ধোনির দলকে হোয়াইটওয়াশ-এর পরপরই পাল্টা ভারত সফরে পৌঁছেই অস্বস্তিতে পড়ল ইংল্যান্ড দল। অ্যালিস্টার কুকের দল পাঁচ ম্যাচের এক দিনের সিরিজ খেলতে হায়দরাবাদে পৌঁছে গেছে প্রায় দু’দিন হয়ে গেল। কিন্তু মঙ্গলবার নিজামের শহরে পা রাখার পর বুধবার সারাদিনেও ইংল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্ট জানতে পারেনি হায়দরাবাদে তাদের দু’টো প্রস্তুতি ম্যাচে প্রতিপক্ষ কারা। শেষ পর্যন্ত ভারতের মাটিতে প্রথম দিনের নেট প্র্যাক্টিস করে ওঠার পর পিটারসেন-ব্রেসনানরা জানতে পারলেন, হায়দরাবাদের একটি দলের বিরুদ্ধে তাঁদের খেলে প্রস্ততি নিতে হবে। ভারতীয় বোর্ড থেকে এই মর্মে জানানো হয়েছে ইংল্যান্ডকে। কিন্তু হায়দরাবাদের সেই দলটি কেমন সে সম্পর্কে কোনও আভাস নেই এখনও কোথাও। এমনকী আসন্ন সিরিজের প্রতিটি বলের বর্ণনা দেবে এমন একটি বিখ্যাত ক্রিকেট ওয়েবসাইটে পর্যন্ত ওয়ার্ম আপ ম্যাচের প্রতিপক্ষ হিসেবে কোনও দলের নাম দেওয়া নেই। বরং বোর্ডের এক কর্তাকে উদ্ধৃত করে সেখানে বলা হয়েছে, “একই সময়ে ভারতের ঘরোয়া চ্যালেঞ্জার ট্রফি চলায় ইংল্যান্ড ওয়ার্ম আপ ম্যাচগুলোতে কোনও শক্তিশালী প্রতিপক্ষ পাচ্ছে না। বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশ বা ভারত ‘এ’ গোছের কোনও দল গড়া এখন সম্ভব নয়, যেহেতু দেশের সব শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটার চ্যালেঞ্জার ট্রফির তিনটে টিমে আছে।”
উপ্পলের স্টেডিয়ামে আগামী ১৪ অক্টোবর প্রথম এক দিনের ম্যাচে নামার আগে কুকেদের সামনের শনি-রবিবার হায়দরাবাদে উপর্যুপরি দু’টো ওয়ার্ম ম্যাচ খেলার কথা। ভারতীয় উইকেট ও পরিবেশের সঙ্গে সড়গড় হওয়ার লক্ষ্যে। স্বভাবতই বিদেশি দল চাইছে এই দু’টো প্রস্তুতি ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ যেন ভাল মানের হয়। যাতে আসল সিরিজ শুরুর আগে তাদের গা-ঘামানো পর্বটা বেশ যুতসই হতে পারে।
কিন্তু ইংল্যান্ড দলের সফরসঙ্গী ব্রিটিশ মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, কুকের দলের আপৎকালীন কোচ রিচার্ড হলসল বলেছেন যে, তাঁদের পঞ্চাশ ওভারের দু’টো ওয়ার্ম আপ ম্যাচের প্রতিপক্ষ সম্পর্কে খেলার তিন দিন আগে পর্যন্তও তাঁরা ধোঁয়াশায়। জানেন না যে, কোন মাপের ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে খেলে ইংরেজ ক্রিকেটাররা প্রস্তত হবেন। ইংল্যান্ড কোচকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে, “আমি বেশ বুঝতে পারছি, ওয়ার্ম আপ ম্যাচের প্রতিপক্ষ আমাদের খুঁজে বার করতে হচ্ছে ভারত সফরে।”
|
