বিচ্ছিন্নতা, আবেগ, অস্তিত্ব টুকরো টুকরো হয়ে ফিরে আসে তাঁর কবিতায়। তাঁর শব্দ খোঁজে শূন্যতা। সে শূন্যতায় মিশেল আভিজাত্যের। আবার নিঃসঙ্গ, ‘নীরব-প্রায়’ কবিকে টানে অতি-সাধারণ জীবনও।
এ বার সাহিত্যে নোবেল পেলেন সেই সুইডিশ কবি, টমাস ট্রান্সস্ট্রোয়েমার। যে দৌড়ে ছিলেন বব ডিলানের মতো শিল্পীও, যিনি নিজেকে কবি বলতে পছন্দ করেন।
স্টকহলমে বৃহস্পতিবার সুইডিশ অ্যাকাডেমি সম্মান জানাল নিজের দেশের বর্ষীয়ান কবিকেই, গভীর অথচ স্বচ্ছ প্রতীকের মাধ্যমে যিনি নতুন করে চিনতে সাহায্য করেন বাস্তব দুনিয়াকে। কবিতায় সহজ শব্দ ব্যবহারের জন্য সমালোচকরা ট্রান্সস্ট্রোয়েমারের প্রশংসা করেন। অনুবাদেও যে রেশ থেকে যায় বলে দাবি করেন তাঁরা। ৫০টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে ট্রান্সস্ট্রোয়েমারের কবিতা। তাঁর লেখায় সুইডেনে শীতের দীর্ঘ মরসুম, সেই ঋতুর ছন্দ আর প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের সহজ বর্ণনা মন কেড়েছে সমালোচকদের। |
টমাস ট্রান্সস্ট্রোয়েমার |
১৯৩১ সালে স্টকহলমে জন্ম। মা ছিলেন স্কুলশিক্ষিকা, বাবা সাংবাদিক। সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, মনোবিজ্ঞান নিয়ে তাঁর পড়াশোনা স্টকহলম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৬-য় স্নাতক। ছাত্রজীবনেই প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতার বই, ‘সেভেনটিন ডিকটের’ (১৭টি কবিতা)। তাঁর বয়স তখন ২৩। পরে মনোবিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন কাজে। কিন্তু ১৯৯০ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জেরে তাঁর কথা বলার ক্ষমতা প্রায় নষ্ট হয়ে যায়। তার পর থেকে কলমই হয়ে ওঠে শব্দ। |
|
টমাস ট্রান্সস্ট্রোয়েমারের কবিতা অনুবাদের কাজে বহু দিন নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন স্কটিশ কবি রবিন ফুলটন। কবিকে কী ভাবে দেখেন আর এক কবি? ফুলটনের কথায়, “কোনও কোনও কবি মাতৃভাষাতেই এত দুর্বোধ্য লেখেন যে ভাল অনুবাদ করা যায় না। ট্রান্সস্ট্রোয়েমার সেই গোত্রের কবি নন। তিনি আপাত ভাবে রোমাঞ্চহীন, সাধারণ শব্দ ব্যবহার করেন। কিন্তু সেই শব্দ তৈরি করে অদ্ভুত সব ছবি। যেগুলো পাঠককে অসম্ভব চমকে দেয়। আমার মনে হয়, কবির কাজ সেটাই।”
নোবেল জয়ের খবরে দারুণ আপ্লুত কবি। তাঁর হয়ে স্ত্রী মনিকা সাংবাদিকদের বললেন, “পুরস্কার পাওয়া খুবই আনন্দের ব্যাপার। কিন্তু পুরস্কারটা কবিতার জন্য! সেটাই আরও বেশি আনন্দের।” গোটা সুইডেনও ভাসছে আনন্দে। ৩৭ বছরের অপেক্ষার অবসান। ১৯৭৪ সালে যুগ্ম ভাবে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন সুইডেনের দুই লেখক-কবি। তবে তা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক ছিল। অভিযোগ, ওই দু’জনই নাকি নোবেল-নির্বাচক কমিটিতে ছিলেন। তাই এ বার কোনও বিতর্কের সুযোগ না দিয়ে সুইডিশ অ্যাকাডেমির সেক্রেটারি পিটার ইংলান্ড বলছেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট ভেবেছি। কোনও তাড়াহুড়ো করা হয়নি।” তাঁর মতে, “মৃত্যু, ইতিহাস, স্মৃতি, প্রকৃতি, মানুষ সব গভীর বিষয়েই যাতায়াত ট্রান্সস্ট্রোয়েমারের। এই সব কিছু মিলে তৈরি হয় একটা প্রিজম। যেখানে জীবনের সব অংশ মিশে যায়। তাই ওঁর কবিতা পড়ার পরে নিজেকে আর ক্ষুদ্র মনে হয় না।” প্রথম দিকে যে কবি ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর শব্দ-জগৎ ব্যাপ্ত হয়েছে চিত্রশিল্প-সঙ্গীত-প্রত্নতত্ত্ব-ভ্রমণেও।
