থিম পুজোর রমরমা রেল শহর আদ্রা ও রঘুনাথপুরে ছিলই। কয়েক বছর ধরে পুরুলিয়ার মণ্ডপেও থিমের ছোঁয়া লেগেছে।
পুরুলিয়া শহরের শরৎ সেন কম্পাউন্ড সর্বজনীন পুজো কমিটির ভাবনায় পুরুলিয়ার সংস্কৃতি ছৌ। ছৌ নৃত্যের নানা চরিত্রের আদলে প্রতিমা। শুধু প্রতিমা নয়। মণ্ডপও সাজানো হয়েছে সেভাবেই। অনেক ছৌ-মুখোশ দিয়ে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ। পিছনের দৃশ্যপটেও জেলার সংস্কৃতির ছবি। আযোধ্যা পাহাড়ের ক্যানভাস, কংসাবতী তীরের মন্দির ক্ষেত্র দেউলঘাটার ইটের দেউলের বিশাল প্রতিকৃতি। পৌষ সংক্রান্তির ভোরে ঘরের মেয়েদের দল বেঁধে গান গাইতে গাইতে টুসু বিসর্জন দিতে যাওয়ার ছবিও রয়েছে। পাহাড়ি পথ বেয়ে জঙ্গল থেকে কাঠ-পাতা সংগ্রহ করে ঘরে ফিরছেন মেয়ে-বউরা। ভাদু, ঝুমুর গাইছেন শিল্পীরা- মণ্ডপে এমন মডেল রয়েছে।
আমলাপাড়া সর্বজনীনের ভাবনায় উঠে এসেছে বাঁকুড়ার সংস্কৃতি। এখানকার মণ্ডপ টেরোকোটার বিষ্ণুপুরের মদনমোহন মন্দির। একচালার প্রতিমা। পাঁচমুড়ার টেরাকোটার নানা কাজ ও ডোকরা শিল্পকর্মও দেখা যাচ্ছে। হুড়া পূর্ব সর্বজনীনের মণ্ডপেও টেরাকোটার শিল্পকর্ম রয়েছে। |
পুরুলিয়া শহরের প্রাইভেট রোড মহিলা মণ্ডলের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে তাল পাতার পাখা দিয়ে। মণ্ডপ সাজানোর খরচের টাকা বাঁচিয়ে তাঁরা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত এক ছাত্রীর চিকিৎসার জন্য দিচ্ছেন। ধোবঘাটা পঞ্চপাড়ার ভাবনায় রবীন্দ্রনাথ ও বিদ্যাসাগর।
তবে, নিতুড়িয়া থানার ভামুরিয়া বাথানেশ্বর শিবমন্দির সর্বজনীন বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতিকে তুলে এনেছে। সুস্থ রুচির পুজো উদ্যোক্তা হিসেবে তাঁদের সুনাম রয়েছে। মণ্ডপের ভিতরের দেওয়ালে পাথরে খোদাই করা সহজপাঠের নানান প্রতিকৃতি। থার্মোকল কেটেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এমন অপূর্ব শিল্প। কাশীপুরের উপরবাজার দুর্গাপুজো সমিতির ভাবনাতেও রবীন্দ্রনাথ। মণ্ডপের রাস্তায় সহজপাঠের প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগের ছবি শোভা পাচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্বকবির জীবনের নানা দুস্প্রাপ্য মুর্হূতের ছবিও মণ্ডপ সজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর শিল্প মিলেমিশে একাকার। এছাড়াও নজর কেড়েছে নিতুড়িয়ার পারবেলিয়া আমরা ক’জন, সরবড়ি গ্রাম সর্বজনীন ও নিতুড়িয়া গ্রাম সর্বজনীনের মণ্ডপ।
রঘুনাথপুরের কাছারিপাড়া সর্বজনীন বালি দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে যামিনী রায়ের শিল্প কৃতি। দুর্গার কোলে গণেশ, কৃষ্ণ-বলরাম ইত্যাদি শিল্পীর আঁকা বিখ্যাত ছবি বালিতে ফুটিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। পাশাপাশি মধুবনি ঘরানার অঙ্কন শৈলির নির্দশন বালি গিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রতিমার মধ্যেও যামিনী রায়ের শিল্পের ছোঁয়া রয়েছে। পুজো কমিটির সম্পাদক শান্তনু দত্ত বলেন, “বালি দিয়ে মণ্ডপ সাজানোর ফলে পরিবেশের কোনও ক্ষতি হয় না। সে দিকেও আমাদের নজর রয়েছে।” গ্রাম রক্ষী বাহিনীর পুজোর থিম- পূণ্যতীর্থ অমরনাথ। বরফ ঢাকা পাহাড়ি পথ পেরিয়ে দর্শনার্থীদের প্রতিমা দর্শন করতে হচ্ছে। গুহার ভিতরে শিব লিঙ্গ রয়েছে। পাশের গুহায় ‘প্রস্থর খোচিত’ দেবী মূর্তি। আলোর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার সমগ্র পরিবেশকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। অন্যতম উদ্যোক্তা বাবু দে বলেন, “অনেকে অমরনাথ যেতে পারেন না। তাই, এ ভাবে তাঁদের কাছে অমরনাথ দর্শনের সামান্য চেষ্টা করা হয়েছে।”
বারাণসির দশাশ্বমেধ ঘাট দর্শন হয়ে যাবে আদ্রার অগ্রদূত সর্বজনীনের মণ্ডপে এলে। আলোর সাহায্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গঙ্গার জলরাশি। ঘাটের অদূরে শিব মন্দির। সেখানেই রয়েছে প্রতিমা। এখানে তুলে ধরা হয়েছে বারাণসিতে পাঠানো বাঙালি বিধবাদের দুরাবস্থার ছবি। মাটির মডেলের সাহায্যে বৃদ্ধাদের দুরাবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। পুজো উদ্যোক্তা অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “মাটির মডেলগুলির সাহায্যে আমরা দেখাতে চেয়েছি ঐতিহ্যবাহী দশাশ্বমেধ ঘাটের রোজনামচা। সেখানে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্না বিধবাদের কি কষ্টের মধ্যে থাকতে হয়-তাও দেখানো হয়েছে।” আদ্রা ওয়্যারলেস ময়দান সর্বজনীনের থিম- শষ্য-শ্যামলা গ্রাম বাংলা। ধান বা চাল মজুত রাখার কুঁচুড়ি’র আদলে নির্মিত হয়েছে মণ্ডপ। উদ্যোক্তরা জানিয়েছেন, “এ বার বৃষ্টি ভাল হওয়ায় চাষও ভাল হয়েছে। তাই সবুজ গ্রাম বাংলাকে তুলে এনেছি।” |