চাহিদা কমেছে। তাই চিনির দাম বাড়ার পরও সেই হারে দাম বাড়ানোর সাহস পাচ্ছেন না মানকরের কদমা শিল্পীরা। পুজোর সময়েও হাসি নেই তাঁদের মুখে। ঐতিহ্য সম্বল করে তাঁরা টিকে রয়েছেন নিজের নিজের পেশায়।
মানকরের কদমার সুনাম শুধু জেলা নয়, ভিন জেলাতেও। এক সময় পুজোপার্বন তো বটেই, বিয়ের তত্ত্বেও কদমার ব্যাপক চাহিদা ছিল। বড় কদমার ভিতরে ভরে কনেকে দামি শাড়ি উপহার দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। একই ভাবে কনের বাড়ি থেকেও কদমার ভিতরে ভরে নতুন বরকে জামা-প্যান্ট পাঠানো হত। কদমার ভিতরে ভরে উপহার পাঠানোর রেওয়াজ ছিল অন্য অনুষ্ঠানেও। শোনা যায়, বর্ধমানের মহারান এক বার কদমার ভিতরে ঘণ্টা ভরে কাউকে উপহার দিতে আমেরিকা নিয়ে গিয়েছিলেন। কদমার ভিতরে সেই ঘণ্টা বাজত। |
সেই দিন আর নেই। উপহার হিসাবে কদমা পাঠানোর রেওয়াজ কমে গিয়েছে। এখন শুধু পুজোর মরসুমের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয় কদমা ব্যবসায়ীদের। তাঁরা জানিয়েছেন, বিশ্বকর্মা পুজো থেকে সরস্বতী পুজো পর্যন্ত কদমার চাহিদা সবথেকে বেশি। ছোট কদমার ওজন দশ গ্রাম। সবচেয়ে বড় কদমার ওজন ছ’কেজি। কদমা শিল্পী হারাধন কর, দীনবন্ধু হালদারেরা জানান, আগে এখানকার কারিগরেরা সারা বছরই কদমা বানাতেন। তা ছাড়া বিশেষ বরাতও জুটত। এখন উৎসব মরসুমে তাঁরা কদমা বানান। বছরের বাকি সময়ে অন্য মিষ্টি বানিয়ে সংসার চলে তাঁদের।
কদমা কারিগরেরা জানিয়েছেন, গত তিন বছরে চিনির দাম দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই হারে কদমার দাম বাড়ানো যায়নি। যখন চিনির দাম ছিল ১৭ টাকা কেজি, ছোট কদমা বিক্রি হত ৩৫ টাকা কেজি দরে। বড় কদমার দাম ছিল কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। চিনির দাম দ্বিগুণ বাড়লেও ছোট কদমা কেজি প্রতি ৫০ টাকা, বড় কদমা ৮০ টাকা রাখতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। তার উপরে কদমা তৈরি করতে এত পরিশ্রম করতে হয় যে অনেকেরই পোষায় না। বড় কদমা বানাতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে। কোনও যন্ত্র নেই। মণ্ড তৈরির পরে তা হাতে ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে কদমা বানাতে হয়। কিন্তু তার তুলনায় দাম তেমন মেলে না। তাই নতুন প্রজন্ম আর সে ভাবে কদমা তৈরিতে আগ্রহী হচ্ছে না।
মানকরের বাজার ঘুরে জানা গিয়েছে, আগে পুজো এগিয়ে এলেই কদমা কারিগরদের মুখে হাসি ফুটত। কিন্তু সেদিন আর নেই। আগে পারিবারিক দুর্গাপুজোর নৈবেদ্য কদমা ছাড়া হতই না। এখন আর সেই নিয়ম কেউ মানেন না। দুর্গাপুজোয় যখন বাকি বাজার জেগে ওঠে, কদমার বাজারে তখনও ঝিম মারা ভাব। “ঐতিহ্যের কারণেই এখনও আমরা এই পেশা ধরে রেখেছি। কালীপুজোয় তবু কিছু বেশি কদমা বিক্রি হয়। তবে তা-ও আর ক’দিন থাকবে কে জানে”আক্ষেপ হারাধনবাবুদের গলায়।
দুর্গাপুজো এক রকম করে কেটেছে। আপাতত দীপাবলিতে ভাল বিক্রির আশায় দিন গুনছে বুদবুদের কদমা। |