|
|
|
|
|
পুজো তিস্তা-জলঢাকার পাড়ে |
কৃষি বন্দনায় আজ থেকে ভাণ্ডানী
উৎসবে মাতবে ময়নাগুড়ি
নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়নাগুড়ি |
|
অন্য শারদ উৎসব! আজ, দশমী থেকে তিস্তা ও জলঢাকা পাড়ের গ্রাম মাতবে কৃষি বন্দনায়। প্রাচুর্যের দেবী ভাণ্ডানী আরাধনায়।
পাঁজির নির্ঘন্টে উল্লেখ যাই থাক, তিস্তা পাড়ের রাজবংশী সমাজে শারদ উৎসবের সূচনা হবে দশমীতে যাত্রা পুজোর পরে। এ দিন শুরু হবে হেমন্তে কৃষিকাজের প্রস্তুতি। যাত্রার প্রতিমা নেই। এমনকী মন্ত্রও। খেত ভরা সবুজ ফসলের কামনায় লাঙল, মই, কোদাল, কাস্তের মতো কৃষি সরঞ্জামের বন্দনা হবে ওই দিন। সকালে স্নান সেরে গোবর লেপা নিকানো উঠানে তেল সিঁদুরে সমস্ত সরঞ্জাম রাঙিয়ে তুলবেন চাষি বউ। পুজো শেষে বাড়ির কর্তা মাঠে নামবেন। দুপুরে আয়োজন হবে সরস্বতী বন্দনার। দুধকলা, বাতাসা, চিনি ও যাত্রাশি ফুলে নৈবেদ্য সাজিয়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে চাষি বউ বাগ্দেবীর আরাধনা করবেন। ওই পুজোতেও মন্ত্র নেই। মায়েরা দেবীর কাছে কথ্য ভাষায় সন্তানের সুমতি প্রার্থনা করবেন। দশমীর পরে একাদশী তিথিতে রাজবংশী সমাজ মাতবে দেবী ভাণ্ডানী আরাধনা। তিস্তা থেকে তোর্সা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল ভেদে ওই দেবী বিভিন্ন নামে পরিচিত। কোথাও তিনি ভাণ্ডানী, কোথাও ভাণ্ডারনী, আবার কোথাও ভাণ্ডালী। তবে পুজোর রীতি একই। গবেষকদের একাংশ মনে করেন শ্বাপদ সঙ্কুল পরিবেশে ভাণ্ডি অর্থাৎ ভালুকের ভয় থেকে একসময়ে ওই পুজোর প্রচলন হয়। আবার অনেকে মনে করেন ভাণ্ডানী শব্দের উৎপত্তি ‘ভাণ্ডার’ শব্দ থেকে। তিনি আদতে কৃষিজ সম্পদের প্রাচুর্যের দেবী। দ্বিতীয় মতকে গ্রহণযোগ্য দাবি করে ময়নাগুড়ির নরেশ রায়, বাচ্চামোহন রায়ের মতো বিদ্বজনরা জানান, রাজবংশী সমাজে পুজো, উৎসব, সঙ্গীত ও নৃত্য কৃষি কেন্দ্রিক। দেবী ভাণ্ডানীর সৃষ্টিও কৃষি থেকে। একাদশী তিথি থেকে লক্ষ্মী পূর্ণিমা পর্যন্ত ভাণ্ডানী আরাধনার সময়। যাত্রা পুজোয় পুরোহিতের গুরুত্ব না-থাকলেও ভাণ্ডানী পুজো করেন ‘দেউসি’। রাজবংশী সমাজে পুরোহিত ওই নামে পরিচিত। দুধকলা, দই, চিনি, রকমারি ফল ও ফুলে নৈবেদ্য সাজানো হয়। আদিতে দেবী ছিলেন দ্বিভূজা। ব্যাঘ্র বাহিনী। বর্ণ রক্তিম। এক হাতে বরাভয়। অন্য হাত কোলের উপরে। দেবীর আদলে মঙ্গোলীয় জনজাতির ছাপ স্পষ্ট ছিল। অসুর নেই। কবে নাগাদ ওই দেবী আরাধনার প্রচলন হয়েছিল? আপাতত জানার উপায় নেই। ময়নাগুড়ির মাধবডাঙা গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ রায় বলেন, “সম্ভবত কৃষি ভিত্তিক পল্লি সমাজের সূত্রপাতের পরে ওই পুজোর প্রচলন হয়। যে কারণে হেমন্তকালীন কৃষি কাজের সূচনা লগ্নে পুজোর আয়োজন হয়ে থাকে।” সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু পাল্টে গিয়েছে। ভাণ্ডানী যে কৃষির দেবী সেই ভাবনা নতুন প্রজন্মের আয়োজকদের মধ্যে নেই। উল্টে দেবী দুর্গার সঙ্গে ভাণ্ডানীর যোগসূত্র তৈরির জন্য বাহন বাঘ পাল্টে সিংহ হয়েছে। পাল্টেছে দেবীর গায়ের রং। তিনি চতুর্ভূজা হয়েছেন। পাশে স্থান পেয়েছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ। শুধু আদলের পরিবর্তন নয়। চালু হয়েছে গল্প—দেবী দুর্গা বাপের বাড়ি থেকে কৈলাসে ফিরে যাওয়ার পথে চাষির কুটিরে বিশ্রাম নেন। সেখানে ভাণ্ডানী রূপে আবির্ভূত হন। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক দীপক রায় এই প্রসঙ্গে বলেন, “ভাণ্ডানী দেবীর ওই পরিবর্তন খুব বেশি দিনের নয়। দেবী দুর্গার সঙ্গে মিলন ঘটাতে কৌশলে এ গল্প চালু করা হয়েছে।” |
|
|
|
|
|