নিজের কবিতাকে একটি ‘সংযোগস্থল’ বলে মনে করেন ট্রান্সস্ট্রোয়েমার। তাঁর বিবৃতি, “যেখানে আলো-আঁধার, বহির্বিশ্ব-অন্তরজগৎ মিলতে চায়। সেই মোড়ে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় ইতিহাসের সঙ্গে, গোটা পৃথিবীর সঙ্গে, নিজেদের সঙ্গেও। তৈরি হয় নতুন ভাষা।” কবির সেই নতুন ভাষা সঙ্গীতময়, বহুস্তরীয়। সেই ভাষা দার্শনিক ভাবের সঙ্গে ছুঁয়ে যায় পরাবাস্তবকেও। সেই ভাষা সুইডিশ পাঠকদের জন্য বিশেষ অনুরণন তৈরি করে ঠিকই। কিন্তু তাঁর শব্দচয়ন তৈরি করে অনেক অনুষঙ্গ। বিভিন্ন প্রান্তের পাঠক তাই তাঁর কবিতাকে নিজের মতো করে পাওয়ার সুযোগ পান।
ট্রান্সস্ট্রোয়েমারের আর এক কবি-বন্ধু লাসে সোয়েডারবার্গ বলেন, “কোথায় সুপ্তির শেষ আর কোথায় জেগে ওঠার শুরু সেই ধূসর অংশই খুঁজে বেড়ায় ওঁর কবিতা।”
|
পাক সেনাবাহিনী এবং গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে জঙ্গিদের যোগ নিয়ে এ বার উদ্বেগ প্রকাশ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা স্বয়ং। গত কাল হোয়াইট হাউসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ওবামা বলেন, “পাক সেনার সঙ্গে অবশ্যই এমন কিছু লোকজনের যোগাযোগ আছে যা আমাদের কাছে চিন্তার বিষয়। এটা আমি পাকিস্তানকে আলাদা ভাবে বহু বার বলেছি। সকলের সামনেও বলেছি।” ওবামা জানান, পাকিস্তানকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী করে তুলতে সমস্ত সাহায্য করতে আমেরিকা প্রস্তুত। কিন্তু সেই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, পাক গুপ্তচর সংস্থার ‘ভুল সিদ্ধান্তের জন্য’ মার্কিন স্বার্থ কোনও ভাবে ক্ষুণ্ণ হলে পাক-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। আল কায়দার হাতে যাতে আমেরিকা কোনও ভাবে আক্রান্ত না হয়, সেটা নিশ্চিত করাটাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য বলে জানান ওবামা। পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়েই সেই লক্ষ্যে কাজ করতে আমেরিকা আগ্রহী। কিন্তু পাকিস্তানকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে বলে মন্তব্য করেন ওবামা।
ভারতের প্রতি ‘শত্রুতার’ মনোভাব ছাড়তেও পাকিস্তানকে পরামর্শ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেই সঙ্গে তার সংযোজন, আফগান-ভীতি কাটিয়ে নয়াদিল্লির প্রতি ‘শান্তিপূর্ণ মনোভাব’ নিয়ে চললে লাভ হবে সব পক্ষেরই। ওবামা বলেন, “পাকিস্তান এখনও ভারতকে তাদের শত্রু মনে করে। সেই জন্যই তাদের ধারণা, ভারত-আফগান মৈত্রী তাদের নিরাপত্তার পক্ষে ক্ষতিকর। এই মনোভাব ত্যাগ করা প্রয়োজন।” |