সব ভাল যার শেষ ভাল।
রাস্তায় পুলিশি ব্যবস্থা ভাল।
তিন দিন পরে অবশেষে মেট্রো ভাল।
মহাষ্টমীর বিকেলে এক পশলা বৃষ্টির পরে ফের আবহাওয়াও ভাল।
পুজোর মধ্যে মহানগরীতে দু’জায়গায় আগুন লেগেছিল। দু’টোই মারাত্মক হতে পারত। হয়নি।
দমকলের ভাগ্যও তাই ভাল।
সব মিলিয়ে এ বার উৎসব কাপ উতরে গেল ভালয় ভালয়। প্রকৃতির সঙ্গে লড়তে হল না দর্শকদের। সারা রাত বাস চলায় নির্দিষ্ট মণ্ডপে যেতে বা ঘরে ফিরতে কষ্ট হল না। এ বারের পুজোও তাই আমজনতার। আর জনতা ও উদ্যোক্তাদের ভোটে উৎসব কাপ উঠল সেই পুলিশের হাতে, যাদের কুশলতায় মসৃণ হল ভিড়ের সফর।
পুজো বাড়তে বাড়তে কার্যত দাঁড়িয়েছে ন’দিনে। শুরু হয়েছিল তৃতীয়ার রাতেই। আজ, বৃহস্পতিবারেই যে তার শেষ হবে, তেমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। কারণ, শনিবার বিকেল পর্যন্ত অনেক প্রতিমাই মণ্ডপে থাকবে। ওই দিনেই বিসর্জনের সময়সীমা শেষ। এ বার রোজই ভিড় বেড়েছে রাস্তায়। এতটাই যে, পুলিশ-প্রশাসন ধরে নিয়েছে, দশমী, একাদশী এবং দ্বাদশীতেও বেশ কিছু মানুষ রাস্তায় নামবেন। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাও রাখছে তারা।
বস্তুত, সপ্তমী, অষ্টমীকেও এ বার ভিড়ের লড়াইয়ে হারিয়ে দিয়েছে মহানবমীর রাত।
পঞ্চমী-ষষ্ঠীর রাতে কিংবা মহাসপ্তমীর সকালে মহানগরীর রাস্তায় যানবাহন চলছিল কিছুটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল মেট্রোর অসহযোগিতা। নবমীতে অবশ্য পুরো নম্বর পেল কলকাতা পুলিশ এবং মেট্রো। কলকাতা পুলিশের পুরনো এলাকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রায়
দ্বিগুণ নতুন এলাকা। অথচ কর্মী-সংখ্যা বেড়েছে সেই তুলনায় অর্ধেকেরও অনেক কম। তাই বেহালা, যাদবপুর, হরিদেবপুরের যান ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এ বার কলকাতা পুলিশের কাছে ছিল একটা চ্যালেঞ্জ। সংযোজিত এলাকার পুজো সংগঠকেরাই বলছেন, কলকাতা পুলিশ লেটার-সহ পাশ
করে গিয়েছে।
মহানবমীর সন্ধ্যায় পাটুলির মোড়ে গাড়ির বাঁ দিকের জানলা দিয়ে মুখ বার করে পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিল ১২ বছরের সোমদ্যুতি! যত দূর চোখ যাচ্ছিল, শুধু গাড়ি আর গাড়ি। সেগুলি সচল। কিন্তু সোমদ্যুতির এমন অবাক হওয়ার কারণ কী? গত বছর পর্যন্ত পুজোর চার দিন বিকেলের পরে পাটুলি কানেক্টর দিয়ে গাড়ি ঢোকেনি। এ বার নবমীতে ওই রাস্তায় যে-ভাবে গাড়ি চলেছে, তাতে শুধু সোমদ্যুতি নয়, তার বাবা অনিকেত চক্রবর্তীও অবাক।
পাটুলি কানেক্টরের পাশেই কেন্দুয়া শান্তি সঙ্ঘের পুজো। ওই ক্লাবের কর্তা মানব দত্তও পুলিশের ভূমিকায় উচ্ছ্বসিত। তাঁর কথায়, “কোনও মতেই একশোয় নব্বইয়ের কম দিতে পারছি না পুলিশকে। আগে এখানে যানবাহন বন্ধ থাকত দর্শকদের চাপে। এ বার দর্শকের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু গাড়ি চলেছে স্বাভাবিক গতিতেই।”
