|
|
|
|
বাংলার শান্তি ভারতের প্রথম মহিলা জওয়ান |
সব্যসাচী ঘোষ • মালবাজার |
পুরুষদের শেষ দুর্গে পৌঁছে গেলেন দুই সন্তানের এক মা। সেনাবাহিনীতে এতদিন কোনও মহিলা জওয়ান ছিলেন না। এ বার সেখানেও কদম কদম এগিয়ে গিয়েছেন শান্তি টিগ্গা। ডুয়ার্সের বাসিন্দা বছর পঁয়ত্রিশের শান্তি হলেন ভারতের প্রথম মহিলা জওয়ান।
পুরুষদের টেক্কা দিয়েই তিনি চাকরিতে ঢুকেছেন। প্রশিক্ষণে দেড় কিলোমিটার দৌড়ে সহকর্মী পুরুষদের চেয়ে অন্তত ৫ সেকেন্ড সময় কম নিয়েছিলেন। ৫০ মিটার দৌড় শেষ করেছেন মাত্র ১২ সেকেন্ডে। শান্তির বাপের বাড়ি ডুয়ার্সের ফালাকাটা লাগোয়া উত্তর মেন্দাবাড়ি গ্রামে। বিয়ে হয়েছিল ফালাকাটায়। রেলকর্মী পাসেন ওরাওঁয়ের সঙ্গে। স্বামীর মৃত্যুর পরে শান্তি রেলে চাকরি পান। ডুয়ার্সের চালসা স্টেশনে পয়েন্টসম্যান ছিলেন তিনি। এখন বিহারের জামালপুর ছাউনিতে রয়েছেন। তাঁর কীর্তিতে অভিভূত রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পটেল। শান্তিকে চোখে দেখতে চেয়ে চিঠিও দিয়েছেন তিনি। আগামী ১৩ অক্টোবর শান্তি দিল্লি যাবেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে। |
|
প্রশিক্ষণে ব্যস্ত শান্তি টিগ্গা। নিজস্ব চিত্র |
দেশের প্রথম মহিলা সেনা জওয়ান হিসাবে শান্তির এই উত্থান অবশ্য অত্যন্ত নীরবে। রেলে চাকরি সূত্রে তিনি জানতে পেরেছিলেন সেনা বাহিনীর টেরিটোরিয়াল আর্মিতে লোক নেওয়া হবে। মহিলারাও আবেদন করতে পারবেন। ২০০৯ সালে শান্তি আবেদনপত্র পাঠিয়ে দেন। সেনাবাহিনীর কর্তারাও শান্তির শারীরিক সক্ষমতা বিচার করে প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই করেন। প্রশিক্ষণ পর্বে শান্তি চমকে দেন সবাইকে। একটার পর একটা পরীক্ষায় পুরুষদের পিছনে ফেলে দিয়ে দৌড়তে থাকেন তিনি। জামালপুরের সেনা বাহিনীর এক কর্তা বলেন, “শান্তির মতো একটি মেয়েকে আমি প্রশিক্ষণ দিতে পেরে গর্বিত। জওয়ানদের হাতে দেওয়া হয় এমন সমস্ত অস্ত্রই সে চালাতে শিখে নিয়েছে। কোনও পুরুষ জওয়ানের থেকে কোনও দিক থেকে শান্তি পিছিয়ে নেই।”
সম্প্রতি শান্তির এই কীর্তিতে উত্তরবঙ্গ জুড়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সভাপতি বীরসা তিরকি বলেন, “এমন খবর জানতাম না। ১৫ অক্টোবর কালচিনিতে যাব। ওঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলব। আদিবাসীদের প্রেরণা জোগাতে ওঁকে আদিবাসী সমাজের সামনে তুলে ধরতে চাই।” উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম সচ্চিদানন্দ সিংহ বলেন, “শান্তি টিগ্গা আমাদের গর্ব। রেল থেকেই ওই জীবন শুরু হয়। সেই মহিলা দেশের প্রথম জওয়ান শুনে দারুণ খুশি হয়েছি।” শান্তির জীবনটা কিন্তু শুরু হয়েছিল অত্যন্ত সাদামাটা ভাবে। মাধ্যমিক পাশ করার পরে পরিবারের লোকেরা ১৯৯৩-এ তাঁর বিয়ে দিয়ে দেন। বিয়ের পরে স্বামীর মৃত্যু হলে তিনি ২০০৫-এ চাকরি পান। প্রথমে পোর্টার পরে, পরে পয়েন্টসম্যান পদে চাকরি করতেন। দুই সন্তানের জননী তিনি। বড় ছেলে নেলসন একাদশ শ্রেণির ছাত্র। ছোট ডেভিড ষষ্ঠ শ্রেণির। মা চাকরি সূত্রে বাইরে থাকায় ছেলেদের পড়াশোনা চলছে ফালাকাটায় রেমন্ড মেমোরিয়াল স্কুলে। মায়ের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার ডাক পেয়েছে তাঁরাও। এই স্বপ্নের উত্থান নিয়ে বলতে গিয়ে কিছুটা ঘোরের মধ্যই যেন পড়ে যান শান্তি। বলেন, “ভাবতেই পারছি না যে, আমিই ভারতীয় সেনা বাহিনীর প্রথম মহিলা জওয়ান। ছোটবেলায় ডাকাবুকো ছিলাম ঠিকই, কিন্তু বিয়ের পরে সংসার নিয়ে মেতেছিলাম। ডাকাবুকো স্বভাবই বোধহয় আমায় এখানে পৌঁছে দিল।” |
|
|
|
|
|