আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত (১৬-৯) প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এস ইউ সি-র ছাত্র সংগঠন ডি এস ও-র মিছিলে সাহাপুর মথুরানাথ বিদ্যাপীঠের পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের পক্ষে স্কুল শিক্ষাসচিব মহামান্য হাইকোর্টে হলফনামা পেশ করে জানিয়েছেন, স্কুল ফাঁকি দিয়ে রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ প্রভৃতিতে যোগ দেওয়া নিষিদ্ধ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। বিগত কয়েক দিনের টানাপোড়েনের পর অবশেষে রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নিল এবং সিদ্ধান্তটি অবশ্যই বিতর্কিত। প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, সরকার ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাওয়া একেবারে নিষিদ্ধ করেনি, করেছে স্কুল চলাকালীন মিছিল সমাবেশে যাওয়া। চমকটা এখানেই। তবে কি ছুটির দিনে হওয়া বা স্কুল ছুটির পরে হওয়া রাজনৈতিক সভা সমিতিতে ছাত্ররা অংশগ্রহণ করবে? পরিবর্তনের কাণ্ডারিকে যথেষ্ট সম্মান জানিয়েই বলছি, ছুটির দিনে সভা সমাবেশ করার কথা তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। পরোক্ষ ভাবে হলেও, সেই সুরই কি এখানে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না?
১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদনে প্রতিবেদক আরও জানাচ্ছেন, স্কুল শিক্ষা দফতর নিযুক্ত তদন্ত কমিটি স্কুলের দু’জন শিক্ষককে শো-কজ করার কথা বলেছেন। কারণ, তাঁরা নাকি এই মিছিলের কথা জানতেন। একই সঙ্গে প্রতিবেদনে প্রকাশ, কয়েক দিন আগে থেকেই ওখানে মিছিলের জন্য প্রচারপত্র বিলি হয়েছিল। কয়েক জন ছাত্র আবার বিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষককে এ খবর জানিয়েওছিল। অর্থাৎ স্কুল এ ব্যাপারে অবগত ছিল। তা হলে ৮ তারিখে অপহরণের কথা বলে বিদ্যালয়টিতে যে ভাঙচুর চালানো হল তখনও কি সেই শিক্ষকরা কিছু জানাননি? আর এই ভাঙচুর চালানোর কারিগর অভিভাবকদের (?) শাস্তিরই বা কী হবে? শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং দু’জন সহকারী শিক্ষককেই কেন বলির পাঁঠা করা হচ্ছে? |
শিক্ষকদের মিছিলের কথা জানালেও অভিভাবকদের কাছে এই মিছিলে যাওয়া ছাত্রদের কেউই কিছু জানায়নি। এ কথা বিশ্বাস করা অত্যন্ত অবাস্তব শুধু নয়, কষ্টকরও বটে। যেখানে প্রতিবেদক নিজেই জানাচ্ছেন, স্কুলে গেলে মিছিলে যেতে হবে এই ভয়েই নাকি সে দিন অধিকাংশ অভিভাবক সন্তানদের স্কুলমুখো করাননি।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, প্রধানত দৃশ্যমাধ্যম থেকে জানা, ওই দিনের মিছিলের দাবিগুলির মধ্যে একটি অত্যন্ত বিতর্কিত। বিশেষ করে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষে। পাশ-ফেল প্রথা তুলে দেওয়ার সপক্ষে একটি উক্তিকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতি কিছু দিন আগেই তোলপাড় হয়ে উঠেছিল। তাই বিশেষ করেই ব্যাপারটা ভাবায়। বর্তমান সময়ে মোবাইল, ইন্টারনেট, রিয়েলিটি শো-সর্বস্ব এই জমানায় সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির ছাত্রদের শুধুমাত্র খাওয়া আর বেড়ানোর লোভ দেখিয়ে কোথাও নিয়ে চলে যাওয়া যায়, তা-ও একসঙ্গে অনেক জনকে! এমন কথা সহজে হজম করা যায় না।
ছাত্র রাজনীতি চলবে কি না, রাজনীতিতে বিদ্যালয়-ছাত্ররা অংশগ্রহণ করবে কি না, সে বিষয়ে সুস্থ বিতর্ক চলতেই পারে। কিন্তু, এই প্রতিবেদন থেকে পাওয়া বিষয়গুলি ঠান্ডা মাথায় পর পর সাজালে যথেষ্টই ইঙ্গিতবাহী হয়ে ওঠে না কি?
