|
|
|
|
|
বিসর্জনের
বাজনায়
মন ভার
সৌমিত্র কুণ্ডু • শিলিগুড়ি |
|
ঢাকের কাঠিতে বিসর্জনের সুর বাজতেই মন ভারাক্রান্ত শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার সংযুক্তা রায়, দেশবন্ধুপাড়ার দেবস্মিতা পালদের। বাড়িতে দুর্গাপুজো উপলক্ষে আত্মীয় পরিজনদের নিয়ে এই ক’টা দিন মেতে ওঠেন তাঁরা। কচিকাঁচা থেকে পরিবারের বয়স্করা সকলেই। সপ্তমী থেকে কেউ পুজোর প্রসাদ সাজাতে ব্যস্ত, কেউ ব্যস্ত পুরোহিতের হাতের সামনে পুজোর সরঞ্জাম এগিয়ে দিতে। পরিবারের সদস্য-পরিচিতদের মধ্যে ভোগের প্রসাদ বিলি থেকে, সাজগোজ এ সব নিয়েই দিনগুলি আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। কলকাতা বা বাইরে থেকে আত্মীয় পরিজনরাও এ সময় বাড়ির পুজোয় যোগ দিতে চলে আসেন। ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন থেকে মহাষ্ঠমীতে রাত জেগে সন্ধিপুজো সব মিলিয়ে হইহই ব্যাপার। নবমীর বিকেল থেকেই সেই আনন্দের জায়গা দখল করল বিষাদের সুর। নবমী দিনই পুরসভার তরফে মহানন্দার ঘাট সাজিয়ে তোলা হয়েছে বিসর্জনের জন্য। শিলিগুড়ির হাকিমপাড়া, দেশবন্ধুপাড়া-সহ বিভিন্ন এলাকায় বাড়ির পুজো নিয়ে মেতে উঠেছিলেন যাঁরা সেই সংযুক্তা পাল, কাজরি করদের প্রাণ তাই কাঁদতে শুরু করেছে। শিলিগুড়িতে বাড়ির পুজোর মধ্যে রয়েছে হাকিমপাড়ায় তুলসি কর, দুর্গাবাড়ি, মিলন কুঠির, গোপেশচন্দ্র রায়, দেশবন্ধুপাড়ার গোপাল পালচৌধুরী, প্রণব ভট্টাচার্যরা। অন্যান্য আরও কিছু এলাকা মিলিয়ে অন্তত ১৫টি বাড়িতে পুজো হয়ে থাকে এই শহরে। গোপালবাবুর মেয়ে রীতাদেবী কলকাতায় থাকেন। পুজো দিনগুলি অবশ্য শিলিগুড়িতে থাকা চাই-ই। আগামী বছর মেয়ে দেবস্মিতা উচ্চ মাধ্যমিক দেবেন বলে রীতাদেবী এ বার শিলিগুড়ি আসবেন না ঠিক করেছিলেন। মন মানেনি দেবস্মিতার। পুজোয় সামিল হতে মামার বাড়ি না গেলে পড়াশোনাই বন্ধ করে দেবেন বলে বেঁকে বসেন। শেষ পর্যন্ত মেয়েকে নিয়ে ক’টা দিন শিলিগুড়িতেই আনন্দে কাটালেন বাড়ির পুজোয়। রীতাদেবী বলেন, “পুজোর দিনগুলি এত আনন্দের হয়ে ওঠে যে না এলে মন মানে না। এত আনন্দের পর বিসর্জনের দিন চলে এলেই পরিবারের সকলের মন খারাপ হয়ে পড়ে।” দশমী বৃহস্পতিবার হওয়ায় অনেকে আবার ওই দিন বিসর্জন দিতে চাইছেন না। গোপালবাবুদের পুজোর বিসর্জন বৃহস্পতিবারই। হাকিমপাড়ার হরগিরি ভবন তথা দুর্গাবাড়ির পুজোয় বিজর্সন হবে শুক্রবার। নবমীর রাত আসতে তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও চোখ সজল। মহালয়া থেকেই পরিবারের সকলে বাড়ির পুজোকে ঘিরে মেতে ওঠেন। চার ভাই নিরঞ্জন পাল, শ্যামলবাবুরা চার ভাই মিলে পুজোর আয়োজন করেন। শ্যামলবাবু দুই ছেলে এক মেয়ে, নিরঞ্জনবাবু এক ছেলে এক মেয়ে। অন্যান্য ভাইদের ছেলেমেয়েরা সকলেই এই কটা দিন উপভোগ করেন। গরিবদের পোশাক বিলি থেকে প্রসাদ খাওয়ানো তা নিয়ে দুর্গাবাড়ির পুজোয় সামিল হন এলাকার বাসিন্দারাও। শ্যামলবাবু, নিরঞ্জনবাবুদের কথা, “দশমীর পর গোটা বাড়িটা খালি হয়ে যাবে, ভাবতেই চোখে জল আসে।” মিলন কুঠিরের বাসিন্দা শেফালি দেবীর শরীর অসুস্থ থাকায় এ বার ছোট করে পুজোর আয়োজন করেছেন। ৩০ বছরেরও বেশি তাঁদের বাড়িতে পুজো হয়ে আসছে। শেফালি দেবী বলেন, “শরীর খারাপ বলে ছোট করে পুজোর আয়োজন করেছি। তা হলেও বিসর্জনের কথা উঠলেই মনটা বিষাদে ছেয়ে যায়।” বিজর্সনের কথা তুলেই ছলছল করে ওঠে হাকিমপাড়ায় রাসবিহারি সরণির বাসিন্দা শিপ্রা করের। তুলসিবাবুর স্ত্রী শিপ্রাদেবী, মেয়ে কাজরি, আত্মীয়, পরিজন সকলে বাড়ির পুজো নিয়ে মেতে ওঠেন। শিপ্রাদেবী বলেন, “নবমীর থেকেই মনটা খারাপ লাগে।” |
|
|
|
|
|