুজো শুরু করে। এই ক্লাবের সদস্যরাও গয়না তৈরির কাজে বাইরে থাকেন। এখানকার ভবেশ দাস, গোকুল দাস, সনৎ দাসরা বলেন, “গ্রামের ভিতরে কোনও পুজো হত না। তাই আমরা পুজো শুরু করেছি।” এ বার এই পুজোর বাজেট প্রায় ১ লক্ষ টাকা। এ বছর অবশ্য আরও একটি পুজো হচ্ছে। ওই পুজোর উদ্যোক্তারা জানান, এই বছরই তাঁরা প্রথম পুজো করছেন। তাই এ বার খুব বেশি জাঁকজমক করতে পারছেন না তাঁরা।
এ গ্রামে বাড়ি বাড়ি পুজো হয় না ঠিকই, তবুও পুজোর চার দিন ভোগ খাওয়া থেকে বাজি প্রদর্শনী, বাদ যায় না কিছুই। এ সবের মধ্যে দিয়েই দুর্গোৎসবের আনন্দ ছুঁতে চায় বিষ্ণুপুর গ্রাম। |