মানুষের মধ্যেই রয়েছেন ভগবান।
এ কথা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে ওরা।
তাই মণ্ডপ দেবীদুর্গার পাশাপাশি পুজো হয় শিশুদেরও। কেউ সাজে দুর্গা, কেউ সাজে কার্তিক আবার কেউ অসুর। পূর্বস্থলীর বিদ্যানগর গ্রামে শিশুমেলা পুজো কমিটির পুজোয় অষ্টমীর সকালে দেখা যায় এই দৃশ্য।
এই পুজোয় শিশু-কিশোরেরা মূল উদ্যোক্তা। উৎসবের দিনগুলিতে বড়রা শুধু পাশে থেকে ওদের সাহায্য করে। পুজোর প্রায় মাসখানেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি। তার আগে বড়কোবলা, ছোটকোবলা, শ্রীরামপুর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের শিশুরা একত্রিত হয়ে বৈঠক করে নেয়। মণ্ডপ চত্বর ঝকঝকে তকতকে করার পরে খুদেরা মণ্ডপের বাইরের পাঁচিলে রং-তুলি দিয়ে আঁকে নানা চিত্র। প্রতিমা শিল্পীকে তাগাদা দিতে কেউ কেউ আবার ছুটে যায় কুমোরবাড়িতে। এরই মাঝে ওরা সেরে নেয় নিমন্ত্রণ পর্ব। রাস্তায় বড়দের দেখলেই বলে, “ও কাকু, আমাদের পুজোয় আসবে তো?”
ষষ্ঠীর বিকেলে প্রায় ৮০০ জন শিশু-কিশোর পরিচালিত এই পুজোর উদ্বোধন করল শুভঙ্কর-রাজু। যারা দিন কয়েক আগে নসিপুরে রেললাইনে ফাটল দেখে আটকেছিল ট্রেন। রুখে দিয়েছিল দুর্ঘটনা।
পুজোর চার দিন মণ্ডপ ছেড়ে কোথাও যায় না শিশুরা। রীতি মেনে সপ্তমীর সকালে মণ্ডপে এসে প্রথমেই নখ আর চুল কেটে নেয়। এর পরেই গরিব পরিবারের শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন পোশাক। আয়োজন করা হয় সিনেমা-শো, ঘোড়া নাচ-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। দশমীর রাতে থাকে আতসবাজির প্রদর্শনী।
পুজো কমিটির সদস্য অমিত ওরাওয়ের কথায়, “পুজোর ক’দিন বইয়ের সঙ্গে কোনও সম্পর্কই থাকে না। সারা বছর আমরা এই ক’টা দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকি।” তার কথায়, “গুরুজনেরা শিক্ষা দেয়, মানুষই ভগবান। তাই আমরা এ বার আমাদেরই কয়েক জন সহপাঠীর পুজো করা হবে।”
উদ্যোক্তাদের দাবি, পুজোর জন্য সাধ্যমতো চাল-আলু, পোশাক-সহ নানা জিনিস দিয়ে বড়রা সাহায্য করেন। এ বার পুজোর উদ্বোধনে ছিলেন কালনার শিল্পপতি সুশীল মিশ্র। তাঁর কথায়, “এত শিশু-কিশোর প্রাণখোলা আনন্দে মেতেছে দেখে ভাল লাগছে। আমি ওদের পাশে থাকব।” |