উদয়াস্ত ছোটাছুটি, ক্ষোভ জমছে ঘরে
র পাঁচটা সংসারে যেমন হয়, তেমনই ঘটছে নেতা-মন্ত্রীদের সংসারেও! অন্তত পুজোর কটা দিনের ছবি তাই-ই বলছে। কারও স্ত্রী-পুত্র-কন্যার সঙ্গে চলছে মান-অভিমানের পালা। কারও স্ত্রীর সঙ্গে কথাই প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কয়েকজন নেতাকে তো তাঁদের পরিবারের লোকজন পারিবারিক হিসেহবের মধ্যে ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন। যেমন উত্তরবঙ্গ উন্নন মন্ত্রী গৌতম দেবের কথা ধরা যাক। পঞ্চমীর সকাল থেকে গৌতমবাবু ছুটে বেড়াচ্ছেন শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায়। মণ্ডপ উদ্বোধন, পর্যটনের ‘হেল্প ডেস্ক’-এর দেখভাল, দলীয় ক্যাম্পের খোঁজখবর, বস্ত্র বিতরণ করেই কাটছে মন্ত্রী। স্ত্রী শুক্লাদেবী দীর্ঘদিন ধরেই স্বামীকে ব্যস্ততায় অভ্যস্ত। কিন্তু ছেলে শাশ্বত বায়না ধরেছে পুজো দেখানোর!। কলকাতায় পড়লেও পুজোর ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন গৌতমবাবুর মেয়ে শ্রেয়াও। অন্তত একদিন পুজো দেখাতে হবেই বলে ভাই-বোন মিলে বাবাকে জানিয়ে দিয়েছে। গৌতমবাবু বলেন, “আমার বিধানসভা এলাকার সব কটি মণ্ডপে যাব। বাড়ির লোকজনকে সময় দিতে পারছি না। মেয়ে এসেছে কলকাতা থেকে। গভীর রাতে ওঁদের সবাইকে নিয়ে ঠাকুর দেখব ভাবছি। দেখি কী হয়। রাত ২ টোর আগে বার হতে পারব বলে মনে হয় না!” টানা ২০ বছর রাজ্যের পুরমন্ত্রী ছিলেন সিপিম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। পালাবদলে ক্ষমতা বদল হলেও সময় হাতে বাড়েনি অশোকবাবুর। বরং পুজোয় বেড়েছে ব্যস্ততা। বস্তিতে ঘুরে, দলীয় কর্মীদের খোঁজখবর নিয়ে হিলকার্ট রোডে দলীয় স্টলে বসেই পুজোয় কাটিয়ে দেন প্রাক্তন মন্ত্রী। কোনও দিনই স্ত্রী রত্নাদেবীকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে যাওয়া হয়নি প্রাক্তন মন্ত্রীর। অশোকবাবু বলেন, “পুজোয় নানা এলাকায় লোকজন, দলীয় কর্মীদের সঙ্গে দেখা করি। পাড়ার মণ্ডপে যাই। কিন্তু স্ত্রীকে নিয়ে বা আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে পুজো দেখা হয় না। ওঁরা আলাদাই যায়। এই ব্যাপারে ওঁরা নিজেদের ব্যবস্থা করে নিয়েছে।”
শিলিগুড়ির বর্তমান বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যের মেয়ে সূর্যতপা দিল্লিতে রয়েছেন। পুজোয় বাড়িতে আসতে পারেনি বলে মনটা খারাপ শিলিগুড়ির বিধায়ক এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান, চিকিৎসক রুদ্রনাথবাবু ও তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতাদেবীর। নানা ব্যস্ততায় কোনওদিনই একসঙ্গে সবাই মিলে সেভাবে পুজো দেখা হয়নি। কুষ্ঠরোগী-সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে কাজকর্ম করতেই সময় কেটে যায় রুদ্রবাবুর। তাঁর কথায়, “পাড়ার ক্লাবে অঞ্জলি দিয়েছি। সন্ধ্যায় ভাবছি কয়েকটা পরিচিত জায়গায় যাব। আবার ভূমিকম্পে আহতদের প্রতিদিন দেখতে যাচ্ছি। বাড়ির সঙ্গে পুজো কোনও দিনই দেখা হয় না। মেয়ে এলে হয়তো যেতাম।” মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক তথা দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকারের স্ত্রী দীপালিদেবী ইদানীং কথাবার্তা কম বলছেন। মেয়ে রুচিরার অভিমান হয়েছে বাবা শঙ্করবাবুর উপরে। গত তিনদিন ধরে গভীর রাত অবধি নির্বাচনী এলাকায় থেকেছেন। বাড়ির জন্য সময় নেই। শঙ্করবাবু বলেন, “স্ত্রী চুপচাপ। কিন্তু মেয়েকে সময় না দেওয়ায় অভিমান হয়েছে। দুপুরে একসঙ্গে পাড়ায় অঞ্জলি দিয়েছি। একদিন সবাইকে নিয়ে বার হতেই হবে। দেখি সময় কখন বার করতে পারি।” শহরের মহনাগরিক। দায়িত্ব অনেক। বাসিন্দাদের পরিষেবা দিক দেখা ছাড়াও বিভিন্ন ক্লাবের অনুরোধে মণ্ডপে মণ্ডপে যাওয়া। আবার দশমীর বিসর্জন ঘাটের কাজের তদারকি। সময় নেই। এর ফাঁকেই ৮১ বছরের মা মায়া দেবীর আবদার মেনে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে অঞ্জলি দিয়ে কয়েকটি পুজো দেখিয়েছেন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। তিনি বলেন, “সময় একেবারই পাই না। মাকে নিয়ে কটা পুজো দেখালাম। কাকা-কাকিমার বাড়িতে গিয়েছি মাত্র। গোটা শহরের খেয়াল রাখতে হচ্ছে।” পুজো দেখা নিয়ে বাড়িতে সামান্য ঝগড়া হয়েছে ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা’র। মেয়ে রিয়া এবং ছেলে শাশ্বত বাবাকে পুজো দেখানো নিয়ে রীতিমত ‘হুমকি’ দিয়েছে। স্ত্রী সীমাদেবীও মৃদু ঝগড়াও করেছেন। বৃদ্ধবৃদ্ধাদের পুজো দেখানো, অসুস্থ দলীয় কর্মীর বাড়িতে গিয়ে পুজোর উপহার দেওয়া, মণ্ডপ উদ্বোধন ছাড়া পুরসভার কাজের দেখভাল করে ফুরসৎ নেই রঞ্জনবাবুর। শঙ্কিত রঞ্জনবাবুর কথায়, “স্ত্রী, ছেলেমেয়ে এ বার পুজো না দেখালে কী করবে কে জানে! গভীর রাতে একদিন বার হতেই হবে মনে হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.