|
|
|
|
|
স্বাস্থ্যং দেহি |
এক তুড়িতে মেদ ঝরে না। বিজ্ঞাপন বা প্রযুক্তির ফাঁদ নয়, লক্ষ্য হোক ‘লং টার্ম’।
জানালেন, ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি’র টিচিং ফ্যাকাল্টি চিন্ময় রায় |
বাতাসে পুজোর গন্ধ মানে চেহারায় পালিশ আনার একটা বাড়তি তাগিদ। মন চায়, অষ্টমীর সন্ধ্যায় শরীরটা গেঞ্জি আর জিনস-এ যেন মেদহীন টানটান দেখায়। শতকরা দশ শতাংশ যাঁরা সারা বছর শরীরচর্চা করেন, তাঁদের জন্য এই ভাবনাটা একদম বাস্তব। বাকি নব্বই শতাংশের মধ্যে ফিটফাট দেখানোর ভাবনাটা উঁকি দেয় শরতের বাতাস গায়ে লাগলে। হঠাৎই ফিট হতে চাওয়া এই দলটার মাথায় প্রথমেই আসে শর্টকার্ট-এর রাস্তা। যেমন স্লিমিং সেন্টার-এ গিয়ে হাহাকার ভরা ‘ইঞ্চ লস’। কেউ পড়েন, জিম-এ ম্যাজিক ওয়ার্ক আউট-এর ফাঁদে। কেউ টপাটপ গিলতে থাকেন বিজ্ঞাপনের ভেষজ গুলি। অনেকে করেন নেট ঘেঁটে ডায়েটিং।
প্রযুক্তি খুঁজে যাঁরা শরীরটাকেও এক তুড়িতে বদলে দিতে চান, তাঁদের রূঢ় বাস্তবটা মনে করিয়ে দেওয়া যাক। কোনও ম্যাজিক ফর্মুলা আপনাকে বদলে দিতে পারবে না। ‘এক্সারসাইজ সায়েন্স’ একটা সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। শরীরে জমে থাকা বাড়তি মেদ যেমন রাতারাতি কমানো উচিত নয়, তেমনি রোগা-পাতলা কারও প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট খেয়ে হঠাৎই পেশির আস্ফালন দেখানো স্বাস্থ্যের পক্ষে নিদারুণ ক্ষতিকর।
নির্দিষ্ট টাইম-লাইন মেনে ফিট হতে হবে এমন ডেটলাইন-এ আছে ভ্রান্ত আবেগবিজ্ঞানমনস্কতা নেই। বরং উল্টোটা ভাবুন। শপথ নিন যে এ বার শুরু করলাম, আর আগামী পুজোয় আয়নায় দেখব কতটা বদলালাম। দু’সপ্তাহের ‘ইঞ্চ লস’-এর মরীচিকাকে ঝেড়ে ফেলে আজ থেকে একটা পরীক্ষিত এবং প্রমাণিত শরীরচর্চার প্রক্রিয়া শুরু করুন।
যাঁরা চটজলদি পেটের মেদ কমানোর নেশায় অ্যাব মেশিন দিয়ে হাজার হাজার সিট-আপ দিচ্ছেন বা কারও ভুল উপদেশে বৈঠক দিতে দিতে ভাবছেন যে পেটের বা হাঁটুর মেদ কমছে, তাঁদের জন্য রইল এই দুঃসংবাদস্পট রিডাকশন হল বিজ্ঞাপনের ভুলভুলাইয়া। ফ্যাট হল শরীর চালনার অন্যতম ফুয়েল বা দাহ্য পদার্থ। আর ব্যায়ামের সময় শরীরের যখন এই ফুয়েল-এর প্রয়োজন হয় তখন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার নিয়ম মেনে সেটা শরীরের সব অংশ থেকেই ব্যয় হয়, নির্দিষ্ট একটা অংশ থেকে নয়। তা হলে প্রচলিত সিট আপ দিলে পেটের মেদ ঝরবে কী ভাবে? মনে রাখবেন, ফ্যাট টিস্যু থাকে মাংসপেশির উপরে। সিট আপ’এ মাংসপেশি শক্তিশালী হয়। ফ্যাট টিস্যুগুলি যেমন আছে তেমনই থেকে যায়।
ভাইব্রেটর মেশিন দিয়ে স্লিমিং প্রক্রিয়া বিজ্ঞানের পাতা থেকে নেওয়া নয়। ওটা কোম্পানিগুলোর বাজার ধরার জন্য বিজ্ঞাপনের চমক। গবেষণা বলছে, ওই মেশিন দিয়ে ‘বোন মিনারেল ডেন্সিটি’র বদল ঘটানো যায়, ক্ষতিগ্রস্থ অস্থিবন্ধনীর হাল ফেরানো যায় কিন্তু মেদ ঝরানো? বিশেষ প্রমাণ নেই। কিন্তু ক্ষতিটা জেনে রাখুন। ভাইব্রেটর ব্যবহারে মেরুদণ্ডের সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষত কোমরের। অনেক ক্ষেত্রেই মাথা চাড়া দেয় সায়াটিকার ব্যথা। ভেষজ গুলি গিলে শরীরের বাড়তি ওজন না কমুক, মনের বোঝা অনেকটা হালকা হয় যাক একটা চেষ্টা তো করছি!
