সম্পাদকীয় ১...
প্যালেস্তাইন: রাষ্ট্র?
তেষট্টি বৎসর কম সময় নহে। দীর্ঘ এই সময়-পরিসরে বিশ্ব-রাজনীতির যে সমস্যা সমাধানের কোনও রাস্তা বা চিহ্ন মিলে নাই, বরং প্রত্যহ গভীর হইতে গভীরতর হইয়াছে, তাহা প্যালেস্তাইন-ইজরায়েল সংঘর্ষ। পশ্চিম এশিয়া হইতে শুরু করিয়া সমগ্র এশিয়া, এমনকী ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা পর্যন্ত এই সংকটের আঁচ তীব্র দীপ্যমান। রক্তবীজের ন্যায় এই সংকট বিশ্ব জুড়িয়া আরও অসংখ্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমস্যা তৈরি করিয়া তুলিয়াছে। তেষট্টি বৎসর পরেও প্রত্যহ ইজরায়েল কিংবা প্যালেস্তাইনে নিরীহ নাগরিকরা প্রাণ হারাইতেছেন, এ দিকের বিদ্রোহী জঙ্গিবাহিনী কিংবা ও দিকের রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীর অন্তহীন দাপটের সামনে। কোনও ভাবে এই প্রাণহানির স্রোত থামানোর প্রয়াস রাষ্ট্রপুঞ্জ কিংবা যে কোনও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মঞ্চের একটি প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত, সন্দেহ নাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া কিংবা চিনের মতো শক্তিধর দেশগুলির কূটনৈতিক বৈঠকে অন্যতম প্রধান আলোচ্য হওয়া উচিত, সন্দেহ নাই। কিন্তু তেষট্টি বৎসরের এই ক্রমাগত মূল্য দিবার পরও বিশ্বের প্রধান দেশগুলির সেই বোধ যথেষ্ট পরিমাণে জাগ্রত হইয়াছে কি? উত্তর মিলে না।
প্রশ্নটি নূতন করিয়া উঠিতেছে সাম্প্রতিক একটি প্রয়াসের পরিপ্রেক্ষিতে। প্যালেস্তাইনের প্রতিনিধিগণ আপাতত ‘রাষ্ট্র’ পদমর্যাদা পাইবার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপুঞ্জের দ্বারস্থ হইয়াছেন। গত মাসের শেষে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে তাহা আলোচিত হইয়াছে। দেখা গিয়াছে, যেহেতু ইতিমধ্যেই শতাধিক দেশ প্যালেস্তাইনকে পৃথক রাষ্ট্র হিসাবে মানিয়া লইয়াছে, রাষ্ট্রপুঞ্জে এই প্রস্তাব পাশ হইয়া যাইবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। এমতাবস্থায় বাদ সাধিতেছে আমেরিকা। ইহুদি-প্রভাবিত এই দেশ জানাইয়াছে তাহারা প্রস্তাবের বিরোধী, প্রয়োজনে ‘ভেটো’ ক্ষমতার ব্যবহার করিয়া তাহারা প্রস্তাব আটকাইবে। জানা গিয়াছে যে সংঘর্ষ-অধ্যুষিত এই অঞ্চলে যে পরিমাণ ত্রাণসাহায্য পাঠানো হয়, প্রস্তাব না তুলিয়া লইলে সেই সব সাহায্য তৎক্ষণাৎ বন্ধ হইবে। ইজরায়েলি প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহু স্বয়ং প্রস্তাব আটকাইবার লক্ষ্যে নিউ ইয়র্ক আসিয়া তদ্বির করিয়াছেন যেন এই স্বীকৃতির দ্বারা এত দিনের একটি জটিল সমস্যাকে জটিলতর না করা হয়, যেন এই সুযোগে প্যালেস্তিনীয় জঙ্গিদের হাতে ইজরায়েলি শান্তি ও স্থিতি আরও ধ্বস্ত হইতে না দেওয়া হয়!
যুক্তিটি শুভবোধসম্পন্ন বলা যায় না। বহু রক্তক্ষয় ও ধ্বংসের পর আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের কূটনৈতিক পথে যে মীমাংসার সন্ধান হইতে বসিয়াছিল, তাহা আটকাইয়া পশ্চিমি শক্তিগুলি ঠিক কী আশা করিতেছে, স্পষ্ট নহে। যে প্যালেস্তাইনকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইজরায়েল প্রতিষ্ঠার সময়ই রাষ্ট্রত্ব প্রদান করা সম্ভব ও উচিত ছিল, আজ তেষট্টি বৎসর পরেও সেই রাষ্ট্রত্বের সম্ভাবনা বিনষ্ট করিয়া কোন্ লাভ হইবে? পৃথিবীর অন্যতম ভয়াবহ উৎখাত-কাহিনি প্যালেস্তাইনেই ঘটিয়াছিল। সেখানকার উপযুর্পরি কয়েক প্রজন্মের উপর যে অবিচার সাধিত হয়, এ হেন সমাধান ভিন্ন আর কোনও ভাবেই কি সেই বিক্ষুব্ধ জনগোষ্ঠীর আস্থা অর্জন করিবার আশা রাখা সম্ভব? প্যালেস্তাইন অথরিটির ভারবাহক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ঠিকই বলিয়াছেন, এই মুহূর্তে কূটনৈতিক পথের উপর আস্থা না রাখিতে পারিলে আবারও রক্তবন্যার ধারা অঝোরে খুলিয়া দিবার বন্দোবস্ত সম্পন্ন হইবে। প্রেসিডেন্ট ওবামার সদিচ্ছা লইয়াও সংশয় প্রকাশ করিয়াছেন প্রেসিডেন্ট আব্বাস। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ যখন প্যালেস্তাইনকে স্বীকৃতি দিয়াছে, তখন তাহার রাষ্ট্র-অধিকার প্রাপ্তির পথে ভেটো প্রয়োগ করিলে ওবামার সদিচ্ছা বিষয়ে সেই সংশয় কিন্তু দুনিয়াময় প্রতিষ্ঠিত হইবে। ওবামার সামনে এখন দুইটি পথ: মার্কিন দেশের অভ্যন্তরীণ চাপের সামনে নতজানু হইয়া দুনিয়াময় এই সংশয় ছড়াইয়া দেওয়া, কিংবা কঠিন সিদ্ধান্ত লইয়া দীর্ঘদিনের বিশ্বরাজনীতির এই রক্তাক্ত ক্ষতের উপশমের প্রয়াস করা। কোন পথটি শ্রেয়?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.