ঘনিষ্ঠতার ‘অপরাধে’ সহপাঠিনীর পরিবারের লোকেরা দশম শ্রেণির ছাত্রকে কান ধরে ওঠবোস করানোর পরে রাস্তায় ফেলা থুতু চাটতে বাধ্য করেছিলেন বলে অভিযোগ। তার জেরে দশম শ্রেণির ছাত্রটি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার সকালে ঘটনাটি ঘটে মালদহের সাহাপুরে। পুলিশ জানায়, দশম শ্রেণির ওই ছাত্রের নাম রাজেশ হালদার (১৬)। এলাকার বিমল দাস কলোনির বাসিন্দা ওই কিশোরকে শোওয়ার ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পরিবারের লোকেরা হাসপাতালে নিয়ে যান। পথে তর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার জেরে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা ওই ছাত্রীর মামা এবং তাঁর এক ঘনিষ্ঠকে মারধর করে বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। মৃত্যর পরিবারের পক্ষ থেকে মালদহ থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়। জেলার পুলিশ সুপার জয়ন্ত মন্ডল বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ছাত্রের আত্মহত্যার ঘটনার পিছনে যদি কারও প্ররোচনা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় তবে তাঁকে গ্রেফতার করা হবে।” মৃত ছাত্রটি এলাকার একটি পুজো কমিটি ঐক্য সঙ্ঘের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। এদিন রাজেশের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে ওই ক্লাবের পুজো বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রের বাবা দ্বিজেশ হালদার সামান্য কলের মিস্ত্রি। অন্যদিকে সহপাঠীর বাবা অবস্থাপন্ন চালের ব্যবসায়ী। রাজেশ সাহাপুর হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। অন্যদিকে, রাজেশের সহপাঠিনী মালদহ শহরের নামকরা একটি স্কুলের ছাত্রী। ওই ছাত্রীর পরিবারের লোকেরা রাজেশের সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠতা কখনই ভাল ভাবে মেনে নেয়নি। এর পরে ষষ্ঠীর দিন ছাত্রীর মামা ভুতু প্রামাণিক এবং তাঁর বন্ধু সন্তু গুপ্ত রাজেশকে ডেকে কান ধরে করায় বলে অভিযোগ। রাস্তায় থুতু ফেলে তা চাটতেও বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ। তার পরেই রাজেশ মনমরা হয়ে পড়ে। পুজোর মধ্যে বাড়ি থেকে খুব একটা বার হয়নি। তার পরে এদিন সকালের এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ছাত্রীর বাবা শোভন সরকার অবশ্য এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমি কিছু বলব না।” অন্যদিকে, এলাকার বাসিন্দাদের কাছে নিগৃহীত ভুতু প্রামাণিক পুলিশের কাছে দাবি করেন, তিনি ভাগ্নির সঙ্গে মেলামেশা করতে রাজেশকে নিষেধ করলেও কান ধরে ওঠবোস কিংবা হেনস্থার ঘটনায় জড়িত নন। রাজেশের বৌদি বনশ্রী হালদারের দাবি, “মেলামশা বন্ধ করার জন্য মেয়ের মামা দেওরকে বহুবার হুমকি দিয়েছিল। ষষ্ঠীর দিন মেয়ের মামা দেওরকে রাস্তায় ধরে পথচলতি লোকের সামনে কান ধরে ওঠবোস করায়। রাস্তায় থুতু ফেলে তা দেওরকে দিয়ে চাটিয়েছে। গ্রামের সকলের সামনে অপমান করার পর থেকে আমার দেওর বাড়ি থেকে বের হত না। কারও সঙ্গে কথা বলত না। অপমান সহ্য করতে না পেরে আমার দেওর আত্মহত্যা করেছে।” রাজেশের দাদা তথা ঐক্য সঙ্ঘের সম্পাদক বিশ্বজিতবাবু বলেন, “দড়ি খুলে যখন নামাই তখনও ভাই বেঁচে ছিল। সাহাপুর সেতুর উপর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়ই ভাই মারা যায়।” |