গঙ্গার জলে প্রতিমা বিসর্জন দিলে কি খুব বেশি দূষণ ছড়ায়?
দুর্গাপুজোর বিসর্জন নিয়ে হাইকোর্টে জমা দেওয়া কলকাতা পুরসভার রিপোর্টে এই প্রশ্নই উঠে এসেছে। তবে সঙ্গে বলা হয়েছে, গঙ্গার সার্বিক পরিচ্ছন্নতার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে গঙ্গায় বিসর্জনের নিষেধ মানা হবে। ওই ব্যবস্থাকে আরও নিখুঁত এবং বিস্তারিতও করা হবে। গঙ্গা পরিচ্ছন্ন রাখার অভিযানের মাধ্যমে মানুষের সচেতনতা বাড়ছে বলেই মনে করছে পুরসভা।
প্রতিমা বিসর্জনের তেমন কোনও প্রভাব যে গঙ্গায় পড়ে না, জানালেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চিফ সায়েন্টিস্ট উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়। উজ্জ্বলবাবু বলেন, “গত কয়েক বছর বিসর্জনের আগে ও পরে গঙ্গা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন নদীর দূষণ মেপেছি। খুব বেশি তারতম্য দেখিনি।”
প্রতিমার গায়ের যে সিসাযুক্ত রং ব্যবহার করা হয়, বিসর্জনের পরে তা জলে মেশে এবং গঙ্গার জলে দূষণ ঘটায়। সে কারণেই প্রতিমার গায়ে সিসাহীন রং ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু পর্ষদের রিপোর্ট জানাচ্ছে, চূঁচুড়া থেকে পশ্চিম পাড়ে শিবপুর ঘাট এবং পূর্ব পাড়ে বাবুঘাট পর্যন্ত গঙ্গার জল পরীক্ষা করেও দুর্গাপুজোর বিসর্জনের পরে সিসার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। উজ্জ্বলবাবুর বক্তব্য, “প্রতিমা বিসর্জনের প্রায় কোনও প্রভাবই পড়ে না গঙ্গার জলে।” অন্যান্য বছরের মতো এই বছরও প্রতিমা বিসর্জনের আগে এবং পরে গঙ্গার জলে দূষণের মাত্রা মাপা হবে। |
বিসর্জনের আগে দূষণ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে বসেছে হোর্ডিং। বুধবার, বাবুঘাটে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক |
তবে যে জলে জোয়ার ভাটা খেলে, সেখানে এ ভাবে পরিমাপ করে বিসর্জনের দূষণ পাওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করেন নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র। কল্যাণবাবু বলেন, “গঙ্গায় উপর থেকে যত জল বয়ে আসে, তার প্রায় দু’শো গুণ বেশি জল জোয়ারের সময়ে ঢোকে। এ নদীতে এমন মিশ্রণ চলতেই থাকে। ফলে যে ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে, সেখানকার জলে দূষণ পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু বিসর্জনের সময়ে জলে যে সিসা আর ক্যাডমিয়ামের মতো বিষ মিশছে, তা উবে যেতে পারে না। কোথাও না কোথাও নিশ্চয়ই থাকবে।” তাঁর আরও বক্তব্য, প্রতিমার গা থেকে সিসা বা ক্যাডমিয়ামের দূষণ জলে মিশে কিছুক্ষণের মধ্যে গঙ্গায় থিতিয়ে যায়। তার হদিস পেতে মাপতে হবে গঙ্গার নীচ থেকে তুলে আনা মাটির দূষণ।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তেরও একই মত। তিনি জানালেন, গত বছর পর্ষদ হাইকোর্টে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল, তাতেও গঙ্গার জলে তেমন দূষণ ছিল না। যে পদ্ধতিতে পর্ষদ দূষণ মাপে, সেটা ঠিক নয় বলেই মনে করছেন সুভাষবাবু। গঙ্গায় সব সময়েই জোয়ার বা ভাটা থাকে। প্রায় কখনওই জল স্থির থাকে না। তাই নদীর বুকের মাটি তুলে এনে তার দূষণ মাপতে হবে।
তা সত্ত্বেও বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিমার কাঠামো তুলে ফেলা এবং বিসর্জনের আগে ফুল, বেলপাতা, মালা বা শোলার যাবতীয় অলঙ্কার ঘাটের পাশে অস্থায়ী ভ্যাটে ফেলার যে উদ্যোগ গত কয়েক বছর ধরে শুরু হয়েছে, সেটা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিসর্জনের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। তিনি বলেন, “বিসর্জনের সময়ে গঙ্গা পরিচ্ছন্ন রাখার এই উদ্যোগের মাধ্যমে পরিবেশ নিয়ে সার্বিক সচেতনতা ছড়াচ্ছে। তার গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী।” ফলে পুরসভা এ বছর গঙ্গার অনেকগুলি ঘাটকে এই ব্যবস্থার আওতায় আনছে। বিসর্জনের পরে প্রতিমার কাঠামো গঙ্গার জল থেকে তুলে ফেলার জন্য ঘাটে শ্রমিকের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। কাঠামো তোলার কাজ হবে তিন শিফ্টে রাতে দু’টি এবং সকালে একটি। |