‘পাড়া’র অভাব মেটাচ্ছে ওঁদের আবাসনের পুজো
চারপাশে হই-হুল্লোড়। দূর থেকে ভেসে আসা ঢাকের বোল। মাইকের গান। প্রাচীরের বাইরের রাস্তায় জনস্রোত। প্রাচীরের ভিতরে কেমন যেন নিঝুম পরিবেশ। সন্ধে হলে কাছে-দূরের পাড়ায় ঠাকুর দেখে আসা। অষ্টমীতে অঞ্জলি বা দশমীর সিঁদুরখেলার অনুষঙ্গেই যা পাড়ার পুজোর সঙ্গে যোগ। কিন্তু নাড়ির যোগ কোথায়!
প্রাচীর যেমন নিরাপত্তা দেয়, দূরত্বও বাড়ায়। নিজেদের পুজো বলে কিছু থাকে না। ১৫-২০ বছর আগে পর্যন্ত মেদিনীপুরে পুজো বলতে পাড়ার পুজোই বোঝাত। পরে শহরে তৈরি হল বহুতল আবাসন। বাসিন্দাদের মনে জমতে শুরু করল অন্যরকম দুঃখ। সেই দুঃখ ভুলতেই আবাসনের বাসিন্দারা কলকাতার আদলে কয়েক বছর হল শুরু করেছেন নিজেদের পুজো।
আগে শুধু সেকপুরা সরকারি আবাসনের বাসিন্দারাই পুজো করতেন। ফ্ল্যাট-বাড়ি কালচারটা অচেনা ছিল এই শহরে। এখন আবাসনের পুজো মেদিনীপুরেও খুব কম নয়। পুরনো বাড়ি ভেঙে বা একচিলতে জমিতেই মাথা তুলছে একের পর এক বহুতল।
শহরের একটি আবাসনের পুজো। নিজস্ব চিত্র
কালেক্টরেট থেকে কেরানিতলা যাওয়ার পথে সুখসাগর অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস শুরু বছরখানেক হল। সেখানে ৬৪টি পরিবারের বাস। একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা অন্য ফ্ল্যাটের লোকজনকে চেনেন সামান্য। তা-ও কয়েক জনের উদ্যোগে দু’-একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে আগে। সেখান থেকেই আলাপ-পরিচয় নিবিড় করার ভাবনাটা শুরু। সেই তাগিদ থেকেই এ বার পুজো হচ্ছে আবাসনে। পুজো-কমিটিও হয়েছে। সম্পাদক আবীর রাণা, কর্মকর্তা সুনীল মল্লিক, শিবশঙ্কর খান, ফাল্গুনী শতপথী, ডা. সুদীপ্ত মাইতি-রা কেউ আদতে গোয়ালতোড়ের লোক, কেউ আবার মেদিনীপুর শহরেই ছিলেন যৌথ সংসারে। ফাল্গুনীবাবুর কথায়, “এখনও আমরা সবাইকে ঠিকমতো চিনি না। ঘনিষ্ঠতা তো দূরের ব্যাপার। পুজোটা আমাদের সবাইকে কাছে আনছে।”
বিধানগরের সর্বজনীনের বাজেট যেখানে ৬ লাখ ছুঁয়েছে, সেখানে এই আবাসনের বাজেট টেনেটুনে ২৫ হাজার টাকা। চার দিনই দুপুরে খাওয়াদাওয়া। তার খরচ আলাদা। সপ্তমী-অষ্টমী ‘ভেজ’, পরের দু’দিন ‘নন-ভেজ’। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। হবে বিজয়া-সম্মেলন। বাসিন্দা সুমনা দত্ত আগে ঝাড়গ্রামে ছিলেন। তাঁর কাছেও ‘সবাই মিলে আনন্দটা’ই আসল।
সেকপুরা সরকারি আবাসনের বাসিন্দারা সরকারি চাকরির সূত্রে এখানে থাকেন। ১৪৪টি ফ্ল্যাট। ৩৩ বছর আগেই পুজো শুরু হয়েছিল। এ বার বাজেট প্রায় এক লক্ষ টাকা। সম্পাদক শ্যামল মিত্র, কর্মকর্তা আশিস দাস, অপূর্ব মণ্ডলরা জানালেন, আবাসনের ছেলে-মেয়েরা, কর্তা-গিন্নিরা পুজোর চার দিন আনন্দে মাতেন। ফেলে আসা যৌথ পরিবারের দুধের স্বাদ ঘোলে মেটে। পাড়া-ছাড়া হওয়ার হতাশাও কাটে। সবার খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনও উদ্যোক্তাদের কাছে ‘হ্যাপা’ নয়। আবাসনের বাসিন্দারাই রয়েছেন আয়োজনে। রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। আবাসনের এফ-ব্লকে থাকেন শেখ আমানুল্লা, মোশারফ হোসেনরা। আয়োজনে তাঁরাও সামিল। অবসরের পরে আবাসন ছাড়তে হয়েছে যাঁদের, তাঁরাও পুজোয় আসেন মধ্যজীবনের ‘শিকড়ে’র টানে। বিসর্জনের শোভাযাত্রাও আলাদা আনন্দ আনে। পুলিশলাইনের কাছে পূর্ত দফতরের কর্মচারী-আবাসনে পুজো হচ্ছে বছর সাতেক। সম্পাদক মিঠু দাস, কোষাধ্যক্ষ প্রতাপ দাসের কথাতেও মিলন-মেলার মন্ত্রই। এখানে ৪৫টি পরিবারের বাস। আগে ‘অন্য পাড়া’য় পুজো দেখতে বা অঞ্জলি দিতে যেতে হত। আবাসনে পুজো চালু হওয়ায় সেই দুঃখ গিয়েছে। সবাই মিলে নিরঞ্জনে যাওয়া আর রাতে সকলে খাওয়ার আনন্দ ‘মিস করতে চান না’ কেউই। কুইকোটার সরকারি আবাসনের পুজোর চরিত্রও প্রায় একই। সেই একসাথে খাওয়াদাওয়া আর ‘নিজেদের পুজো’র আনন্দ ভাগ করে নেওয়া।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.