|
|
|
|
|
|
|
আপনার সাহায্যে... |
|
|
টিভি দেখিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াবেন না
তিন বছর বয়সের আগে তো নয়-ই।
সুজাতা মুখোপাধ্যায়কে বললেন ডা. অনুপম দাশগুপ্ত। |
|
ছোট বয়সে বেশি টিভি দেখলে নাকি ব্রেনের ক্ষতি হয়?
উ: হয় তো। তিন বছরের আগে টিভি দেখা একদম উচিত নয়।
কিন্তু আমরা তো বাচ্চাকে খাওয়াতে বা শান্ত রাখতে টিভিরই সাহায্য নিই।
উ: নেবেন না। টিভিকে বেবি সিটার বানালে পরে অনেক দুর্ভোগ আছে।
কী বিপদ হতে পারে?
৭ মিনিটের বেশি বাচ্চা মনোযোগ ধরে রাখতে পারবে না।
সে কী?
হ্যাঁ, টিভির ছন্দে ব্রেন চলবে বাচ্চার। টিভিতে সাত মিনিট পর পর বিজ্ঞাপন বিরতি, ব্রেনেরও মনোযোগ ধরে রাখায় বিরতি ৭ মিনিট পর পর।
সে তো পড়াশোনার সময়। খেলাধুলা বা আড্ডা ঠিকই চলে।
না চলে না। ভাল করে খেয়াল করে দেখেননি। ৭-৮ মিনিট পরেই ওর ব্রেন বিরতি চাইবে। ওভাবেই টিউনড হয়ে গেছে যে।
টিভি দেখে খাওয়াতে বারণ করছেন। তা হলে খাওয়াবো কী করে?
আগেকার দিনে মা-ঠাকুমারা কী করতেন? গল্প করে, গান গেয়ে, ফুল-পাখি দেখিয়ে খাওয়াবেন। গান গাইতে না পারলে ভাল গান বাজাবেন। বাচ্চা শুনতে শুনতে খেয়ে নেবে।
|
|
আজকাল তা আর হয় না। বাচ্চারা অনেক চালাক হয়ে গেছে।
বাচ্চারা চালাক হয়েছে, না মায়েদের ধৈর্য নেই?
দুটোই। সময়ও কম।
তাহলে শুনুন, অত এটা সেটা করে ভুলিয়ে খাওয়ানোর ফলেই কিন্তু বাচ্চার খাওয়ায় অনিচ্ছা জন্মায়। পরে এ থেকে ভয়ানক সমস্যা হয়। কাজেই এ সব করবেন না। স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা যতটুকু খায় খাবে। এক বার কম খেলে পরে খিদে পেলে ঠিক সেটা পুষিয়ে নেবে।
আপনি যে সমস্যার কথা বলছেন, তার মানে কতক্ষন টিভি দেখলে এ রকম হতে পারে?
তিন বছরের নীচে মোটেই দেখা উচিত না। কিন্তু তা তো হয় না। এমন অনেক বাড়ি আছে যেখানে সারা দিনই টিভি খোলা। ধরুন ঘণ্টা আটেক যদি দেখে তাহলে ৭ বছর বয়সে গিয়ে এ রকম হওয়ার সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ।
৩ বছর পার করলে সমস্যা নেই?
তাও আছে। যে কোনও বয়সের বাচ্চা এক ঘণ্টা টিভি দেখার পর তার প্রভাব থাকে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। এর মধ্যে ধরে পড়তে বসালেও এদের অনেকেরই ঠিকঠাক মনোযোগ আসবে না।
তার মানে মনোযোগের অভাব থাকলে টিভি দেখা বারণ?
হঠাৎ করে কি আর সেটা পারবেন! টিভি তো একটা নেশা। প্রচণ্ড অস্থির হয়ে উঠবে বাচ্চা।
সে তো টিভি দেখার সময়ও অস্থিরতা করে। কোনও একটা অনুষ্ঠানে মনস্থির করতে পারে না। মিনিটে মিনিটে চ্যানেল বদলায়।
এই অস্থিরতা নিয়ে কিন্তু বাচ্চা জন্মায়নি। নিজে ব্যস্ত বলে টিভিকে যে দিন থেকে বেবি সিটার বানিয়েছেন, সে দিনই বাচ্চার মধ্যে ঢুকে গেছে অস্থিরতার বীজ।
তাই না কি?
নিশ্চয়ই। হাজার একটা চ্যানেল। ঠিকই করে উঠতে পারছে না কোনটা দেখবে। এতে যে শুধু অস্থির হচ্ছে তা নয়, সিদ্ধান্তেও দোদুল্যমানতা আসছে।
বড় বয়সেও এই সমস্যা থাকবে?
ব্রেন তো টিউনড হয়ে যাচ্ছে। আচার-ব্যবহার, কথা, মুখের ভাষা সবই। এই বদল ব্রেনের একেবারে অন্দরমহলে, তাকে কী করে বদলাবেন?
আজকাল যে স্কুলে বন্ধুদের মধ্যে ঝগড়া, মারপিট, তাও তো কিছুটা টিভিরই সৌজন্যে।
সে আর বলতে! টিভিতে যা দেখাচ্ছে তাই ঠিক মনে করছে বাচ্চা। আগেকার দিনের মতো বাবা-মা আর মূল্যবোধের শিক্ষা দিচ্ছে না, দিচ্ছে টিভি। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। একটা গল্প বলি, সেদিন এক ভদ্রমহিলা বললেন, তার এক বছরের বাচ্চা মামা-দাদা ইত্যাদি বলার বদলে দিন রাত টিভিতে শোনা বিভিন্ন আওয়াজ কপি করছে। আমি বললাম, বাঁচতে চাও তো এক্ষুনি টিভি বিদেয় করো।
বিদেয় কি! টিভি তো থাকে বাচ্চার শোওয়ার ঘরে।
তাহলে আরেকটা খবর দিই। উপুড় হয়ে শুয়ে দু-হাতের তালুতে মুখের ভর রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি দেখলে হাঁপানির চান্স খুব বেড়ে যায়।
কিন্তু আমরা তো জানতাম এতে ঘাড়-কোমর ব্যথা হয়।
সে তো হয়ই। ঘর অন্ধকার করে দেখলে চোখের উপর চাপ পড়ে। খেতে খেতে দেখলে ওজন বাড়ে।
কেন? বেশি খাওয়া হয়ে যায়?
অন্যমনস্ক হয়ে গেলে তো বেশি খাওয়া হয়ই। তার উপর টিভিতে যে সব ফাস্ট ফুডের বিজ্ঞাপন থাকে সে সব খাওয়ার ইচ্ছে হয়, খাওয়া হয়। সব মিলে গোলমেলে অবস্থা। তা ছাড়া টিভির আলোও স্বাস্থ্যকর নয়।
আলো আবার কী দোষ করল?
অনেক দোষ। কারও যদি মৃগী থাকে এবং সে ১-২ ঘণ্টা ধরে টানা টিভি দেখে এবং টিভি সেট যদি ১০ ফুটের কম দূরত্বে থাকে তবে এ বিপদ ঘটতে পারে যখন তখন। সৌন্দর্যের বাই থাকলেও কম দেখা ভাল। ওই আলো যে আবার রংও কালো করে দেয়। ছোট থেকে দিন-রাত দেখে গেলে বুড়োও হবেন অকালে। বলিরেখা পড়বে চটপট।
|
যোগাযোগ: ২৪৬৪-২৭২৮ |
|
|
|
|
|