যখন পুজোয় জুড়ে স্বাধীনতার সংগ্রাম
পুজো মানে শুধুই কি মণ্ডপে ঘোরা, আনন্দ আর হই-হুল্লোড়? এই মেদিনীপুরেই এমন অনেক পুজো রয়েছে, যেখানে গেলে এক অন্য সময়ে, অন্য ভাবনায় ভেসে যায় মন। সেলুলয়েডের মিছিলের মতো অন্তর্দৃষ্টিতে ভেসে আসে সেই সব মুখ, পরাধীনতার গ্লানি-মোচনে যাঁরা আত্মোৎসর্গ করেছিলেন। তাঁদের রক্তধারায় পথ করে নিয়েছিল স্বাধীনতা।
মেদিনীপুর মানে ক্ষুদিরাম, মাতঙ্গিনী। স্বাধীনতার সংগ্রাম। একদা বিপ্লবীদের পীঠস্থানে তাঁদের হাতেই বোধনএমন পুজো থাকবে না, তা কি হয়! সে সব পুজো বন্ধে কম চেষ্টা করেনি ব্রিটিশ শাসকেরা। যদিও সেই চক্রান্ত বারে বারেই ব্যর্থ হয়েছে। আজও অমলিন স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরব-মাখা সে সব পুজো। বিলাস-বৈভব নয়, সম্মান-আভিজাত্যে অনন্য সে সব পুজো আজও টানে সাধারণ মানুষকে।
কর্নেলগোলার প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র।
১৯৩১, ১৯৩২ ও ১৯৩৩ সাল--তিন বছরে পর পর তিন কুখ্যাত ম্যাজিস্ট্রেট পেডি, ডগলাস ও বার্জ খুন হন মেদিনীপুরে। আতঙ্কে আর কেউ ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বই নেয়নি। ব্রিটিশ শাসকেরা পি জে গ্রিফিথ নামে এক অবসরপ্রাপ্ত আইসিএসকে ম্যাজিস্ট্রেট করে পাঠায়। শুরু হয় চরম অত্যাচার। সান্ধ্য-আইনে সন্ধের পর বাইরে বেরোনো নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তখন বিপ্লবীদের সঙ্ঘবদ্ধ করতে ১৯৩৪ সালে শুরু হয় কর্নেলগোলার পুজো। এখনও চলছে। স্বদেশিদের সে সময়ের বিদেশি দ্রব্য-বর্জন নীতিকে সামনে রেখে এখনও প্রতিমার অলঙ্কার বা বস্ত্রে দিশি সামগ্রীই ব্যবহার করা হয় শুধু। অলঙ্কার, বস্ত্র--সবই মাটির।
এই পুজোয় এখনও প্রচলিত দেহ-সৌষ্ঠব প্রতিযোগিতা। আবৃত্তি, নৃত্য, বসে আঁকো, ক্যুইজ, শঙ্খবাদন, যেমন খুশি সাজো, কবিগান থেকে আতসবাজি প্রদর্শনী আয়োজনে অভিনবত্ব রয়েছে। প্রবীণ নাগরকিদের সংবর্ধনা জানানো, কৃতি ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কৃত করা বা গরিব ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সহায়তার মতো কাজও করে চলেছেন উদ্যোক্তারাও। পুজো-কমিটির বর্তমান সম্পাদক তীর্থঙ্কর ভকত বলেন, “এই পুজোর সঙ্গে জুড়ে আছে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম। তাঁদেরও স্মরণ করি। পুজোকে কেবল আনন্দ, হই-হুল্লোড়ে সীমাবদ্ধ না রেখে, সমাজের জন্য কিছু করতে চাই।” ১৯২৮ সালে পুজো শুরু হয়েছিল ডেবরার বালিচক স্কুলবাজারে। তখন দলে দলে যুবক ঝাঁপিয়ে পড়ছেন স্বাধীনতা আন্দোলনে। পুজো হয়ে উঠল তাদের মিলন-মেলা। পুজোয় অনেকের সমাবেশে স্বাধীনতা-লড়াইয়ের বার্তা বিনিময়েরও উদ্দেশ্য ছিল। ব্রিটিশ-শাসক সে পুজোতেও বিঘ্ন ঘটানোর কম চেষ্টা করেনি। সে চক্রান্ত সফল হয়নি। অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি দিতে এখানেই সমবেত হন হাজার হাজার মানুষ। অঞ্জলির পরে সবার জন্য থাকে জলযোগ। দশমীতে নরনারায়ণ সেবা। হয় শঙ্খবাদন, ক্যুইজ, আতসবাজি প্রদর্শন। দুঃস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ, অসুস্থকে আর্থিক সহায়তার মতো সামাজিক উদ্যোগের মধ্যেই বেঁচে রয়েছে সে দিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের ‘আত্মা’। পুজো-কমিটির অন্যতম সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যে পুজোয় স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যুক্ত ছিলেন, সেখানে তো শুধুই হুল্লোড় চলতে পারে না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.