রেষারেষি, ঐক্যে চিড় তিন শহরে
রিবর্তনের হাওয়া লেগেছে শারদীয়া উৎসবেও। এ বারের পুজোর সেরার শিরোপা পেতে স্বাভাবিক নিয়মেই বিভিন্ন কমিটির মধ্যে রেষারেষি তুঙ্গে। তার ফলে জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুর মিলে তিনটি পুরসভা একত্র করে রাজনৈতিক নেতাদের কর্পোরেশন গড়ার বাসনা সফল করতে আমজনতার ঐক্য নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্নের কথা পরে হবে, আগে বাসনার কথা হোক। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুরতিনটি পুরসভার মধ্যে একটির সঙ্গে অন্যটির সীমান্ত এলাকার দূরত্ব মাত্র ৩-৪ কিলোমিটার। ভাগীরথীর পাড় বরাবর খুব কাছাকাছি অবস্থিত ওই তিনটি পুরসভা একত্র করে প্রায় এক দশক আগে কর্পোরেশন গড়ার প্রথম স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন সংসদ অধীর চৌধুরী। তার পর ওই স্বপ্নের সঙ্গে সামিল হয়েছিলেন বিরোধী রাজনৈতিক মতাবলম্বীরাও। লাগোয়া তিনটি পুরসভার অবস্থান ওই স্বপ্নকে উস্কে দিয়েছে। স্বপ্নপূরণে প্রতিবন্ধকতার সিঁদুরে মেঘ দেখা দেয় কয়েক মাস আগে মুর্শিদাবাদ জেলাকে দু’টি পৃথক জেলায় ভাগ করার প্রস্তাব উত্থাপিত হলে।
বহরমপুরের সঙ্গে থাকতে চেয়ে মাস খানেক আগে মুর্শিদাবাদ পুরসভা এলাকার নাগরিক সমিতির তরফে লালবাগ মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়। পুজোর বাজারের পরিবর্তিত হাওয়া ওই ঐক্যে চিড় ধরেছে। পুজোর ময়দানে তিনটি পুরসভার পুজো কর্তা থেকে পুরকর্তা সবাই যেন পরস্পরের এখন ‘জাতশক্র’। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের পুরপ্রধান শংঙ্কর মণ্ডল ‘চ্যালেঞ্জ’-এর সুরে হাঁক পাড়ছেন, “এ বার জিয়াগঞ্জের স্টিমারঘাট জলতরঙ্গ ক্লাবের মণ্ডপ, প্রতিমা থেকে পরিবেশ সবটাই এতটাই দৃশ্যনন্দন হয়েছে যে জেলা সদর বহরমপুরের যে কোনও পুজোর সঙ্গে নির্দ্বিাধায় টক্কর দেবে।”
অসম থেকে নিয়ে আসা লরি লরি মুলি বাঁশ ও বেত দিয়ে লিঙ্গরাজ মন্দিরের আদলে তৈরি করা হয়েছে সিপিএমের জোনাল কমিটির নেতা শঙ্করবাবুর পুজো কমিটির ৭২ ফুট উঁচু মণ্ডপ। মণ্ডপের দেওয়াল জুড়ে রয়েছে কাঠের গুড়ো, তুস ও বাঁশের গুড়ো দিয়ে সৃষ্ট শিল্পকর্ম। শিল্পিত ওই মন্দিরের পুরোভাগে রয়েছে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার ৫টি ঘোড়া। ঘোড়াগুলির লাগাম রয়েছে এক মহিলার হাতে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী শংঙ্করবাবুকে বিনা যুদ্ধে কৃতিত্বের মেদিনী ছাড়তে নারাজ জিয়াগঞ্জের প্রাক্তন পুরপ্রধান কংগ্রেসের নির্মল দত্ত। সৌদুগঞ্জ যুবক সঙ্ঘের কর্তা নির্মলবাবু বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহ কুঠিবাড়ি, পদ্মাবক্ষে কবিগুরুর নৌভ্রমন সবাটাই তুলে আনা হয়েছে সৌদুগঞ্জের মণ্ডপে। সুনামির বিপর্যয়ের ভয়ানক প্রতিক্রিয়া থেকে বঙ্গ-জীবনের ১২টি পার্বন পর্যন্ত তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপের ভিতরে। এত কিছু উপকরণ কেবল জিয়াগঞ্জ কেন জেলার অন্য মণ্ডপে মিলবে না।” মুর্শিদাবাদ পুরসভার পুজোকর্তাদের পুঁজি অবশ্য ভঙ্গি নয়, ভাব। মুর্শিদাবাদের পুরপ্রধান সৌমেন দাস বলেন, “দুর্গাপুজোর জন্য কয়েক দশক আগে সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের অগ্রদূত নবাব ওয়াসেফ আলি জমিদান করেন। দক্ষিণ দরওয়াজার সামনের ওই পূন্যভূমিতে বরাবরের মতো এ বারও সম্প্রীতির শারদোৎসবে সবাই মশগুল। চক কালীবাড়ি দুর্গোৎসব কমিটির পুজো মণ্ডপ গত কয়েক বছরের মতো গড়ে উঠেছে চক মসজিদ প্রাঙ্গণের জমিতে। সম্প্রীতির ওই দৃষ্টান্ত চাক্ষুস করতে প্রতিদিন কত মানুষের যে ভিড় হচ্ছে তা বলার নয়।” তাই বলে কি বহরমপুর পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য শহরের ইজ্জতের সওয়ালে নীরব থাকবেন? নীলরতনবাবু বলেন, “শ্রী সংঘের জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনা, বাবুপাড়ার সাঁওতাল গ্রাম, বিষ্ণুপুরের অক্ষরধাম, সেবা মিলনীর নারকেল গুড়ির প্রতিমা ও মণ্ডপ, নবরূপ সংঘের টেরাকোটার প্রতিমা, ভৈরবতলার দেবস্থানম, বাবুলবোনার ইন্জিয়া গেট, খাগড়া পাউন্ড রোডে পাশাপাশি দু’টি মণ্ডপের সোনার ও হিরের প্রতিমা--- কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি! বহরমপুরে এবার সংখ্যায় এত বেশি শিল্প সম্মত প্রতিমা ও মণ্ডপ তৈরি হয়েছে যে পুরসভার বিচারকরা কাকে ছেড়ে কাকে শারদ সম্মান জানাবেন সেই চিন্তায় গত তিন ধরে কাহিল। এর পর আশাকরি সেরার শিরোপা নিয়ে কথা নিষ্প্রয়োজন!” এত কিছুর পরেও কিন্তু পরিবর্তনের শারদ বাতাসে ভর করে ওই তিনটি পুরসভা একত্রে নিয়ে কর্পোরেশন গড়ার স্বপ্ন দেখা কিন্তু আমজনতার মধ্যে চলতেই থাকবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.