|
|
|
|
|
মন পড়ে থাকে গ্রামের বাড়িতে
সত্যব্রত রায়
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক,
মেদিনীপুর এন সি রাণা আকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ডিরেক্টর |
|
ছোটবেলার পুজো সত্যিই অন্যরকম। বন্ধুদের সঙ্গে জমিদার বাড়িতে গিয়ে ঠাকুর দেখা, খাওয়া- দাওয়া, আড্ডা, যাত্রা দেখা, আরও কত কী। পড়াশোনার জন্য যেখানেই থাকি না কেন, পুজো এলেই মন পড়ে থাকত গাঁয়ের বাড়িতে। শুধু মনে হত, কখন গ্রামে এসে পুজো দেখব। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হল কতই না মজা হবে....। সত্যি বলতে কী, এখনও ছোট বেলার কথা ভাবলে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি।
অধুনা পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা থানা এলাকার বাসুদেবপুরে আমার বাড়ি। এখানেই কেটেছে শৈশব। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। তারপর বাসুদেবপুর হরিপ্রিয়া ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হই। বর্ধিষ্ণু গ্রাম বলতে যা বোঝায়, আমাদের গ্রাম তেমনই। গ্রামে দুর্গাদাস রায়ের বাড়িতে পুজো হত। জমিদার বাড়ির পুজো দেখতে আশপাশ থেকে প্রচুর মানুষ আসতেন। যেন ঢল নামত। সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী তিন দিনই দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত থাকত। আশপাশের গ্রাম থেকে বন্ধুরা আসত। সকলের সঙ্গে এখানে দেখা হত। আসলে, রায় বাড়ির পুজোয় সকলের অবাধ যাতায়াত ছিল। আমরা চার ভাই, চার বোন। কলেজে পড়ার সময়ও পুজোর ক’দিন গ্রামে আসতাম। এই ক’দিন গ্রাম ছেড়ে থাকার কথা ভাবতেই পারতাম না। অদূরে চক্রবর্তী পরিবারেও পুজো হত। কিন্তু বেশি ভিড় হত রায় বাড়িতে। সন্ধেবেলায় আরতির পর যাত্রার আসর বসত। যাত্রা দেখতে হাজার পাঁচের মানুষ ভিড় করতেন। মেদিনীপুর কলেজে শিক্ষকতা শুরু করি ১৯৬৪ সালে। কর্মজীবনের পুরোটাই এই কলেজে কেটেছে। ১৯৯৫ সালে কলেজের প্রাতঃকালীন বিভাগের অধ্যক্ষ হই। ওই বছরই গড়ে ওঠে এন সি রাণা আকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। কলেজের সকলের সহযোগিতা ছাড়া এই কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব হত না। এখন অবশ্য আমাদের গ্রামের বাড়িতেই পুজো হয়। সাত বছর হল এই পুজো হচ্ছে। মায়ের ইচ্ছেতেই গ্রামের বাড়িতে পুজো শুরু হয়। এখন উৎসবের ক’দিন বাড়িতে আত্মীয়রা আসেন। গ্রামের লোকজনও ভিড় করে। সবাই মিলে কত আনন্দ হয়। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। যখন কলেজে পড়তাম, তখন পুজোর আগে নদীর ধারে এলেই কাশফুলের মেলা দেখতাম। শহরে ঢাকের আওয়াজ শুনতাম। মন ভরে যেত। মনে হত, পুজো চলে এল। গ্রামে গিয়ে কত আনন্দ হবে। শৈশবের পুজো সত্যিই অন্য রকম। |
|
|
|
|
|