দুর্গার বাহন হয়ে ফিরবে ছেলে,
আশায় বাঁচেন বৃদ্ধা মালতীবালা

দী যেমন নিয়েও যায়, ফেরতও দেয়। সেই বিশ্বাস নিয়েই বেঁচে আছেন মালতীবালা।
চুল সাদা হয়ে গিয়েছে, মুখের বলিরেখায় কালচে ছোপ। ধনুকের মতো বেঁকে যাওয়া শরীর। হাতে লাঠি। পুজো যায় পুজো আসে। হারানো সন্তান ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেই দিন কাটে তাঁর। বলেন, “আমার সন্তান আসছে দুর্গার বাহন হয়ে। আমার স্বপ্ন সত্যি হবে।”
অন্তত দু’যুগ আগের ঘটনা। পুজো আসতে সে বার তখনও সপ্তাহখানেক দেরি। শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে ভক্তিনগরের দুই নদীর চড়ার জনবসতি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। হড়পা বান নয়। মহিষাসুরমর্দিনীর স্তোত্র শুনতে শুনতেই পাহাড়ের বাঁধ ভাঙা জলের তোড়ে ভেসে গেল জীবন। জোড়াপানি আর ফুলেশ্বরী নদী মহানন্দায় মেশার আগে ভয়ঙ্কর রূপ নিল। ভাসিয়ে নিয়ে গেল কয়েক মাইলের ছড়ানোছিটোনো জনবসতি। পর দিন সকালে পাহাড় থেকে ভেসে আসা বড় বড় কাঠের গুঁড়ি, পাথরের চাঁইয়ের নীচে তখনও উঁকিঝুকি মারছিল সংসারের টুকিটাকি। ভাতের কড়াই, ছেঁড়া পুরনো জুতো। এক জনের ঘরে মুলি বাঁশের আগায় বাঁধা রেডিওটা তখনও চলছিল। ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ থেমে গিয়ে ‘গোঁ গোঁ’ আওয়াজে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছিল সে।
জোড়াপানি নদীর সেই ঢেউয়ে ভেসে গিয়েছিল মালতীবালার সংসারও। স্বামী রিকশা চালাতেন। রিক্সা চালিয়ে সেদিন তিনি গিয়েছিলেন রাজগঞ্জ ব্লকে। বড় খদ্দের ফিরতি পথে বকশিস দিতে ভোলেননি। টাকার সঙ্গে শাড়িও। অল্প নেশা করে ভোর রাতে ফিরছিলেন ঘরে। মালতীবালার হাতে শাড়িটা আর তুলে দেওয়া হয়নি। ঘরের চৌকাঠ থেকেই বিশাল ঢেউয়ের ঝটকায় মিলিয়ে যান জলের গভীরে। আট মাসের সন্তান ঘুমে জড়িয়ে ছিল মায়ের কোলে। ভয় পেয়ে মালতীবালা মুলি বাঁশের চালায় উঠে বসলেও হাত থেকে খসে গেল সেই সন্তান। মালতীবালা বেঁচেই আছেন। পুজোর প্রতি দিন তিনি বালির চড়ায় গণ্ডি আঁকেন। সাত হাত কাপড়ে মোড়া ত্রিশূলের মাথায় আকন্দ ফুল গেঁথে দেন। পার্বতী নাকি ত্রিশূলের লোভে ফের আসবেন হারানো সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে। ওই ত্রিশূলই মালতীবালার ভরসা। অশক্ত অথচ প্রত্যয়ী কণ্ঠে বলেন, “সন্তান বেঁচে আছে। নদী যেমন নিয়ে যায়, তেমনই আবার ফিরিয়েও দেয়।”
বাস্তু বলতে ছোট্ট কুঁড়েঘর। প্রতিবেশীদের কেউ কেউ দিয়ে যান রুটি, ভাত, সবজি। কখনও তা-ও জোটে না। পুজোয় পাশের মন্দির থেকে আসে শালপাতার ভোগ। নদীর দাপটে ভেঙে পড়েছিল দুর্গা মন্দিরের একটা বড় অংশ। বাকিটুকুতে এখনও পুজো-আর্চা চলে। বৃদ্ধ পুরোহিত ঠিক সময়েই পৌঁছে দেন নিত্যকার ভোগ। মালতীবালার ওই দুঃসময়ে তাঁকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন প্রাক্তন স্কুলশিক্ষক গণেন্দ্রনাথ রায়। আজও পুজোর দিনে গেট বাজার থেকে গরম জিলিপি, পান্তুয়া আর ছোট্ট টিনের কৌটোয় বাড়ির তৈরি নাড়ু পৌঁছে দিয়ে আসেন তাঁকে। মালতীবালার চেয়েও বয়সে প্রবীণ ওই স্কুলশিক্ষকের টপটপ করে জল পড়ে দু’চোখ বেয়ে। বলেন, “এত শোক পেয়েও মালতী বেঁচে আছে। মৃত্যুই ওকে শান্তি দিতে পারে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.