প্রতীক্ষা অনেক দিনের। মাঝে মাঝেই খবর আসত ‘সে’ এসেছে। কিন্তু পরে জানা যেত, সে খবর মিথ্যে।
অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ‘সে’ মানে এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর সব থেকে সস্তা ট্যাবলেট তথা কম্পিউটার ‘আকাশ’-এর উদ্বোধন হল ভারতে। দাম মাত্র ২২০০ টাকা। বা ৩৫ ডলার।
ভারতে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই কম্পিউটার তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বল আজ ট্যাবলেট ‘আকাশ’-এর উদ্বোধন করলেন। এর আগে ২০০৫ আর ২০০৯ সালেও ‘আকাশ’-কে বাজারে ছাড়া হবে বলে খবর রটেছিল। তবে তখন এই ট্যাবলেট গুলি ‘সাক্ষাৎ’ নামে ছাড়া হবে হলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এমনকী ২০১১-র জানুয়ারিতে এক লক্ষ ‘আকাশ’ ট্যাবলেট বাজারে আনার প্রতিশ্রুতিও দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সরকারি ভর্তুকির পরিমাণ নিয়ে বিতকের্র সৃষ্টি হওয়ায় ‘আকাশ’-এর উদ্বোধন পিছিয়ে যায়।
মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের মুখপাত্র মমতা বর্মা জানান, প্রথম দফায় ৫০০টি ‘আকাশ’ ছাত্রদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। প্রতিটির দাম পড়বে ২২০০ টাকা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রদের মধ্যে কিছু ট্যাবলেট নিখরচায় বিলিয়ে দেন কপিল। জানা গিয়েছে এখন প্রতিদিন ৭০০টি করে ‘আকাশ’ তৈরি করা হবে। তবে বাজারে আসার পরে ‘আকাশ’-এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে অনেক সংস্থাই এটি তৈরি করতে উদ্যোগী হবে বলে আশা করছেন মমতাদেবী। তিনি জানান, সরকারের তরফে এখন মূলত উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ‘আকাশ’ বিতরণ করা হবে।
সরকারের তরফে ‘আকাশ’-এর বিপণন কী ভাবে হবে তা নিয়ে অবশ্য ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে ভারতের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এই কম্পিউটারগুলি কিনবে বলে মনে করা হচ্ছে। |
এখন কানাডার একটি সংস্থা এটি তৈরি করেছে। ওই সংস্থার তরফে জানানো হয়, অ্যানড্রয়েড প্রযুক্তিতে তৈরি এই ট্যাবলেটে ৩২ জিবি পর্যন্ত তথ্য রাখা যাবে। এতে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের সুযোগও রয়েছে। সংস্থার সিইও সুনীত সিংহ তুলি জানান, ভারত সরকারকে ১৮ সেন্টিমিটারের টাচস্ক্রিন ট্যাবলেট ‘আকাশ’ ২২০০ টাকায় দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সাধারণের জন্য বাণিজ্যিক ভাবে ‘আকাশ’ তৈরি হলে ওর দাম তিন হাজারের কাছাকাছি রাখা হতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে স্থির করা হয়েছে বলেও জানান
তুলি। সে ক্ষেত্রে ‘আকাশ’-এ আরও কিছু উন্নত প্রযুক্তি যোগ করা হতে পারে। নভেম্বরের মধ্যে ‘আকাশ’ বাজারে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞের মতে এই ট্যাবলেটে মাত্র ২৫৬ মেগাবাইট র্যাম আছে। যা এখনকার অন্য ট্যাবলেটের তুলনায় অনেক কম ক্ষমতার। তাই ভারতের বাজারে অন্য ট্যাবলেটগুলির সঙ্গে প্রতিযোগীতায় এটি টিকতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান তাঁরা। ‘ব্রিক’ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে চিন, ব্রাজিল ও রাশিয়ায় শিক্ষার প্রসারে ইন্টারনেট প্রযুক্তিকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেখানে শিক্ষার হারও ভারতের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু ভারতের বাজারে মোবাইল ফোনের যত চাহিদা, চড়া দামের জন্য কম্পিউটার বা ইন্টারনেট প্রযুক্তি ততটা নয়। বিশেষ করে ভারতের বিভিন্ন গ্রামের অসংখ্য পড়ুয়া এখনও ইন্টারনেট পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। চিনে যেখানে ৯২ শতাংশ জনগণ সাক্ষর, সেখানে ভারতে সাক্ষরতার হার মাত্র ৬১ শতাংশ।
এই পার্থক্য দূর করতে, আর বিশ্বের দরবারে ভারতকে এগিয়ে রাখতে সরকারের তরফে এই প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারের আশা কম দামে উন্নত প্রযুক্তির ‘আকাশ’ প্রধানত গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের প্রতিযোগীতার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে দেবে। তবে বাজারে প্রচলিত অতি উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ‘আকাশ’ কতটা প্রভাব ফেলতে পারে এখন সেটাই দেখার। |