দশমীতে দুই পরিবারের
দুর্গা যায় পরস্পরের বাড়ি
শমীতে রায় বাড়ির দুর্গাপ্রতিমা আসে ভট্টাচার্য বাড়িতে।
পাল্টা, ভট্টাচার্য বাড়ির দুর্গাপ্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় রায়বাড়িতে।
সময়ের নিয়মে হাওড়ার আমতার তাজপুর গ্রামের রায় পরিবার এবং ভট্টাচার্য পরিবারের পুজোর আড়ম্বর, জাঁকজমক হারিয়ে গিয়েছে। শুধু এখনও টিকে রয়েছে দশমীর ওই প্রথা।
রায়েরা ছিল গ্রামের জমিদার পরিবার। আর ভট্টাচার্য পরিবার গ্রামের চতুষ্পাঠীর প্রতিষ্ঠাতা। রায় পরিবারের কর্তাদের দাবি, ৯২০ বঙ্গাব্দে তাঁদের পরিবারে দুর্গাপুজো চালু হয়। তাঁরা জমিদারি পেয়েছিলেন বর্ধমানের রাজাদের কাছ থেকে। বর্ধমানের রাজাদের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়েই প্রজাদের মনোরঞ্জনের জন্য দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন তাঁদের পূর্বপূরুষ দুর্লভ রায়। কাছাকাছি সময়ে ভট্টাচার্য পরিবারও দুর্গাপুজো শুরু করে।
এক সময়ে জমিদার বাড়ির পুজোর বৈভব ছিল দেখার মতো। কাশী থেকে পাঁচ জন ব্রাহ্মণ আসতেন হোম করতে। মহিষ বলি দেওয়া হত। আয়োজিত হত নাটক, যাত্রাপালা। পুজো দেখতে বর্ধমানের মহারাজাদের প্রতিনিধিরা আসতেন। পরবর্তী সময়ে রায় পরিবার ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশই এখানে থাকেন না। দেবত্র যে সম্পত্তি রয়েছে, তারই আয়ে পুজো চলে। রয়েছে স্থায়ী দুর্গামণ্ডপ।
ওই পরিবারের সদস্য মানস রায়, সুমন্ত রায়েরা বলেন, “দেবত্র সম্পত্তির আয়ে পুজোর সেই বৈভব ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আমাদের আর্থিক অবস্থাও খুব ভাল নয়। চাষবাস করে সংসার চলে। বেশির ভাগ শরিকই এখানে থাকেন না। জাঁকজমক করব কী ভাবে?”
ভট্টাচার্য বংশের পূর্বপুরুষ হরিহর ভট্ট তাজপুরে হাজির হয়েছিলেন উত্তর ভারত থেকে। দুর্লভবাবুর সমসাময়িক তিনি। হরিহরবাবুর হাত ধরেই গ্রামে চালু হয় সংস্কৃত শিক্ষা। তিনি স্থাপন করেন আবাসিক চতুষ্পাঠী। রাজ্যের বহু এলাকা থেকে এখানে ছাত্রেরা আসতেন। এই বংশে ছিল ‘তর্কালঙ্কার’, ‘তর্কবাগীশ’-এর ছড়াছড়ি। পরিবারের বর্তমান কর্তাদের দাবি, কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র এই চতুষ্পাঠীতে পড়াশোনা করেছেন। বর্ধমানের মহারাজের উৎসাহে হরিহর ভট্টও চালু করেন দুর্গাপুজো। প্রথমে টোলে ঘটস্থাপন করে দুর্গাপুজো শুরু হয়। পরে পুজো চালানোর জন্য জমি দান করেন বর্ধমানের রাজারা। এখানকার পুজো হত ভাবগম্ভীর পরিবেশে।
এখন দু’টি পরিবারের পুজোই হয় সাদামাঠা ভাবে। রায় পরিবারের জমিদারিও যেমন নেই, তেমনই উঠে গিয়েছে চতুষ্পাঠীও। ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্য দেবকুমার ভট্টাচার্য বলেন, “জমির প্রায় কিছুই নেই। একটি পুকুর রয়েছে। আর আছে একটি বাঁশঝাড়। তার আয় এবং আমরা বিভিন্ন শরিকেরা কিছু অর্থব্যয় করি। এটাই পুজোর সম্বল।”
ঠিক কী হয় দশমীর দিন?
রায় পরিবারের সদস্যেরা তাঁদের প্রতিমাকে কাঁধে চাপিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার পথ উজিয়ে আনেন ভট্টাচার্য পরিবারের দুর্গামণ্ডপ চত্বরে। সেখানে রায় পরিবারের প্রতিমাকে বরণ করেন ভট্টাচার্য পরিবারের মহিলারা। রায় পরিবারের যে সব সদস্য প্রতিমার সঙ্গে আসেন, তাঁদের মিষ্টিমুখ করানো হয়। এর পরে ফিরে আসে রায় পরিবারের প্রতিমা। পাল্টা তার সঙ্গে আনা হয় ভট্টাচার্য পরিবারের প্রতিমাও। এর পরে দু’টি প্রতিমাই বসানো হয় রায় পরিবারের দুর্গা মণ্ডপ চত্বরে। রায় পরিবারের মহিলারা ভট্টাচার্য পরিবারের প্রতিমাকে বরণ করেন। ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যদের মিষ্টিমুখ করানো হয়। এর পরে দু’টি পরিবার তাঁদের নিজের নিজের প্রতিমাকে আলাদা করে নিরঞ্জন করান।
কী ভাবে চালু হল এই প্রথা?
দুই পরিবারের সদস্যেরাই জানান, ভট্টাচার্যেরা ছিল রায়বাড়ির গুরুদেবের বংশ। তাঁদের মান রাখার জন্য প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হত। পাল্টা সৌজন্যে ভট্টাচার্য পরিবারও তাদের প্রতিমা নিয়ে আসা শুরু করেন রায় পরিবারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.