ইংল্যান্ড দলের প্রধান কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার কাঁধে অস্ত্রোপচারের পর হায়দরাবাদ পৌঁছবেন আগামী বৃহস্পতিবার। ফ্লাওয়ারকে শেষমেশ দলে পাওয়া গেলেও ভারত সফরে ইংল্যান্ড পাচ্ছে না তাদের ব্যাটিং কোচ গ্রাহাম গুচকে। ডান হাতের কব্জিতে অস্ত্রোপচার করিয়ে তিনি এখন ক্রমে সেরে ওঠার পথে। কোচেদের মেডিক্যাল বুলেটিন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলেও ইংল্যান্ড দল এখনও ধন্দে, ভারত সফরে তাদের প্রস্তুতি ম্যাচের প্রতিপক্ষ কতটা শক্তিশালী, কী রকম মানের।
এ দিকে, ওয়ার্ম আপ ম্যাচ ঘিরে টেনশনের পাশপাশি ইংল্যান্ড শিবিরের আশঙ্কা, ঘরের মাঠে ভাঙাচোরা ভারতীয় দলও ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষ হতে চলেছে আসন্ন সিরিজে। সচিন-সহবাগ-যুবরাজ-রোহিত-জাহির-মুনাফ-ইশান্ত, সাত জন প্রথম একাদশের ক্রিকেটার চোট-আঘাতে এই সিরিজে প্রতিপক্ষ দলে না থাকা সত্ত্বেও ক্যাপ্টেন কুক বলেছেন, “ভারতীয় দল অবশ্যই ভাঙাচোরা, এ নিয়ে সন্দেহ নেই। তা সত্ত্বেও ঘরের মাঠে ভারত সব সময়ই ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষ।” সঙ্গে ইংল্যান্ড অধিনায়ক যোগ করছেন, ‘‘এই সিরিজে ফেভারিটের তকমা নিয়ে আমি তো বিশেষ কিছু দেখছি না। বরং আমার মনে হচ্ছে, সামনের কয়েক সপ্তাহে খুব কঠিন একটা সিরিজ হতে চলেছে। ইংল্যান্ডে এই দু’টো টিমের মধ্যে কী হয়েছিল আর এ বার কী হবে, তার মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। ভারত ঐতিহাসিক ভাবেই নিজেদের দেশের উইকেটে প্রচণ্ড শক্তিশালী।
ভারতের অনভিজ্ঞ বোলিং আক্রমণ তাঁদের কাছে ‘সুখাদ্য’ হবে কি না প্রশ্ন হলে কুক বলেছেন, “আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার বিচারে ওরা নিশ্চয়ই অনভিজ্ঞ। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, ওরা নিজেদের দেশের উইকেটে, চেনা পরিবেশে বোলিং করার সুযোগ পাচ্ছে। যে ব্যাপারটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। নির্ঘাত এই সিরিজটা আমাদের কাছে কঠিন হতে চলেছে।”
হায়দরাবাদে পৌঁছনোর পরের দিন ইংল্যান্ড অধিনায়ক আরও বলেছেন, “ভারতের উইকেট স্লো হবে। স্পিন করবেএই ব্যাপারগুলোর সঙ্গে তাঁদের মানিয়ে নিতে হবে ধরে নিয়ে সে ভাবেই ইংল্যান্ড প্রস্তুতি নিয়েছে।” বছরের এই সময় উপমহাদেশের বেশির ভাগ মাঠে নৈশালোকের ম্যাচে রাতের দিকে শিশির-ফ্যাক্টর নিয়ে কুকের মন্তব্য, “এ সবের চ্যালেঞ্জ সামলাতে আমরা প্রস্তুত। ব্রিজের কাছে পৌঁছলে তবেই না ব্রিজ পেরোবার কথা আসে!’’ ডিআরএস নিয়ম এবং আইসিসি-র নতুন আইন বলবৎ নিয়ে কুকের মন্তব্য, “যে দল পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে আগেভাগে সড়গড় হতে পারবে, তারা এর সুবিধে ভোগ করবে।” |