রাত দুপুরে বুকে ব্যথা হওয়ায় রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়ে দেন, মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে রোগীকে। ডেথ সার্টিফিকেটও লিখে
দেন তিনি।
বছর আটত্রিশের রাজেশ সমাদ্দারকে হাবরার হাটথুবার লোকনাথ সরণির বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান আত্মীয়েরা। রাজেশের পরিবারের দাবি, হঠাৎ দেখা যায় তখনও শ্বাস পড়ছে তাঁর। ফের তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। জরুরি বিভাগে তখন একই চিকিৎসক। পরিবারের বক্তব্য, এ বার দু’একটি ওষুধ লিখে দিয়ে ওই চিকিৎসক রোগীকে ‘রেফার’ করেন বারাসত জেলা হাসপাতালে। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান রাজেশ। দেবাশিস দাস নামে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মৃতের আত্মীয়েরা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, সময় মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে, ওষুধ দিলে হয়তো অকালে মরতে হত না রাজেশকে।
দেবাশিসবাবুকে শো-কজ করা হয়েছে জানিয়ে হাবরা হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষ বলেন, “ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, রোগীর বাড়ির লোকজন তাঁকে জোর করে ডেথ সার্টিফিকেট লিখতে বাধ্য করেছেন। তবে বিষয়টি গুরুতর। আমরা যথাযথ গুরুত্ব দিয়েই দেখছি।” |
রাজেশ সমাদ্দার।
ছবি: পার্থসারথি নন্দী |
লিখিত অভিযোগে রাজেশের স্ত্রী কৃষ্ণাদেবী জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে যখন প্রথম বার তাঁর স্বামীকে হাবরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন রাজেশের বুকে স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে দু’চার মিনিট দেখেন দেবাশিসবাবু। জানান, হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে। ডেথ সার্টিফিকেটে লিখে দেন, হৃদরোগ মত্যুর কারণ।
দেবাশিসবাবুকে শুক্রবার একাধিক বার ফোন করা হলে তিনি বলেন, “মিটিংয়ে ব্যস্ত। পরে করুন।” |
|
সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে তাঁর দাবি, “রাত ২টো ১০ নাগাদ রোগীকে আনা হয়। তত ক্ষণে তিনি মারা গিয়েছেন। আমি ময়না-তদন্তের কথা বলি। ওঁরা তা না করিয়ে জোর করে রোগীর দেহ বাড়ি নিয়ে যান। ভোর ৪টে নাগাদ ফের দেহ নিয়ে আসেন। আমাকে সে সময়ে হেনস্থা করা হয়। স্টেথোস্কোপ ভেঙে দেওয়া হয়। মৃতদেহ রেফার করিয়ে নেওয়া হয় বারাসত হাসপাতালে।” দেবাশিসবাবুর আরও দাবি, প্রথম বার তিনি ডেথ সার্টিফিকেট লেখেননি। দ্বিতীয় বার রাজেশের দেহ আনার পরে মৃতের আত্মীয়দের চাপে তাঁদের বলে দেওয়া সময় উল্লেখ করে ডেথ সার্টিফিকেট লিখতে ‘বাধ্য হন’। উত্তর ২৪ পরগনার ডেপুটি সিএমওএইচ (১) তপন টিকাদার বলেন, “বিষয়টি জেলা প্রশাসন দেখছে। যা জানার জেলাশাসকের কাছ থেকে জানতে হবে।” জেলাশাসক সঞ্জয় বনশলের কথায়, “তদন্ত কমিটি হয়েছে। রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরে জমা দেওয়া হবে। পুলিশও তাদের মতো করে তদন্ত চালাবে।”
রাজেশবাবু বছর দেড়েক আগে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পান দত্তপুকুরের একটি স্কুলে। তাঁর চার বছরের একটি মেয়ে আছে। স্ত্রী কৃষ্ণাদেবী বলেন, “মণ্ডপ থেকে ফিরেছিলেন রাত করে। রাত ১টা নাগাদ গোঙানির শব্দ শুনে দেখি ওঁর খুব ঘাম হচ্ছে। বুকে ব্যথা বললেন।” তিনি জানান, হাবরা হাসপাতালের চিকিৎসক রাজেশ মারা গিয়েছেন বলায় ‘দেহ’ নিয়ে সকলে ফিরে আসেন। পরিবার সূত্রের খবর, হঠাৎই রাজেশের ভাইপো রাজদীপ বলে, “কাকুর পা নড়ল মনে হচ্ছে!” দু’এক জন নাকের কাছে হাত রেখে দেখেন, শ্বাস পড়ছে। তখন কেউ পায়ে তেল মালিশ শুরু করেন। কেউ বুকে চাপ দিতে শুরু করেন। দু’এক মিনিটের মধ্যেই দেখা যায়, শ্বাস চলছে অনেকটা স্বাভাবিক ভাবে। তবে রাজেশ চোখ খোলেননি। তাঁকে ফের নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। এর পরেও স্বামীকে বাঁচাতে না পেরে হতাশ কৃষ্ণাদেবী। বললেন, “ওই চিকিৎসকের আইনানুগ শাস্তি দাবি করছি।”
পরে হাবরা থেকে গাড়িতে রাজেশকে নিয়ে যাওয়া হয় বারাসত হাসপাতালে। বাড়ির লোকের দাবি, রাত পৌনে ৪টে নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছেও শেষ রক্ষা হয়নি। বারাসত জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা রাজেশকে মৃত ঘোষণা করেন। জেলা হাসপাতালের সুপার পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত অবশ্য বলেন, “রাজেশবাবুকে এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দেখানো হয়েছিল, এমন কোনও রেকর্ড আমাদের কাছে নেই। তবে অনেক ক্ষেত্রে ময়না-তদন্ত এড়িয়ে যেতেই মৃত্যু নিশ্চিত বুঝে রোগীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও তা ঘটে থাকতে পারে।” |