মিলল রক্তমাখা হাতুড়ি, ‘সুইসাইড নোট’
বন্ধ বাড়ি থেকে বাবা-মা-মেয়ের দেহ উদ্ধার জলপাইগুড়িতে
ন্ধ বাড়ি থেকে পাওয়া যাচ্ছিল দুর্গন্ধ। গ্যারাজ থেকে বেরিয়ে এসেছিল রক্তের ধারা। জলপাইগুড়ির আনন্দপাড়ার বাসিন্দারা দ্বারস্থ হন পুলিশের। মঙ্গলবার দুপুরে তালা ভেঙে ওই বাড়িতে ঢুকে ভিতর থেকে এক বৃদ্ধ আইনজীবী, তাঁর স্ত্রী এবং মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ের দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃদ্ধের দেহ গ্যারাজে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় পড়েছিল। মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়েছে মা-মেয়ের।
জলপাইগুড়ির ডিএসপি হরিপদ শী বলেন, “তিনটি ঘরে তিন জনের দেহ পাওয়া গিয়েছে। ময়না-তদন্ত হওয়ার আগে ঠিক কী ভাবে ওঁদের মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা যাবে না। একটি ‘নোট’ পাওয়া গিয়েছে। সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাড়িটি সিল করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের বিশেষজ্ঞ একটি দল সেখানে গিয়ে ফের পরীক্ষা করবে।”
তবে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, অন্তত দু’দিন আগে স্ত্রী কৃষ্ণা ঘোষ (৫৫) এবং মেয়ে মামনকে (২৬) খুন করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন আইনজীবী শম্ভুনাথ ঘোষ (৭০)। শম্ভুনাথবাবুর দেহের পাশ থেকে একটি ‘নোট’ মিলেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ‘সুইসাইড নোট’-এ পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়-সহ মানসিক অবসাদের কথা লেখা রয়েছে। ‘স্ত্রী ও কন্যাকে রক্ষা করতে পারবেন না’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বৃদ্ধ। এমনকী, স্ত্রী, মেয়েকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হচ্ছেন বলেও নোটে লিখেছেন। শম্ভুনাথবাবুর ছেলে অম্লান ঘোষ রাজ্য পুলিশের ডিএসপি পদমযার্দার অফিসার। কর্মসূত্রে তিনি রায়গঞ্জে থাকেন। ঘটনার খবর পেয়ে তিনি জলপাইগুড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে বহু চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। দেহগুলি উদ্ধার করার পরে এ দিন প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে বাড়িটিতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। সিআইডি-র অফিসারেরাও প্রাথমিক তদন্ত করেছেন।
জীবন বিমা সংস্থার পদস্থ কর্মী শম্ভুনাথবাবু অবসরের পরে জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গৃহশিক্ষকতাও করতেন। রবিবারের পরে শম্ভুনাথবাবুকে আর বাড়ির বাইরে দেখা যায়নি বলে পড়শিরা পুলিশকে জানিয়েছেন। শম্ভুনাথবাবুর একটি ব্যক্তিগত ডায়েরিও পেয়েছে পুলিশ। নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন বৃদ্ধ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৭ সেপ্টেম্বরের পরে ডায়েরিতে আর কিছু লেখা হয়নি।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান শম্ভুনাথবাবুর ভাই মাধব ঘোষ। তিনি বলেন, “খুব ভেঙে পড়েছি। পরে কথা বলব।” এক আত্মীয়া, অরবিন্দনগরের বাসিন্দা স্বপ্না ঘোষ বলেন, “আমি রবিবার ওঁদের আনন্দপাড়ার বাড়িতে গিয়েছিলাম। অনেকবার বেল বাজালেও কেউ দরজা খোলেনি। আমি ভেবেছি, ওঁরা বোধ হয় ঘুরতে গিয়েছেন। তাই ফিরে যাই।”
আইনজীবী তথা বার কাউন্সিলের সদস্য গৌতম দাস বলেন, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা। শম্ভুনাথবাবু অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। কেন এই ঘটনা ঘটল পুলিশকে যথাযথ তদন্ত করার আর্জি জানিয়েছি।” স্থানীয় কাউন্সিলর তথা আইনজীবী স্বরূপ মণ্ডল-সহ অন্য আইনজীবীরও এ দিন ঘটনাস্থলে যান। এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা আইনজীবী সোমনাথ পাল বলেন, “ভিতর থেকে বন্ধ ছিল বাড়িটা। তবে কয়েকটা দরজা-জানলা খোলা ছিল।” পুলিশ সূত্রের খবর, দোতলায় দু’টি পাশাপাশি ঘরের বিছানায় কৃষ্ণাদেবী ও মামনের দেহ পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের অনুমান, ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁদের মাথায় আঘাত করা হয়েছে। নীচে গ্যারাজের মেঝেতে শম্ভুনাথবাবুর দেহ পাওয়া যায়। তাঁর গলায় ফাঁস ছিল। পুলিশের সন্দেহ, বৃদ্ধ ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার পরে অনেকটা সময় কেটে যাওয়ায় মৃতদেহ ভারী হয়ে দড়ি ছিঁড়ে মেঝেতে পড়েছে। দোতলার একটি ঘর থেকে একটি হাতুড়ি উদ্ধার করে পুলিশ। তাতে রক্তের দাগ ছিল। দোতলার ঘর থেকে রক্তের ধারা গড়িয়ে নেমেছিল গ্যারাজে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.