শনিবার ১৫ টাকা। রবিবার ২৫ টাকা। সোমবার ৩০ টাকা। ফুলকপির দাম এ ভাবেই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে গত তিন দিনে। ফলের দাম তো অগ্নিমূল্য হয়েছে সেই কবেই। এত দিন ম্যানেজ করা যাচ্ছিল লুচি, ফুলকপি-আলুর দম দিয়ে। তারও বিকল্প খোঁজার সময় এ বার হয়ে এল বোধ হয়, বাজার ফেরতা গৃহস্থদের অভিজ্ঞতা তেমনই।
আজ কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। ধনলক্ষ্মীর আরাধনা বাঙালির প্রায় প্রতি ঘরে। পুজো শেষে প্রতিবেশী পরিজনদের প্রসাদ খাওয়ানোর রেওয়াজ বহু পুরনো। কিন্তু অগ্নিমূল্যের বাজারে তা বজায় রাখতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে গড়পড়তা বাঙালির। ফলের বাজার চড়া হতেই জোর পড়েছিল রান্নাঘরে। পুজোয় কোনও রকমে নৈবেদ্য সাজানো, তার পরে সামান্য ফল প্রসাদের সঙ্গে পেট পুরে লুচি, ফুলকপি-আলুর দম অথবা খিচুড়ি, সঙ্গে পাঁচমিশালি তরকারি। কিন্তু সব্জির বাজারও যে ভাবে অগ্নিমূল্য হয়েছে তাতে এই পদ্ধতি কত দিন বজায় রাখা যাবে তা নিয়ে চিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে ঘরে ঘরে।
কর্তার সময় নেই। তাই সিটি সেন্টারের নন কোম্পানি এলাকার মুখোপাধ্যায় গিন্নি পাড়ার মণ্ডলদার দোকান থেকেই নিয়মিত সব্জি কেনেন। সোমবার সকালে দোকানে গিয়ে দেখলেন ফুলকপি নেই। মণ্ডলদা জানালেন, মাঝারি সাইজের ফুলকপির দাম দু’দিনে ১৫ থেকে ৩০ টাকায় পৌঁছেছে। ঝুঁকি নিয়ে তিনি আর তাই ফুলকপি তোলেননি। লুচি, ফুলকপি-আলুর দমের পরিকল্পনার ওখানেই ইতি। খিচুড়ি-পাঁচমিশালি তরকারির পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়ে গেল সব্জির দোকানেই। কিন্তু তাতেই বা স্বস্তি কই! বেগুন ৪৫ টাকা, পটল ৩৫ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৪০ টাকা, বিন ৮০ টাকা, বরবটি ৩৫ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, মুলো, পেঁপে ও কুমড়ো ২০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা, পালং শাক ৩৫ টাকা প্রতি কেজি। |
চণ্ডীদাস বাজার, বেনাচিতি বাজার, মামরা বাজার বা স্টেশন বাজারে ঢুঁ মেরে দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন সব্জির দামের হেরফের রয়েছে। তবে তা সামান্যই। মোটামুটি ভাবে শহরের সব বাজারেই গড়পড়তা সব্জির দাম প্রায় একই। চণ্ডীদাস এলাকার বিনয় মণ্ডল বললেন, “বাজারের যা অবস্থা তাতে লক্ষ্মীপুজোর আয়োজনে কিছু কাটছাঁট করতে হবে এ বার। সগড়ভাঙার বধূ স্মারকী সাউ বলেন, “সারা বছরে বাড়িতে আর কোনও প্রতিমার পুজো করি না। তাই লক্ষ্মীপুজোয় পরিবার পরিজন থেকে শুরু করে প্রতিবেশীদের পেট পুরে প্রসাদ খাওয়াই। কিন্তু বাজারের যা অবস্থা তাতে তো এ বার ভাবতে হচ্ছে।” স্মারকীদেবীর দাবি, স্টেশন বাজারেই তবু তুলনামূলক সব্জির দাম কম। কারণ, কাছেই দামোদরের মানা চরে প্রচুর সব্জি চাষ হয়। সিটি সেন্টারের বাসিন্দা পারমিতা রুদ্র বললেন, “দুর্গাপুজোর পরে সব্জির দাম বেশ কমেছিল। কিন্তু যেই লক্ষ্মীপুজো এল, রবিবার থেকে ফের সব বেড়ে গেল।”
কেন সব্জির এত দাম? মামরা বাজারের ব্যবসায়ী শুভম মণ্ডল জানান, চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি সব্জি কিনতে না পারার কারণেই সব্জির এত দাম। মধ্যসত্ত্বভোগীদের জন্যই এই পরিস্থিতি। স্টেশন বাজারের সুবোধ দাস বলেন, “আমাদের তো কিছু করার নেই। সরকারি নজরদারি জোরালো না হলে এই ফাটকাবাজি কমবে না।”
করার যখন আপাতত কিছু নেই তখন পকেট গড়ের মাঠ করেই ধনলক্ষ্মীর আরাধনায় মেতে ওঠা ছাড়া গতি কী! |