জুটি গড়েই বাজার মাত থিম-পুজোর শিল্পীদের |
ফুটবল বা হকি এক জনের খেলা নয়। টিমগেম। ২০১১ প্রমাণ করল, পুজোও তা-ই। একা একা চলার দিন শেষ।
কলকাতার পুজোয় জুটি বেঁধে কাজ করার প্রথম ‘সফল’ দৃষ্টান্ত বোধ হয় অমর সরকার-ভবতোষ সুতার। বেহালার ‘সৃষ্টি’তে (‘সহযাত্রী’র সঙ্গে মিশে যা এখন ‘বড়িশা ক্লাব’) কিংবা হরিদেবপুরের ‘অজেয় সংহতি’তে নতুন একটা ঘরানার জন্ম দিয়েছিল এই জুটি। অমর আর ভবতোষ এখন নিজেরাই একক ভাবে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ওই ঘরানার হাত ধরেই পরবর্তীকালে উঠে এসেছেন সৌরভ জানা-মহেন্দ্র পাল, বিভাস মুখোপাধ্যায়-সুব্রত মণ্ডলরা।
শহরের অন্যতম বড় পুজো ‘সুরুচি সঙ্ঘ’-এ মূল মণ্ডপশিল্পী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, তিনি সঙ্গে পেয়েছেন রাজা সরকার, লাল্টু সরকার, শ্যামল নাইয়ার মতো এক ঝাঁক সহশিল্পীকে। যাঁদের কেউ ইন্টিরিয়র ডেকরেটর, কেউ বা পেশাদার অঙ্কনশিল্পী। পুজোর এক কর্মকর্তার কথায়, “আমরা বরাবরই টিমগেম-এ বিশ্বাসী। যে শিল্পীই এখানে কাজ করুন না কেন, আমরা যে যেমন পারি, নিজেদের ন্যূনতম সামর্থ্য নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি। এটাই আমাদের মূল শক্তি।” |
বড়িশা ক্লাবের মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র |
এ বার পুজোয় নতুন আঙ্গিকে হাজির ‘সেলিমপুর পল্লি’। বিশ্বের বহু বিখ্যাত চিত্রকলা এবং ভাস্কর্যের প্রতিলিপি মণ্ডপে হাজির করেছে তারা। গোটা মণ্ডপটাই যেন সৃষ্টির প্রতীক। সেই সৃষ্টির সঙ্গে মেলানো হয়েছে মা দুর্গাকে। মূল ভাবনা শিল্পী তরুণ দে-র। কিন্তু এখানেও তরুণবাবু একক ব্যক্তিত্ব নন। সঙ্গে রয়েছে একটা পুরো শিল্পীদল। তার মধ্যে ভবতোষ সুতারের মতো প্রতিষ্ঠিত কিংবা নির্মল মালিকের মতো উঠে আসা নতুন শিল্পীরাও রয়েছেন।
অন্য দিকে, সৌরভ-মহেন্দ্র এ বার হরিদেবপুরের ৪১ পল্লিতে সফল। গুরু-শিষ্যের যুগলবন্দি নতুন ভরসা জুগিয়েছে শহরতলির ওই পুজোর উদ্যোক্তাদের। বিভাস-সুব্রতের কাজললতার মণ্ডপ এ বার ‘অজেয় সংহতি’কে ফের নিয়ে এসেছে প্রচারের আলোয়। এক কর্মকর্তার কথায়, “আট বছর পরে ফের জুটিতে ফিরলাম আমরা। মাঝখানের আটটা বছর অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে।”
বেহালার মতিলাল গুপ্ত রোডের ‘শীতলাতলা কিশোর সঙ্ঘ’-এ ছোটবেলার বায়োস্কোপ তুলে ধরতে চেয়েছিলেন শিবু দত্ত এবং সমীর দে। জুটি বেঁধে প্রথম পুজোতেই নজর কেড়েছেন ওঁরা। দর্শনার্থীদের অনেকেরই স্মৃতি উস্কে দিয়েছে ওঁদের কাজ। গত বারের কাজকে ছাপিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে রামলালবাজারের পুজোয় ছিলেন রাজা সরকার-চঞ্চল হালদার জুটি। গত বার যোধপুর পার্ক পল্লিমঙ্গলের পুজোয় লোক টানার পরে এ বার রামলালবাজারের বৃক্ষদেবতার থিমেও নজর কেড়েছেন তাঁরা।
গত বছর কোনও পুজোয় কাজ করেননি চঞ্চল দে ও দেবনাথ রায়। এ বার তাঁরা ‘ঘরের পুজো’ নেতাজি সেবাদলে। ত্রিপুরার উনকোটি পাহাড়ের আদলে মণ্ডপ বেশ নজর কেড়েছে। লম্বা লাইনে চতুর্থী থেকেই এলাকায় যানজট। এই সাফল্যের রহস্য কী? দেবনাথের কথায়, “আমাদের সম্পর্কটা ভাইয়ের মতো। তাই একসঙ্গে কাজ করতে বোঝাপড়ার অসুবিধা হয় না।”
দমদম ১৪ পল্লি সর্বজনীনের মণ্ডপে এ বার আন্দামান গড়েছেন সঞ্জয় অধিকারী ও বাবলা গৌর। এ বার প্রথম প্রয়াসে তাঁরা আন্দামান আনতে চেয়েছিলেন দমদমে। কিন্তু ভাবনায় কোথাও যেন একটা গলদ থেকে গিয়েছে। তবে এ বারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন ওঁরা। |