এলাকায় বেশির ভাগই কৃষিজীবী ও দিনমজুর মানুষের বসবাস। জাতপাতের উর্দ্ধে থেকে সবাই কাধে কাধ মিলিয়ে এবারে দুর্গোৎসবে মেতে উঠেছেন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ফাঁসিদেওয়ার চটহাটের সীমান্তবাসীরা। যে দুর্গোপুজোর উৎসব ‘সীমান্তের উৎসব’ বলে এলাকায় সুপরিচিতি। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে সীমান্তের চটহাট এলাকায় হিন্দু-মুসলিমরা মিলে সীমান্তের ওই উৎসবের আয়োজন করে থাকেন। চটহাটের এই দুর্গোৎসবের কমিটির সম্পাদক হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা তথা কংগ্রেস নেতা ফাঁসিদেওয়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হাফিজুল রহমান। যিনি সংলু নামে এলাকায় সুপরিচিত। সভাপতি হয়েছেন সুনীল বণিক। কমিটির বিভিন্ন পদে রয়েছেন রহিমুদ্দিন মহম্মদ, হাফিজুল ইসলাম, গণেশ দাস, রাজকুমার সাহা ও অর্জুন বর্মনরা। সীমান্তের এই পুজোতে নেই কোনও জৌলুস। সাধামোটাভাবে পুজো হলেও রয়েছে সীমান্তের মানুষের আন্তরিকতা। পুজোর চারদিনে সীমান্তের মানুষ এতে আনন্দে মেতে ওঠেন। পুজো কমিটির সম্পাদক সংলুবাবু, সভাপতি সুনীলবাবুরা বলেন, “সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের সীমান্তের মানুষ দূরে কোথাও গিয়ে পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে পারেন না। বাচ্চাকাচ্চারাও আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকেন। সীমান্তের মানুষদের কথা মাথায় রেখে প্রতিবছরে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই দুর্গোৎসবের মধ্য দিয়ে সীমান্তের দুই সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে মিলেমিশে থাকতে পারি। ইদের খুশিতেও আমরা হিন্দু-মুসলিম মিলে সবাই সমানভাবে শরিক হই। এটা আমাদের সীমান্তের এক উল্লেখ নিদর্শন বলেও সব মহলে প্রশংসা রয়েছে।”
|
সকলে মিলে দুর্গোৎসবে মেতে উঠেছেন বিধাননগরের সাপ্টিগুড়ির গ্রামের হামিদ মহম্মদ, ফজির, জিতেন কর্মকার, মানিক সিংহ, মন্টু রায়রা। ৪০ বছর ধরে গ্রামের এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বজায় রেখেছেন তারা। প্রতি বছরে তারা মিলেমিশে পুজোর আয়োজন করে থাকেন। এই আয়োজনে বিভিন্নভাবে সাধ্য মতো সহযোগিতা করে থাকেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। পুজো কমিটির সভাপতি মহম্মদ হামিদ ও সম্পাদক জিতেন কর্মকার জানান, এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন গোটা বিধাননগরে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সাপ্টিবাড়ি গ্রামের মানুষ বেশি সংখ্যকই গরিব শ্রেণির। চা বাগান, আনারাস বাগানে শ্রমিকের কাজ করে দিন গুজরান করেন। কাজ না করলেও অনেকের উনুনে হাড়ি উঠে না। প্রত্যন্ত ওই সব গ্রামের মানুষের পক্ষে শহরে গিয়ে পুজোর আনন্দ উপভোগ করার ভাগ্যে জোটে না। সৌভাগ্য হয় না। পুজোর আনন্দ থেকে সবাই বঞ্চিত হন। সেটা মাথায় রেখে জাতপাত ভুলে সকলেই মিলে পুজোর আয়োজন। সাপ্টিগুড়ি গ্রাম ছাড়াও আশেপাশের অন্য গ্রামের বহু মানুষের ভিড় উপচে পড়ে এই পুজো মণ্ডপে। ৪০ বছর ধরে এই পুজো হয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন তারা। বস্ত্র বিলি। পুজোর খরচ বাঁচিয়ে রাজগঞ্জের সাহাপাড়া সর্বজনীন পুজোর কমিটির তরফে এলাকার দুস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করা হল।
|
মঙ্গলবার সকালে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া সুকান্তনগর এলাকায় তিস্তা নদীর পাড়ে এক নাবালিকার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মৃতার নাম কান্দুরি রায় (১৫)। গত ২ অক্টোবর থেকে কান্দুরি নিখোঁজ ছিল বলে পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে। সেদিন কাজের থেকে কান্দুরি বাড়ি ফেরেনি বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা বিজয় রায়ের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে মৃতার পরিবার। অভিযোগ বিয়ের লোভ দেখিয়ে কান্দুরিকে নিয়ে পালিয়ে যায় স্থানীয় বাসিন্দা বিজয় সেন। পরে তাকে খুন করে তিস্তা পাড়ে ফেলে রাখা হয়েছে বলে অভিয়োগ পরিবারের সদস্যরা। এদিন অভিযুক্ত বিজয় সেনও বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
|
মহকুমা প্রশাসন এবং আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের উদ্যোগে অনাথ শিশুদের অষ্টমীতে পুজো দেখানো হল। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি শিশু কল্যাণ সদনের ফালাকাটা শাখার ৩০ শিশুকে নিয়ে একটি মণ্ডপে অঞ্জলিও দেন মহকুমাশাসক অমলকান্তি রায় ও ফালাকাটা বিধায়ক অনিল অধিকারী। অভিভাবক মঞ্চের পক্ষে ল্যারি বসু জানান, ২০০৫ সাল থেকে তাঁরা জলপাইগুড়ি শিশু কল্যাণ সদনের ফালাকাটা শাখার অনাথ শিশুদের নিয়ে আলিপুরদুয়ার শহরের বিভিন্ন পুজো মন্ডপ ঘোরান। মারোয়াড়ি যুব মঞ্চের উদ্যোগে নতুন জামতুলে দেন মহকুমাশাসক অমলকান্তি রায়।
|
শহরের মতো গ্রামাঞ্চলের পুজো মণ্ডপগুলিতেও দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়ছে। ফাঁসিদেওয়া থেকে শুরু করে বিধাননগর, ঘোষপুকুর, হাসখোয়া, চটহাট, লিউসিপাখুরি, রাঙাপানি সর্বত্রই দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। একই চিত্র রাজগঞ্জ থেকে শুরু করে ফাটাপুকুর, তালমা, সারিয়াম, বেলাকোবা, বটতলা, আমবাড়ি, ফুলবাড়ির পুজো মণ্ডপগুলিতেও। ফাঁসিদেওয়ার বিভিন্ন চা বাগান এলাকা থেকে আদিবাসীদেরও ভিড় ছিল উল্লেখযোগ্য। ভিড় সামলাতে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা ছিল। ষষ্ঠী থেকে অষ্টমীর রাত পর্যন্ত সব এলাকাতেই সুষ্ঠুভাবে পুজোর উৎসব কেটেছে। |