একসময় পুজো শুরু হয়েছিল রাজা, জমিদাদের উদ্যোগে। এখন আর রাজা, জমিদার নেই। নেই রাজত্ব বা জমিদারিও। কিন্তু মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর, রতুয়া বা চাঁচলে রাজা, জমিদারদের আমলে প্রবর্তিত ওই পুজোগুলি আজও বন্ধ হয়নি। কোথাও ওই পুজোগুলির দায়িত্ব নিয়েছেন পরিবারের উত্তর পুরুষরা। আবার কোথাও তা হয়ে গিয়েছে সর্বজনীন। প্রাসাদের মতো মন্ডপ বা ঝলমলে আলোর রোশনাই নেই ওই সমস্ত পুজোয়। কিন্তু কয়েকশো বছরের পুরানো ওই পুজোগুলি আধুনিক পুজোর সঙ্গে আজও দর্শনার্থীদের কাছে সমানভাবে আকর্ষণীয়। পুরানো ঐতিহ্য ও রীতি মেনে পূজিত ওই দুর্গোৎসবে হাজির হয়ে এখনও দর্শনার্থীরা খুঁজে বেড়ান ইতিহাসের সোঁদা গন্ধ। পুরানো পুজোর মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় চাঁচলের পাহাড়পুর চন্ডী মন্ডপের পুজোর কথা। ৩০০ বছরেরও বেশি পুরানো ওই পুজো চাঁচল রাজবাড়ির পুজো হিসেবেই পরিচিত। পুরানো ঐতিহ্য মেনে মঙ্গলবার অষ্টমীর সকালে কুমারী পুজো হয়েছে। এ ছাড়া পাল্টায়নি ৩০০ বছরের পুরনো কোনও রীতিই। মন্ডপে পুরানো রীতি মেনে কৃষ্ণা নবমী তিথি থেকেই পুজো শুরু হয়। পুজোর পাশাপাশি দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যায় চলতে থাকে চন্ডীপাঠের আসর। পুজো হয় স্থায়ী মন্দিরে। বাজেট মাত্র ৭ হাজার টাকা। পুজো পরিচালনা করে ট্রাষ্টি বোর্ড। তবুও অষ্টমীর সকালে কুমারী পুজো তো বটেই, পুজোর কটা দিন কার্যত গোটা চাঁচল ভেঙে পড়ে ওই মন্ডপে। আবার জমিদার ঈশ্বরচন্দ্র প্রবর্তিত চাঁচলের মালতিপুর কালী বাড়ির দুর্গাপুজোয় ভক্তি ও নিষ্ঠার টানে একবারের জন্য হলেও হাজির হন দর্শনার্থীরা। আবার চাঁচল থেকে ৩ কিমি দূরে কলিগ্রামে নবাব আলিবর্দি খাঁ, সিরাজদৌল্লার আমলের ইতিহাসের গন্ধ মাখা কয়েকটি পুজো আজও হাতছানি দেয় দর্শকদের। কাঁসারিপাড়া চন্ডী মণ্ডপের পুজো ১৭৬০ সালে আলিবর্দি খাঁয়ের উদ্যোগে তার ইজারাদার ভোদল রায়চৌধুরি শুরু করেন। এখন তা সর্বজনীন। মহিলারা ওই পুজো করছেন কয়েক বছর ধরে। কলিগ্রামেই জমিদার বদনরাম চৌধুরির প্রতিষ্ঠিত পুজোও দর্শনার্থীদের কাছে সমান আকর্ষণীয়। সিংহ এখানে সাদা রঙের। রীতি মেনে দশমীর সকালে ঘট বিসর্জন করে করা হয় অপরাজিত পুজো। রানি নদীতেই হয় প্রতিমা নিরঞ্জন। খাজনা দিতে না পারায় জমিদার বদনরামকে নবাব সিরাজদৌল্লা বাক্সবন্দি করে ভাগীরথীতে ভাসিয়ে দেন বলে এলাকায় কথিত রয়েছে। এক ফকিরের জন্য প্রাণ ফিরে পাওয়ার পর মুগ্ধ জমিদার তাকে ৫টি পরগনা দিয়ে পুরস্কৃত করেন। তারপরই পুজো শুরু করেন বদনরাম। ৩০০ বছরের পুরনো রতুয়ার কাহালা শিবপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসবও শুরু করেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী সৌরীন্দ্রমোহন মিশ্রের পূর্বপুরুষরা। সেখানে তাদের জমিদারি ছিল। এখন সর্বজনীন ওই পুজোয় নবমীতে কয়েকশো পাঁঠা বলি দেওয়ার রীতি রয়েছে। চাঁচলের রাজা শরচ্চন্দ্র প্রবর্তিত পুজো এখন সর্বজনীন হয়ে গিয়েছে সামসি দুর্গাতলায়। পুজোয় আজও পুরানো রীতি মেনে দেবীর উপরে শিব-গঙ্গা, দুই পাশে দুই পরী। হরিশ্চন্দ্রপুরের ভিঙ্গোল সর্বজনীন, বারদুয়ারি সর্বজনীন দুর্গোৎসবও একসময় শুরু হয়েছিল স্থানীয় জমিদারদের উদ্যোগে। |