|
|
|
|
মাথাভাঙায় মিষ্টি ভাসিয়ে বিজয়া |
গৌরব বিশ্বাস • শিকারপুর |
ভাসানের পালা সাঙ্গ হতেই দশমীর রাতটা ফিকে হয়ে গেল। সীমান্তের দুরত্ব পেরিয়ে, সমস্ত ভেদা-ভেদ ভুলে গিয়ে মাথাভাঙার তীরে মিলেমিশে এক হয়ে গেল দুই বাংলা। বিসর্জনের বিকেলে ওপার বাংলার ইকবাল শেখ, আনারুল মণ্ডলদের জন্য শিকারপুরের মাথাভাঙায় এক হাঁড়ি রসগোল্লা ভাসিয়ে দিলেন এপার বাংলার কোনও এক পুজোর কর্তা। আর সেই হাঁড়ি ভাসতে ভাসতে যখন ওপাড়ে গিয়ে ঠেকতেই ভেসে এল আনন্দের হাওয়া। ‘‘পেয়েছি, পেয়েছি। আসছে বছর আবার হবে...’’, ওপারের আনন্দে মাতলো এপার বাংলাও। বৃহস্পতিবার কাঁটাতারের ব্যবধান মুছে গিয়ে মাথাভাঙার তীরই মিলনমেলার চেহারা নিয়েছিল। দুর থেকে দেখলে বোঝার উপায় থাকে না, যে মাথাভাঙার দুই তীরে আসলে রয়েছে আলাদা দুটো দেশ।
সারাটা বছর এই দিনটার অপেক্ষায় দিন গোনেন দুই দেশের মানুষ। দশমীর সকাল থেকেই ভিড় জমতে শুরু করে নদীর দুই পাড়ে। মাথাভাঙার এই পাড়ে বসে মেলা। এক এক করে প্রতিমা নিয়েও হাজির হয়ে যান পুজো উদ্যোক্তারা। ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে দু’পাড়ের মানুষ খুঁজে নেন অচেনা মুখগুলো। হাত নেড়েই চলে কথা বলা। ভিড়-ভাট্টায় সব কথা কানে না পৌঁছলেও খুশিতে চকচক করে ওঠে মুখগুলো। এবার যেমন বেজায় খুশি শিকারপুরের জামাল শেখ। দীর্ঘ প্রায় সাত বছর বাদে দেখা হয়েছে ওপার বাংলায় থাকা এক ভাইয়ের সঙ্গে। জামাল বলেন, ‘‘ওপার বাংলায় আমাদের অনেক আত্মীয় থাকেন। তবে এত দুর থেকে দশমীর দিন সকলে আসতে পারেন না। এবার এসেছিলেন বিএসএফের অনুমতি নিয়ে। সাঁতরে নদী পার হয়ে দেখা করে এসেছি ভাইয়ের সঙ্গে। এক হাঁড়ি জিলিপিও নিয়ে গিয়েছিলাম। বিশ্বাস করুন এ এক অন্যরকম অনুভূতি।’’
তেহট্ট মহকুমার সীমান্তঘেঁষা গ্রামগুলোতে সঞ্জয়, দেবু, গৌতমদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পুজোর আয়োজন করে আরিফ কিংবা নাসিরুদ্দিন শেখরা। সীমান্তের উৎসবে যোগ দেন সব সম্প্রদায়ের মানুষ। জামাল শেখ বলেন, ‘‘উৎসবের আবার আলাদা রঙ হয় নাকি? এখানে ঈদ যেমন সবার উৎসব, তেমনি দুর্গাপুজোতেও আমাদের বাড়িতে প্রতিবছর নাড়ু, মুরকি তৈরী হয়। কেনা হয় নতুন পোশাকও।’’
এ বছর প্রতিমা বিসর্জনের সময়ে বিএসএফের সহযোগিতায় রীতিমত খুশি শিকারপুর সীমান্তের মানুষ। শুভ স্বর্ণকার, দীপঙ্কর চৌধুরীদের কথায়, ‘‘এবার বিএসএফ খুব ভাল ব্যবহার করেছে। এ দিন সীমান্তে খুব বেশি কড়াকড়ি ছিল না। নদীর এপারে এসে ঢাকের তালে আমাদের সঙ্গে নেচে গিয়েছে ওপার বাংলার কয়েক জন ছেলেও। প্রতিমা বিসর্জনের পরে খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ওপারের নতুন বন্ধুরা চলে যাওয়ার সময় বলেছে আসছে বছর আবার দেখা হবে।’’ গ্রামের প্রৌঢ়রা জানান, কয়েক বছর আগেও মাথাভাঙায় নৌকা ভাড়া করে বাইচ প্রতিযোগিতা হত। কিন্তু সীমান্তের নানা নিয়মের কারণে সেটা বন্ধ হয়ে গেলেও উৎসবের মেজাজটা আজও কিন্তু অটুট রয়েছে।
তেহট্টে মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল বলেন,‘‘ দশমীর দিন আবেগ যেন উপচে পড়ে, উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন দুই দেশের সীমান্তলাগোয়া সব সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে আন্তর্জাতিক সীমানার কোনও রকম নিয়ম যাতে লঙ্ঘিত না হয় সেদিকেও নজর রাখেন সীমান্তরক্ষীরা।’’ তবে রাত বাড়তেই ফের মন খারাপ। ও পাড়ের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হতে আবার যে একটা গোটা বছরের অপেক্ষা। |
|
|
|
|
|