এত সব নেতিবাচক তথ্য ছেড়ে এ বার তাহলে উঠতি প্রজন্মকে আশার আলো দেখানো যাক। ‘এক্সারসাইজ সায়েন্স’-এ বিশ্বাস রেখে শুরু করলে কেমন হবে শরীরচর্চার রুটিন? জিমেই যান অথবা বাড়িতে ফ্রি-হ্যান্ড বা ডাম্বেল দিয়ে ব্যায়াম করুন, মনে রাখবেন ওজন নিয়ে ব্যায়ামের কোনও বিকল্প নেই। আপনার চোখে যে ‘টোনড লুক’টা ভাসছে, তা অনেক বেশি করে সম্ভব হবে যদি সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন পর্যায়ক্রমে শরীরের উপরের আর নীচের অংশের ব্যায়াম করেন। মেদও ঝরবে বেশি। কী ভাবে? ওজন নিয়ে ব্যায়াম করলে নতুন মাংসপেশি তৈরি হবে। মাংসপেশি বিপাক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সক্রিয়। শরীরে যত বেশি মাংসপেশি তত বেশি বিপাক প্রক্রিয়ার হার। বিপাকের হার বেশি মানেই বেশি ক্যালোরি খরচ। মোট ছ’টা ব্যায়াম বাছবেন শরীরের উপর বা নীচের অংশের জন্য। ১০-১২টা রিপিটেশন আর প্রতিষ্ঠা ব্যায়াম চার বার করে। ছ’টা ব্যায়াম শেষ করতে হবে ৩০ মিনিটের মধ্যে।
ওজন নিয়ে ব্যায়াম শেষ করে পাঁচ মিনিট বিশ্রাম নিন। এ বার শুরু করুন ১৫-২০ মিনিটের ইন্টারভ্যাল-কার্ডিয়ো। ৩০ মিনিটের লম্বা হাঁটা বা জগিং একদম বন্ধ। ওতে শরীরে কর্টিসল নামের একটা স্ট্রেস হরমোন ক্ষরণ হয়। কমে যায় শরীরের বিপাকের হার। দু’মিনিট জোরে হাঁটুন। এক মিনিট বিশ্রাম নিন। এ ভাবে ৮-১০ বার। অথবা এক থেকে দু’মিনিট দৌড়ন বা জগিং করুন। এক মিনিট বিশ্রাম নিন। এ ভাবে ৫-১০ বার। এই ওয়ার্ক আউট-এর বাড়তি পাওনা হল, ব্যায়াম শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বিপাকের হার বেশি থাকে।
ওজন নিয়ে ব্যায়ামের পর কার্ডিয়ো করলে মাংসপেশিতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। পেশিগুলো সবল হয়। সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন হেসেখেলে এমন কার্ডিয়ো করতে পারেন। এবং তা হবে অবশ্যই ওজন নিয়ে ব্যায়ামের পরপর, যদি একই দিনে ওজন আর কার্ডিয়ো-এক্সারসাইজ করেন।
ফ্যাট কমাতে ওমেগা সমৃদ্ধ খাবার খান। সঙ্গে প্রচুর জল। ব্যায়ামের সঙ্গে খাওয়ার এই বিধি মেনে চললে ধনং দেহি, ভাগ্যং দেহির মতো স্বাস্থ্যং দেহি-ও হবেই হবে। |
|
|
|
|
|