প্লাস্টিকের জিনিসের দাপটে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন গ্রামের কুটিরশিল্পীরা। পেটের তাগিদে তাঁদের অনেকেই দিনমজুরি করছেন। ওই সব শিল্পীদের উৎসাহ দিতে কুটিরশিল্পজাত সামগ্রী দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছে ময়ূরেশ্বর থানা এলাকার ছোটডিবুর জয় দুর্গা সঙ্ঘ। তবে কোনও পেশাদার মণ্ডপশিল্পীর সাহায্যে নয়, উদ্যোক্তারা কুটিরশিল্পীদের সঙ্গে মাসখানেক ধরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তৈরি করেছেন ওই সুদৃশ্য মণ্ডপ।
ছোটডিবুর একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। ওই গ্রাম লাগোয়া উঁচপুর, নারায়ণপুর-সহ বেশ কিছু গ্রামের অনেক পরিবারেরই দীর্ঘ দিনের পেশা ছিল বাঁশ, বেত, তাল কিংবা খেজুর পাতার জিনিস তৈরি করা। কিন্তু বাজার প্লাস্টিকের দখলে চলে যাওয়ায় ওই সব শিল্পী পরিবারগুলির বর্তমান প্রজন্ম বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পেশা বদলে তাঁদের মধ্যে কেউ দিনমজুর হয়ে গিয়েছেন। কেউ বা টানছেন রিকশা। জয় দুর্গা সঙ্ঘের পুজো উদ্যোক্তারা জানান, সনাতন সেই লোকশিল্পের ধারা যাতে হারিয়ে না যায়, সেই উদ্দেশ্যেই তাঁরা বাঁশ, বেতের জিনিস দিয়ে এ বার মণ্ডপ গড়েছেন। তাঁদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন এক সময়ে বাঁশ-বেতের শিল্পকর্ম গড়ায় অভ্যস্ত শিল্পীরাও। |
বছর কয়েক আগেও বাঁশ-বেতের জিনিস তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন দুর্গা কোল, ছোটু মহালি, শ্যামল দাসেরা। টানা এক মাস ধরে তাঁরা শিক্ষক মানস সরকার, ব্যাঙ্ককর্মী উত্তম মণ্ডলদের সঙ্গে কার্যত দিনরাত এক করে বানিয়েছেন আকর্ষণীয় পুজো-মণ্ডপ। পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে পেরে তৃপ্তির হাসি শিল্পীদের মুখে। তাঁদের স্বীকারোক্তি, “আমাদের তৈরি জিনিস দিয়ে যে এমন একটা মণ্ডপ গড়া যেতে পারে, তা কখনই ভাবতে পারিনি।” পক্ষান্তরে পুজো কমিটির সম্পাদক দেবাশিস দাস বললেন, “দীর্ঘ দিন ধরেই আমাদের পরিকল্পনা ছিল একটি আকর্ষণীয় মণ্ডপ তৈরি করার। কিন্তু যা চাঁদা ওঠে তাতে বিশেষজ্ঞ মণ্ডপ-শিল্পীকে বরাত দেওয়া সম্ভব নয়। তখনই স্থানীয় বাঁশ-বেত শিল্পীদের সামিল করে মণ্ডপ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।” পুজো কমিটির সভাপতি বিজয় ভল্লার বক্তব্য, “আমাদের মনে হয়েছে, এই ভাবে মণ্ডপ গড়া হলে বাঁশ-বেত শিল্পীরা উৎসাহিত হবেন। আমাদের দেখাদেখি অন্য পুজোয় যদি এই ধারার মণ্ডপ নির্মাণ শুরু হয়, তা হলে ওই কুটিরশিল্পীরা আরও কাজ পাবেন। কাজের চাহিদা বাড়লে, ক্রমশ ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন ওঁরা।”
স্থানীয় বাসিন্দা তথা ষাটপলশা পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জয় ভল্লা বলেন, “পুজো-মণ্ডপে বাঁশ-বেতের জিনিস ব্যবহার করার ভাবনা অবশ্যই অভিনব। নিজেদের হাতে গড়া জিনিস দিয়ে মণ্ডপ সাজানোর কাজ করে অবলুপ্তপ্রায় কুটিরশিল্প বাঁচিয়ে রাখায় উজ্জীবিত হবেন শিল্পীরা। এ ধরনের কাজের চাহিদা বাড়লে তাঁরা নিজেদের পেশায় টিঁকে থাকতে পারবেন। পঞ্চায়েতের তরফে ওই শিল্পীদের তাঁদের পেশায় টিঁকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হবে।” |