অরূপ কর্মকার। গুরুদাসীপাড়া, পাওয়ার হাউস, বর্ধমান-৪
|
রবিবারের বড়চর্চা (২৫-৯)-তে প্রাতঃস্মরণীয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র সম্পর্কে ভুল তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণের চার মেয়ে। সুজাতা, সুনন্দা, সুলেখা আর সুমিত্রা। সুজাতা অবিবাহিতা। লেখক যে মেয়েটির কথা লিখেছেন, সে হল বীরেন্দ্রকৃষ্ণের বড় ভাইয়ের বড় ছেলের মেয়ে। তার নাম ছিল বুব্বুব্। কোনও বিখ্যাত মানুষের জন্য লিখতে হলে মনে হয় আরও একটু বেশি সতর্ক থাকা উচিত।
শান্তিকুমার মিত্র। কলকাতা-২৫
|
বাচ্চার পুষ্টি! ধান খেতে মাছ কোথায়? |
আনন্দবাজার পত্রিকায় স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘এক তীব্র কিন্তু নীরব দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যে’ (২৯-৯) লেখাটা পড়লাম। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াই। তাই অবাক হইনি লেখাটি পড়ে। এটাও ঠিক যে বাচ্চাদের ওজন নেওয়ায় তেমন কোনও গলদ হয়নি। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে দেখেছি, ওজন নেওয়ার কাঁটা ওপর থেকে ঝোলানো থাকে। মহিলারা দিব্যি ওজন নেন। মাঝে মাঝে বাচ্চারা কান্নাকাটি করে। কোথাও তেমন ভুল করতে দেখিনি এবং খাতায় লেখার সময় যত্ন করে লিখতে দেখেছি। তবে গোলমাল একেবারে হয় না বলা যাবে না। যদিও আমরা শিক্ষিত মানুষেরা দায়িত্ব নিয়ে যে ধরনের গোলমাল করি, তার থেকে অনেক কম।
আমার লেখার বিষয়, রুগ্ণ বা আধপেটা খাওয়া শিশু আছে কি না, তা নিয়ে নয়। ওরা আছে। এখনও অনেক দিন থাকবে। আমার লেখার উদ্দেশ্য তার কারণের খোঁজ করা। অনেক বছর আগে, যখন রোগা রোগা বাচ্চা দেখে থমকে যেতাম, ক্যামেরা বার করতাম, সেই সময় একবার প্রশ্ন করে ফেলেছিলাম, একঝাঁক কাঠিসার বাচ্চাকাচ্চা আর গ্রামের লোকেদের জমায়েতের সামনে কেন এরা এত রোগা? হবে না! খেঁকিয়ে উঠেছিলেন এক প্রৌঢ় গ্রামবাসী। এখন আর ধানখেতে মাছ হয়? বিষ দিয়ে দিয়ে খেতে ছোট ছোট মাছগুলো একেবারে শেষ করে দিয়েছে। ওই ছোট মাছগুলো খেয়েই তো পুষ্টি হত বাচ্চাগুলোর।
বহু বার এই গল্পটা ব্যবহার করেছি আমি পড়াতে গিয়ে। এমন সুস্পষ্ট বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিশক্তি আমি খুব কম পেয়েছি, ‘বড় ছবিটি দেখতে শেখা’ এটা আমি ইকলজি শেখানোর প্রথম পাঠ বলে মনে করি। আর তারই এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত আমার এই প্রৌঢ় কৃষকের গল্প‘ধান খেতগুলোয় আর মাছ নেই’।
ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ। কলকাতা-৪৭ |