খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার আরও কিছুটা বাড়লেও শুক্রবার এক ধাক্কায় প্রায় ৪৪০ পয়েন্ট উঠল ভারতের শেয়ার বাজার। ফলে টানা চার দিন ধরে পতনের গুমোট ভাবে দাঁড়ি টেনে এক পশলা বৃষ্টির মতো এ দিনের উত্থান সেনসেক্সকে ফিরিয়ে আনল ১৬ হাজারের ঘরে। দিনের শেষে তা থামে ১৬,২৩২.৫৪ অঙ্কে। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিফটিও এ দিন প্রায় ১৩৭ বেড়ে থেমেছে ৪,৮৮৮ অঙ্কে। শেয়ার বাজার মহলের মত, ইউরোপ আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারে, এই আশা এ দিন খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার আরও বেড়ে ওঠার দুশ্চিন্তাকেও হারিয়ে দিয়েছে। যার জেরে এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতোই ভারতেও চাঙ্গা হয়েছে বাজার। কারণ বৃহস্পতিবারই ইউরোপের ঋণ জর্জরিত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ফের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ইউরোপীয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক।
উৎসবের মরসুমে আতঙ্কের আবহ তৈরি করে গত শুক্রবার থেকে বুধবার, চার দিনের লেনদেনে ৯০৫ পয়েন্টের উপর খুইয়েছিল সেনসেক্স। যার দায়ের বেশির ভাগটাই অবশ্য সঙ্কটাদীর্ণ ইউরোপ ও মার্কিন মুলুকের উপর চাপিয়েছিলেন বাজার বিশেষজ্ঞেরা। শুক্রবার তাঁদের এই ধারণাই আরও কিছুটা পাকাপোক্ত হয়েছে সূচকের উত্থানে। কারণ বৃহস্পতিবার এক দিকে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড দ্বিতীয় বার আগাম ৭,৫০০ কোটি পাউন্ড ঢেলে বন্ড কেনার কথা জানিয়েছে। অন্য দিকে, ইউরোপীয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক (ইসিবি) ইউরো অঞ্চলের বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে প্রাণ দিতে ফের একপ্রস্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা করেছে। এক বছরের জন্য অর্থ ধার দেবে তারা। এবং বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি তা পাবে দু’দফায়। চলতি অক্টোবরে ও আগামী ডিসেম্বরে। ফলে এ বারের মতো ঋণের ফাঁদ কেটে বেরিয়ে ইউরোপ আর্থিক মন্দা এড়াতে পারবে মনে করে আশায় বুক বাঁধতে শুরু করে গোটা বিশ্ব।
এই জোড়া ঘোষণা বৃহস্পতিবার আমেরিকা ও ইউরোপ-সহ গোটা বিশ্ব বাজারকেই চনমনে রেখেছিল। যার রেশ নিয়ে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ খুলতেই সেনসেক্স বেড়ে যায় ৪৮১ পয়েন্ট। উঠতে থাকে তথ্যপ্রযুক্তি, আর্থিক ও রিয়েলটি সংস্থাগুলির শেয়ার দর।
তবে দুপুরের দিকে প্রায় ৫৫৫ পয়েন্ট উঠে যাওয়া সেনসেক্স তার উত্থানের গতি শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি। যার অন্যতম কারণ খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার এবং শুক্রবার বাজার খোলার পর ইউরোপের কিছু সূচকের নিম্নগতি। গত ২৪ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে মূলবৃদ্ধি আরও কিছুটা বেড়ে ৯.৪১% ছুঁয়েছে। যদিও বাজার বিশেষজ্ঞদের দাবি, দশের আরও কিছুটা কাছে পৌঁছে যাওয়ার খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার শেষ পর্যন্ত বাজারের ঊর্ধ্বগতিকে রুখতে পারেনি। কারণ এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিস্থিতির উপর এ দেশের সব শেয়ার সূচকই চরম নির্ভরশীল হয়ে আছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে আশা জাগাতে পারে এমন সামান্যতম ইঙ্গিতই যেমন লগ্নিকারীদের উৎসাহিত করছে শেয়ার কেনায়, তেমনই আবার অতি ক্ষুদ্র আশঙ্কাও হাতের শেয়ার বিক্রি করে ঝুঁকি কমানোর পথে হাঁটতে বাধ্য করছে।
টানা ছ’দিন পড়ার পর এ দিন ২% বেড়েছে স্টেট ব্যাঙ্কের শেয়ার দরও। কারণ ব্যাঙ্কের মূলধন জোগাতে কেন্দ্র টাকা জোগানো কিংবা রাইট্স ইস্যু ছাড়ার সিদ্ধান্তে সায় দিতে পারে বলে আশা সংশ্লিষ্ট মহলের। প্রসঙ্গত, মূলধন ও অনুৎপাদক সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেই স্টেট ব্যাঙ্কের রেটিং কমিয়েছে আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা মুডিজ। |