ডায়মন্ড হারবার রোড, জেমস লং সরণি, হরিদেবপুরের মহাত্মা গাঁধী রোড, রাজা সন্তোষ রায় রোড, রাজা সুবোধ মল্লিক রোড সংযোজিত এলাকার সর্বত্র পুলিশই এ বার পুজোর হিরো। মানুষের কাছে তো বটেই। পুজোর উদ্যোক্তাদের কাছেও। হরিদেবপুরের ৪১ পল্লির দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বললেন, “এ বার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এত সুষ্ঠু যে, আমার আলাদা ভাবে আর কিছু বলারই দরকার নেই। তবে মণ্ডপের ভিতরেও বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে পুলিশ। তাতে দর্শকদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।” ডায়মন্ড হারবার রোডে ম্যান্টনের প্রগতি সঙ্ঘের কর্তা শুভজিৎ লস্করের কথায়, “রাস্তায় যেমন পুলিশকর্মীরা রয়েছেন, তেমনই মণ্ডপের ভিতরের নিরাপত্তা দেখার জন্যও আছেন তাঁরা। এ দৃশ্য আগে দেখিনি।”এ বছরের অভিজ্ঞতা তাঁদের কাছে একটা বড় ‘শিক্ষা’ বলে জানিয়েছেন লালবাজারের কর্তারা। তাঁদের এক জনের মন্তব্য, “আসছে বছর আরও ভাল হবে।”
অষ্টমীর পরে নবমীতেও যেখানে শহর ‘সচল’ রাখার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পুলিশ, সেখানে দেরিতে হলেও গত দু’দিনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন মেট্রো-কর্তৃপক্ষও। যাত্রীদের চাপে আজ, বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীতে ট্রেন চলাচলের সময় বাড়িয়ে দিয়েছে মেট্রো রেল। আজ বেলা ২টো থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ট্রেন চালানো হবে বলে জানান মেট্রোর মুখপাত্র প্রত্যুষ ঘোষ। আগে ঠিক ছিল, বেলা ৩টেয় শুরু করে রাত ৯টার মধ্যেই মেট্রো পরিষেবা শেষ হয়ে যাবে। পরিষেবার সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সঙ্গেই ঠিক হয়েছে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ১০ মিনিট অন্তর ট্রেন চলবে। বাকি সময়ে ১৫ মিনিট ব্যবধানে। মঙ্গলবার, মহাষ্টমীর দিন মেট্রোয় চেপেছেন রেকর্ড সংখ্যক যাত্রী পাঁচ লক্ষ ৩২ হাজার। গত বছর সর্বোচ্চ যাত্রী-সংখ্যা ছিল পাঁচ লক্ষ ৩১ হাজার।
প্রত্যুষবাবু বলেন, আর ট্রেনের ট্রিপ বাড়ানো সম্ভব ছিল না। সম্ভব ছিল না পুজোর দিনগুলিতে আরও আগে থেকে ট্রেন চলাচল শুরু করাও। তা হলে রেক রক্ষণাবেক্ষণের সময় মিলত না বলে জানান তিনি। বুধবারেও বেলা ২টোয় ট্রেন চলাচল শুরুর ঢের আগে থেকেই বিভিন্ন স্টেশনের বাইরে ভিড় জমে যায়। ফলে পরিষেবা শুরু হওয়ার পরে প্রথম তিন-চারটি ট্রেনে অতিরিক্ত ভিড় হয়। আগের দু’দিনের মতোই।
কাজের দিনে সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সাড়ে ১৫ ঘণ্টা ট্রেন চালিয়েও রেকের রক্ষণাবেক্ষণ হয়। পুজোর দিনে বেলা ২টো থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ট্রেন চালিয়ে দিনের বাকি ১০ ঘণ্টায় রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সারা যায় না কেন?
স্পষ্ট জবাব দিতে পারেননি প্রত্যুষবাবু। |