পাইলটের ভুলেই কি ৩ জাহাজে ধাক্কা, কাটেনি ধন্দ |
জোয়ারের দাপট তো থাকেই। কিন্তু খিদিরপুর ডকের বাইরেই সোমবার তিন জাহাজের
সংঘর্ষের জন্য কি শুধু সেই জোয়ারই দায়ী? মঙ্গলবারেও ধোঁয়াশা কাটেনি। একটি জাহাজের স্টিয়ারিং বিকল হয়ে যাওয়াতেই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রথমে বলা হলেও এ দিন তার উল্টো মত শোনা গিয়েছে। ফলে তর্জনী এখন পাইলটদের দিকেও।
তিন জাহাজে ধাক্কা লাগল ঠিক কী কারণে?
সংঘর্ষের পরে সোমবার প্রাথমিক ভাবে বলা হয়েছিল, স্টিয়ারিং খারাপ হয়ে যাওয়ায় ‘এশিয়ান লিডার’ নামে পানামার জাহাজটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং তার জেরেই দুর্ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার কিন্তু এই ব্যাপারে ভিন্নমত শোনা গিয়েছে। কলকাতা বন্দরের তরফে এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, সোমবারেই ওই জাহাজটিকে ফের খিদিরপুর ডকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্টিয়ারিং খারাপ থাকলে তখনই তা বোঝা যেত।
তা হলে কি পাইলটের ভুলেই তিন জাহাজে
সংঘর্ষ ঘটেছে?
বন্দর সূত্রে বলা হচ্ছে, তদন্তের পরেই সেটা বোঝা যাবে। তদন্ত শেষ হতে দিন সাতেক সময় লাগবে। জাহাজের পাইলটদের বক্তব্য এখনও শোনাই হয়নি। ওই পাইলটেরা কলকাতা বন্দরেরই অফিসার। তা ছাড়া বিমা সংস্থার তরফেও জাহাজগুলির ক্ষয়ক্ষতি যাচাই করার কাজ মঙ্গলবার শেষ হয়নি। |
বছরখানেক আগে ডায়মন্ড হারবারের কাছে হুগলি পয়েন্টে দু’টি জাহাজের সংঘর্ষের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে প্রায় এক মাস লেগে গিয়েছিল। খিদিরপুরে তিন জাহাজের বেনজির সংঘর্ষের পরে সেখানে স্বাভাবিকতা ফিরতেও যে দেরি হবে, এ দিন সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কারণ, কমবেশি ক্ষতি হয়েছে তিনটি জাহাজেরই। তাই ধাক্কাধাক্কির জের মঙ্গলবারেও চলে পুরোদমে।
ক্ষয়ক্ষতির পুরো খতিয়ান মেলেনি। তবে জোয়ারের দাপটে নোঙর তোলা একটি জাহাজের ধাক্কা খেয়ে সিঙ্গাপুরের ‘ম্যান্ডেনা’ নামে জাহাজটির ক্রেন ভেঙে গিয়েছে। এবং সেই ক্রেনের একাংশ নদীর জলে পড়েই রয়েছে। বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে ভাসমান ক্রেন এনে ওই ক্রেনের ভাঙা অংশ জল থেকে না-তোলা পর্যন্ত মেরামতির জন্য জাহাজটিকে ডকে ঢোকানো যাচ্ছে না। পুজোর ছুটিছাটার জন্য মঙ্গলবার ক্রেন জোগাড় করা যায়নি। আজ, বুধবার ক্রেন সংগ্রহের কাজটা সেরে ফেলা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১০ সালের নভেম্বরে হুগলি পয়েন্টে অন্য জাহাজের ধাক্কায় হেলে পড়া ‘টাইগার স্প্রিং’ নামে একটি জাহাজের কন্টেনার নামানোর জন্য সিঙ্গাপুর থেকে বড় ক্রেন আনাতে হয়েছিল।
খিদিরপুরে সোমবারের দুর্ঘটনায় অন্য দুই ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের মধ্যে মালয়েশিয়ার জাহাজ ‘সাইপ্যান ভয়েজার’-এর ডেকের উপরের অন্তত দু’টি কন্টেনারের বাইরের অংশ ভেঙে গিয়েছে। তবে সেগুলির ভিতরকার যন্ত্রপাতি অক্ষত আছে বলেই মনে করা হচ্ছে। যে-জাহাজটি অন্য দু’টি জাহাজকে ধাক্কা মেরেছিল, সেই এশিয়ান লিডারেরও ক্ষতি হয়েছে। তবে তার ক্ষতি অন্য দু’টি জাহাজের তুলনায় অনেকটাই কম। এশিয়ান লিডারের বাইরের খোলের কিছু অংশ তুবড়ে গিয়েছে।
বন্দরকর্তারা অবশ্য বলেন, এমনিতে তিনটি জাহাজই এখন সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার অবস্থায় আছে। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি যা হয়েছে, তার মেরামতি খিদিরপুর ডকে হবে, নাকি অন্য কোনও বন্দরে, এ দিন তা জানা যায়নি। বন্দরের যে-সব আধিকারিক দুর্ঘটনার তদন্ত করছেন, তাঁরা তিন জাহাজেরই ক্যাপ্টেন ও নাবিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। |