রায় ও সিংহ পরিবারের পুজো আজও
সমান আকর্ষণীয় সাঁইথিয়াবাসীর কাছে
সাঁইথিয়ার অন্যতম প্রাচীন পুজো ছত্রিপাড়ার রায় ও সিংহ পরিবারের পুজো। যে সময়ে এই পুজোর সূচনা, তখন সতীপীঠ নন্দীকেশ্বরীর নামানুসারে এ শহরের নাম ছিল নন্দীপুর। স্থানীয় মানুষ পুজোপাঠ করতেন নন্দীকেশ্বরী মন্দিরে। পরবর্তীকালে নন্দীপুর হয়েছে সাঁইথিয়া। সময়ের সাথে দুর্গাপুজোর সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। কিন্তু রায় ও সিংহ পরিবারের পুজো আজও এই শহরের মানুষের কাছে সমান আকর্ষণীয়। আর তা হবে নাই বা কেন? এই পুজোর সঙ্গে যে জড়িয়ে আছে নানা কাহিনি। আদতে রায় পরিবারের হাত ধরে এই পুজোর সূচনা হলেও পরবর্তীকালে বৈবাহিক সূত্রে সিংহ পরিবারও এই পুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে পড়েন। দুই পরিবারেরই দাবি, এই পুজোই সাঁইথিয়ার সবচেয়ে পুরনো।
ছবি: অনির্বাণ সেন।
জনশ্রুতি ও পরিবারের বর্তমান সদস্যদের দাবি, উত্তরপ্রদেশ থেকে বিহারের মুঙ্গের হয়ে নন্দীপুরে বাণিজ্য করতে আসা কৃষ্ণচন্দ্র রায় ১৬৮১ সালে কিশোরীরূপী দুর্গাপুর স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজোর প্রচলন করেছিলেন। সেই থেকে রায় পরিবারে পুজো হয়ে আসছে। সাঁইথিয়া স্টেশন থেকে পুরসভা যেতে বাঁ হাতে ছত্রিপাড়া। প্রধান রাস্তা ছেড়ে ছত্রিপাড়ার রাস্তায় সামান্য এগোতেই রায় ও সিংহ পরিবারের দুর্গামন্দির। নামে পারিবারিক হলেও রায় ও সিংহ পরিবারের পুজো আজ সর্বজনীনের রূপ নিয়েছে। পুজোর ক’টি দিন গোটা পাড়ার লোক ভিড় করেন এখানে। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দাদের কথায়, “কৃষ্ণচন্দ্র রায় বাইরের লোক ছিলেন। প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে ব্যবসার জন্য এখানে এসে বসবাস শুরু করেন। গরমের সময় এক জ্যোৎস্না রাতে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির কাছে এসে তিনি দেখেন, সামনে ফাঁকা মাঠে একটি বটগাছের নীচে এক কিশোরী মাটি নিয়ে খেলা করছে। কৃষ্ণচন্দ্রবাবু ব্যবসার জিনিসপত্র বাড়িতে রেখে ফের বাইরে এসে দেখেন মেয়েটি নেই। ওই রাতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে মনখারাপ করে রাতে শুয়ে পড়েন তিনি। সেই রাতেই দেবী স্বপ্নে দেখা দেন কৃষ্ণচন্দ্রকে। বলেন, সাধ্যমতো একটা ঘর করে দিতে। তিনি সেখানেই থাকবেন।”
বর্তমানে পরিবারের অন্যতম সদস্য প্রহ্লাদ রায়, দেবাশিস রায়, প্রবীর রায়রা বললেন, “দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে কৃষ্ণচন্দ্র তালপাতা ঘেরা একটি ছোট ঘর তৈরি করেন। ওই বছরই পুজোর সূচনাও করেন। পরবর্তীকালে সেখানে মাটির দেবী-মন্দির তৈরি হয়। বছর তিরিশেক আগে তৈরি হয় পাকা মন্দির।” বর্তমানে পুজোটি চার শরিক মিলে চালান। তিন শরিক রায় পরিবারের। এক শরিক সিংহ পরিবারের।
অনেক বছর আগে রায় পরিবারের মেয়ে আঙুরবালাদেবীর বিয়ে হয় প্রতিবেশী সিংহ পরিবারে। সেই সূত্রে সিংহ বাড়ির সদস্যেরাও রায়বাড়ির পুজোয় সক্রিয় অংশীদার হয়ে ওঠেন। আঙুরবালাদেবীর ছেলে করালি সিংহ বললেন, “প্রতি তিন বছর অন্তর এক এক শরিকের উপরে পুজোর দায়িত্ব পড়ে।”
আজও শতাব্দী প্রাচীন আচার-বিধি মেনেই পুজো করা হয়। পঞ্চমীতে দেবী বেদিতে প্রতিষ্ঠিত হন। সপ্তমীতে ঘট ভরা, চালকুমড়ো বলি, সন্ধি ও নবমীতে ছাগবলি দেওয়া হয়। দশমীর সকালে ঘট বিসর্জনের পরে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। লোকাভাব ও আরও নানা কারণে এখন গাড়িতে করেই বিসর্জনপর্ব সারা হয়। তার আগে পরিবারের প্রাচীন প্রথা মেনে সতীপীঠ নন্দীকেশ্বরী মন্দিরের সামনে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.