ওদের দুর্গাপুজো নেই।
তবু ওরা না এলে পুজোর বৃত্ত যেন সম্পূর্ণ হয় না। পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন পুজো মণ্ডপ ঘুরে ঘুরে ওরা দাশাই নাচ দেখাচ্ছেন। ষষ্ঠীর দিন থেকে ওরা নাচছেন।
আদিবাসীরা দাশাই নাচেন। সারা ভাদ্র মাস ধরে ওরা নাচের মহড়া দেন। পুজোয় নাচেন। বছরের বাকি সময়ে তাঁরা এই নাচ পরিবেশন করেন না। সাঁওতালরা নদী, পাহাড়, জঙ্গল প্রভৃতিকে ভক্তি করে। দুর্গাপুজোয় তাঁদের নাচের কারণ নিয়ে নানা লোককথার প্রচলন রয়েছে।
পুরুষেরা মেয়ে সেজে দাশাই নাচ পরিবেশন করেন। পরনে থাকে শাড়ি। ময়ূর পালক অথবা গাছের ডাল পাগড়িতে গোঁজেন। পায়ে ঘুঙুর, হাতে বড় বড় করতাল। এক জনের হাতে লাউয়ের খোলের ভুয়াং নামের বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়।
বোরোর মাহালিডি গ্রামের সতীশ বাস্কে, উকিল সরেন, ফণীভূষণ হাঁসদারা পুজোর আগে নাচের মহড়া করছিলেন। তাঁরা জানান, পুজোর ক’টা দিন বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে নাচতে বেশ ভালো লাগে। কত লোক আমাদের নাচ দেখে আনন্দ পান। দক্ষিণ পুরুলিয়ার কয়েকটি পুজোর উদ্যোক্তারা জানান, দাশাই নাচ না হলে মনে হয় পুজো সর্ম্পূণ হল না। |
মানবাজারে দাশাই নাচ। নিজস্ব চিত্র। |
পুজোর আগে এমনই নাচের ব্যস্ততা দেখা গিয়েছিল হুড়ার ফুফুন্দি গ্রামে। আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামের বাতাসে বাঁশির সুর ভেসে বেড়াচ্ছিল। দাশাই, বাহা, নাগড়ে, পাতা-সহ বিভিন্ন নাচের তালে এ গ্রামের লোকজন পুজোর কয়েক দিন আগে থেকেই মেতে উঠেছিলেন। তাঁদের গ্রামে অবশ্য দুর্গাপুজো হয় না।
নাচের শিল্পীরা এ বার কলকাতার কালিন্দীর একটি পুজো মণ্ডপে আদিবাসী নাচ পরিবেশন করতে গিয়েছেন। সেই দলের গণেশ হাঁসদা, শ্যামাপদ হাঁসদা, ভোঁদড় কিস্কুরা বলেন, “আমাদের নাচ দেখে দর্শকেরা হাততালি দিচ্ছেন। আমাদের বেশ ভাল লাগছে। পুরুলিয়ার গ্রামে-গঞ্জে কত নেচেছি। কিন্তু, কলকাতার লোকজন তো আমাদের নাচ বড় একটা দেখতে পান না। তাঁদের খুশি করতে পেরে তাই আরও বেশি আনন্দ পাচ্ছি।”
কালিন্দীর ওই পুজো কমিটির এক কর্মকর্তা অলোক দত্ত বলেন, “আমাদের পুজোর থিম আদিবাসী সংস্কৃতি। মণ্ডপে সেই ভাবনা ফুটিয়ে এনেছি। সেই সঙ্গে আদিবাসী নৃত্য- পুরো পরিবেশটাকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
শিল্পীরা জানিয়েছেন, দাশাই, বাহা, দং প্রভৃতি নাচ পরিবেশন করা হচ্ছে। শিল্পী তারাপদ হেমব্রম বলেন, “পুজোর সময় বিভিন্ন মণ্ডপের সামনে আমরা নাচি। এটাই আমাদের পরাম্পরা।
এই শিল্পীরা কেউ পেশায় দিন মজুর, কেউ চাষবাস করে সংসার চালান। ঘরেতে দারিদ্রের আঁধার। তবু পুজো এলেই তাঁদের শরীর চনমন করে ওঠে। রক্তে ঢেউ ওঠে। শুরু করে দেন মহড়া। |