|
|
|
|
গরিবের পাশে অনাথদের দল |
সৌমিত্র কুণ্ডু • শিলিগুড়ি |
ওদের নিজেদেরই চোখ জলে ভেজা। বুকের মাঝে শূন্যতা। বাড়ি কোথায় জানে না। মা, বাবা আত্মীয় পরিজনের প্রশ্ন উঠলে ভেবে পায় না কী জবাব দেবে। অনাথ আশ্রমের ঠিকানাটাই ওদের সম্বল। এখানে যখন এসেছিল কারও গায়ে ছিল ছেঁড়া জামা, কেউ আবার আদুল গাঁয়ে। অথচ অন্যের দুঃখ দেখলে ওদেরও প্রাণ কাঁদে। অসহায় ভিখিরিকে দেখলে আশ্রমে ডেকে এনে খাওয়ায়। বয়স্ক, জরাজীর্ণ শরীরের এক রিকশাচালককে রাস্তায় বসে থাকতে দেখে ক’দিন আগেই আশ্রমে ডেকে নিয়ে যায় অর্চিতা, শিবানীরা। তাঁকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে। রাস্তায় ভিখিরি মায়ের কোলে শিশুকে কাঁদতে দেখে এক ছুটে দোকান থেকে চকলেট কিনে এনে হাতে দেয় ওরাই। ওদের প্রাণে ভালবাসার এই স্পর্শ দেখে কখনও বাদ সাধেনি অনাথ আশ্রম কর্তৃপক্ষও। আর মঙ্গলবার মহাঅষ্টমীর দিন ওই অনাথ ছেলেমেয়েদের আর্জি মেনেই শিলিগুড়ির চয়নপাড়ার উত্তরবঙ্গ অনাথ আশ্রমের তরফে এলাকার গরিব পরিবারের শিশু, কিশোরদের বিলি করা হল নতুন পোশাক। অর্চিতা, বেবি, শ্রাবণীর মতো কচিকাঁচারাই গরিব পরিবারের ওই শিশু-কিশোরদের হাতে নতুন পোশাক তুলে দিল আশ্রমের হয়ে। পরিচারিকার কাজ করেন, রিকশাওয়ালা, গরিব পরিবারের বধূ এমন অনেকের হাতেও পুজোর নতুন পোশাক, শাড়ি তুলে দেন অর্চিতা, শিবানী, শাঁওলিদের মতো আবাসিকরা। সব মিলিয়ে ৩১ জন। সঙ্গে ছিলেন কর্মকর্তারাও। অনাথ আশ্রমের আবাসিকরা পোশাক বিলি করেছে জেনে আপ্লুত উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “খুবই ভাল ব্যাপার। ওদের সঙ্গে দেখা করব।” উত্তরবঙ্গ অনাথ আশ্রমের সম্পাদক উমা মল্লিক জানান, অনাথ আশ্রমের আবাসিক এই ছেলেমেয়েরা নিজেরাই জীবনের সঙ্গে লড়ছে। তা হলেও অন্যের দুঃখে ওদের মন কাঁদে। উমাদেবী বলেন, “আমাকে ওরা মা বলে ডাকে। কাউকে অসহায় অবস্থা দেখলে অমনি আমার কাছে এসে সাহায্য করার অনুরোধ করে---মা ওকে একটা জামা দাও। ওকে একটু খাবার দেবে? এটা মাঝে মধ্যেই ঘটে। আশ্রমের জন্য সহৃদয় ব্যক্তি, শুভানুধ্যায়ীরা সাহায্য করেন। অনেকে খাবার দেন। অনেকে পোশাক দেন। তার সবটা লাগে না। জমে থাকে। তা থেকেই ওদের আর্জি মেনে অনেককে সাহায্য করা হয়। পুজোয় এলাকার গরিব পরিবারের অনেক শিশুর নতুন জামা প্যান্ট হয়নি দেখে ওরা আশ্রম থেকে দিতে বলে। সেই মতো ব্যবস্থা করা হয়েছে।” উমাদেবীর স্বামী সমরবাবু-সহ আশ্রমের অন্যান্য শুভানুধ্যায়ীদেরও এ দিন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। অনাথ আশ্রমের আবাসিকদের হাত থেকে নতুন পোশাক পেয়ে খুশি ১২ বছরের গীতা দে, ৮ বছরের রিনা দে’র মতো দুই বোন। বাবা ছাপাখানার কর্মী। তাদের পুজোর পোশাক ছিল না। পোশাক পেয়ে উচ্ছ্বসিত কপিল দেব সাউ, সঞ্জীব দাসদের মতো সাফাই কর্মীরা। অর্চিতার বয়স ৬ বছর। যখন দেড় বছরের শিশু সে সময় শিলিগুড়ি থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আশ্রমের হাতে তুলে দিয়েছিল। ৫ বছরের শ্রাবণী, ৬ বছরের শাঁওলি আড়াই বছর আগে পাগলিনী মায়ের সঙ্গে পথে ঘুরে বেড়াত। অসুস্থ অবস্থায় তাদের নিয়ে অনাথ আশ্রমের দ্বারে ঠাঁই নিয়েছিলেন ওই মহিলা। সেই থেকে মেয়েরা এখানে। পরে মা মেয়েদের এখানে রেখে চলে যান। এ বছর আশ্রম থেকে ঠিক হয় গরিবদের পোশাক বিলি করতে কুপন দেওয়া হবে। কচিকাঁচারা গিয়ে কুপন বিলি করেছে। উমাদেবী বলেন, “ওদের কথা শুনে পরে আমরা নিজেরাও যাচাই করে কুপন বিলি করেছি। ৩০টা কুপন বিলি করা হয়েছিল। পরে দেখা গেল ৫০ জনেরও বেশি এসেছে। তাই কিছু জামা আবার কিনে আনতে হয়েছে। ওরা বড় হয়ে মানুষের দুঃখ ঘোচাতে চেষ্টা করলে কাজের কাজ হবে।” |
|
|
|
|
|