শহর কলকাতাকে অনুকরণ করে নানা রকমের থিম হাজির করে পুজোয় চমক সৃষ্টিতে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে বসিরহাটের পুজো কমিটিগুলি। তার মধ্যে যেমন কম বাজেটের পুজো রয়েছে। তেমনই রয়েছে বেশি বাজেটের পুজোও। বদরতলা রিক্রিয়েশন ক্লাবের থিম ‘প্রলয় আসছে’। ২০১২ সালে ভূমিকম্প হলে পৃথিবীর পরিণতি কি ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা তুলে ধরতে দিনরাত খেটেছেন পুজোর উদ্যোক্তারা। যষ্ঠী থেকে অষ্টমী, তাঁদের মণ্ডপে উপচে পড়া ভিড় দেখে এটা অনায়াসেই বলা যায় পুজোর কর্মকর্তাদের খাটনি সার্থক। নৈহাটির শক্তি সঙ্ঘর এ বার উপহার দিয়েছে সমুদ্রে ভাসমান টাইটানিক। মানুষের ঢল নেমেছে এখানেও। তবে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে বহু দর্শকেরই অভিমত, এ বার আলোর কারিকুরিতে অন্যকে অনেকটাই টেক্কা দিয়েছে নবশ্রী সঙ্ঘ। নৈহাটির তরুণ সঙ্ঘের মণ্ডপে রাজস্থানের চিত্রকলা নজর কেড়েছে দর্শকদের। ওই রাজ্যের বিখ্যাত কাঠপুতুল নিয়ে মণ্ডপসজ্জার আয়োজন করেছেন শিল্পী দেবব্রত মণ্ডল। রাজস্থানী মিনিয়েচার পেন্টিং, কাঠপুতুলে আকষর্ণীয় মণ্ডপটি খুবই সুদৃশ্য। ইছামতী নদীর ধারে মায়াপুরের ইসকন মন্দিরের অনুকরমে বিশাল মণ্ডপ বিদ্যুৎ সঙ্ঘের। মাইকে বাজছে ভজন, কীর্তন। মহকুমার বড় বাজেটের পুজোগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। আশ্রমপাড়ার পুজোর উদ্যোক্তারা এ বার দেবীকে নিয়ে এসেছে মাটির ঘরে। মানুষের দীর্ঘ আয়ু কামনায় নানারকমের ফল ও সব্জির আদলে তৈরি বদরতলার ইউ দ্য গ্রীন ক্লাবের মণ্ডপটি এক নজরেই চোখ টানে। অভিনব এই মণ্ডপেও অষ্টমীর সন্ধ্যায় উপচে পড়চিল ভিড়।
সাঁইপালা দেশবন্ধু অ্যাথলেটিক ক্লাবের এ বারের আকর্ষণ দার্জিলিঙের ঘুম স্টেশন। পাহাড়ে শান্তির বার্তা প্রচারেই তাঁদের এই থিম বলে উদ্যোক্তাদের দাবি। জাতীয় পাঠাগার (ব্যায়ামপীঠ) পুজো উদ্যোক্তারা এ বার কোনারকের মন্দিরকেই তুলেএনেছেন বসিরহাটে। প্লাইবোর্ড, থার্মোকলের তৈরি মণ্ডপটি নজর কেড়েচে দর্শনার্থীদের। ত্রৈলঙ্গ স্বামীর মন্দিরের আদলে মণ্ডপ ইউনাইটেড ক্লাবের। তাঁতি, কামার, ছুতোর, কুমোর প্রভৃতি পেশার মানুষ সমাজের কতটা বন্ধু সেই বিষয়টিই তুলে ধরেছে প্রগতি সঙ্ঘের পুজো কমিটি।
থিমের বৈচিত্র্যে পিছিয়ে নেই ইয়ংস্টার ক্লাব, ভারতী সঙ্ঘ, অর্ঘ্য সঙ্ঘ, বিবেকানন্দ সঙ্ঘ, দি নিউ মুন ক্লাব, যুবক সঙ্ঘ, ১১ পল্লি, প্রভাতী সঙ্ঘ, সবুজ সঙ্ঘ, অগ্রগামী সঙ্ঘ, মহুয়া সঙ্ঘ, প্রান্তিক ক্লাব, নেতাজি ইউনিয়ন, মিলন সঙ্ঘের মতো পুজো কমিটিও। নবারুণ সঙ্ঘের সহযোগিতায় মৈত্রবাগান অ্যাসোসিয়েশনের জমিদার বাড়ির অনুকরণে মণ্ডপ, আলো ও প্রতিমা দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। প্রোগ্রেসিভ রিজেন্ট ক্লাবের টাউনহল মাঠে তৈরি শান্তিনিকেতন ক্ষণিকের জন্য যেন কবিগুরুর আশ্রমে পৌঁছে দেয়। মহাষ্টমীর সন্ধ্যাতেই যে ভাবে বসিরহাটের মণ্ডপগুলিতে জনজোয়ার দেখা দিয়েছে, নবমীতেও যে তা বজায় থাকবে তা বলাইবাহুল্য। |