কবে ভাসান হয়ে গিয়েছে ছোট্ট দিশার
ঙিন ফ্রক। যা দেখলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রেল লাইনের ধারে খেলা করার সেই দুপুরটার কথা। বছর পাঁচেকের দিশা সে দিন দীর্ঘক্ষণ ধরে রেললাইনের ধারে খোয়া পাথর নিয়ে বোনের সঙ্গে খেলেছিল। মা অন্য দিন নিষেধ করলেও সে দিন কিচ্ছুটি বলেনি। আড়াই বছরের ছোট বোনকেও বারণ করেনি খেলতে। কিছুক্ষণ পরেই অবশ্য রেল লাইনটি কাঁপতে শুরু করল। সঙ্গে অদ্ভূত শব্দ। মা কখন এসে হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল। তার পর লাইনের বাঁকে ট্রেনের মুখ দেখা যেতেই হ্যাঁচকা টান মেরে লাইনের মাঝ-বরাবর ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। এর পরেই নিজেও ছোট বোনকে কোলে নিয়ে লাইনের উপরেই বসে পড়ল। ট্রেন থেকে খুব জোরে হুইসল্ দেওয়ার আওয়াজ শেষ মুহূর্তে কানে বাজে। তার পর আর কিছু মনে নেই একরত্তি দিশার। গত ১০ সেপ্টেম্বর নবদ্বীপের এক ব্যবসায়ী পরিবারের বধূ মুনমুন ঘোষ পর পর দুটি কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায়র অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করতে দুই আত্মজকে নিয়ে রেললাইনে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন। ছোট মেয়ে মায়ের সঙ্গ দিলেও বড় মেয়ে দিশা বেঁচে যায়। অষ্টমীর সকালে বারান্দায় ঝুলছে সেই ফ্রকটি, সেদিন যা তার পরনে ছিল। দাদু প্রভাত মিত্র বলেন, “জানেন, নাতনির খুব পছন্দের ফ্রক ছিল। কিন্তু এখন ওই ফ্রক দেখলেই ভয়ে কুঁকড়ে যায়।” ওই ঘটনার পর সমুদ্রগড়ের জলাহাটিতে মামার বাড়িতেই রয়েছে দিশা। মামাবাড়ি থেকেও রেল লাইন বেশি দূরে নয়। দিদিমা লক্ষ্মীরানি মিত্র বলেন, “রাতের ট্রেনের শব্দ খুব জোরে শোনায়। ওই রেল গাড়ির শব্দ শুনে নাতনি বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে আঁকড়ে ধরে থরথর করে এখনও কাঁপে। মেয়ে ও ছোট নাতনিকে বাঁচাতে পারিনি। বিয়ের পর থেকেই কারণে-অকারণে মেয়ের উপরে অত্যাচার হয়েছে। ছোট নাতনি দীপ্তি জন্মানোর পরেই ওই অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। না হলে পেটের নাড়ি ছেঁড়া সন্তানকে কেউ অমন ভাবে মৃত্যুর মুখে ছুঁড়ে দিতে পারে!” কথা আটকে গিয়ে কান্না হয়ে ঝরে পড়ে লক্ষ্মীদেবীর। সাত বছর আগে নবদ্বীপের ব্যবসায়ী গৌরব ঘোষের সঙ্গে মুনমুনের বিয়ে হয়। মুনমুনের এক মামা জহরলাল ঘোষ বলেন, “বিয়ের শুরুতেই অত্যাচারের কারণ ছিল টাকা-পয়সা। দুই মেয়ের জন্ম দেওয়ায় শেষ দিকে তা বদলে যায় ‘অপয়া’ বৌ হিসেবে। অথচ যারা মূল অভিযুক্ত সেই শাশুড়ি ও খুড়-শাশুড়িকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।” এখন রেলগাড়ি থেকে ঢাকের আওয়াজ যে কোনও জোরালো শব্দে দিশা আতঙ্কিত বোধ করে। তাই পাড়ার সমবয়সীরা যখন মণ্ডপ চত্বরে হুল্লোড়ে মেতে উঠেছে, তখন মণ্ডপের আলো থেকে কয়েক যোজন দূরে দিশা একাকি বাড়িতে। নাতনিকে কোলে বসিয়ে প্রভাতবাবু বলেন, “আমাদের কোনও দুর্গাপুজো নেই। যত দিন না মানুষরূপী ওই অসুরদের কোনও শাস্তি হচ্ছে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.