গোটা বছর ব্যস্ততা থাকুক ক্ষতি নেই। পুজোর ক’দিন কিন্তু সব বাদ।
ওই ক’দিন নিজেদের গণ্ডি ছেড়ে বেরোতে নারাজ আসানসোলের নব অনন্যা সরকারি আবাসনের বাসিন্দারা। সকাল থেকে রাত পুরো সময়টাই কেটে যায় আবাসনের পুজো মণ্ডপে। যারা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন, তাঁরাও বাড়ি ফিরে আসেন। সব মিলিয়ে নিজেদের একটা আলাদা জগতই তৈরি করে ফেলেন বাসিন্দারা।
২০০৫ সালে আসানসোলের কল্যাণপুরে এই সরকারি আবাসনটি তৈরি হয়। সেই বছর থেকেই শুরু হয়েছে পুজো। এই আবাসন সোসাইটির সভাপতি তথা প্রথম আবাসিক প্রদীপকুমার সরকার জানান, প্রথম বছর তিরিশটি পরিবার নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে পুজো শুরু করেন। পুজো শুরুর পিছনে একাধিক কারণও ছিল। যেমন বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন আবাসিকেরা। উৎসবের এই দিনগুলোতে নিজেদের মধ্যে আত্মীয়তা বাড়াতেই এই পুজোর সূচনা হয়। এখন প্রায় ১৯০টি পরিবার রয়েছে। এই পুজো ঘিরে উন্মাদনাও দিনে দিনে বেড়েছে। |
এই আবাসন সোসাইটির সম্পাদক দেবদাস মাহাতো জানান, পুজোকে ঘিরে বাহ্যিক আড়ম্বর না থাকলেও অদ্ভূত এক প্রাণশক্তি রয়েছে। পুরুষ-মহিলা, শিশু-কিশোর, নবীন-প্রবীণ নির্বিশেষে সকলেই উৎসবে সামিল হন। খাওয়া-দাওয়া থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এই ক’দিন কোনও কিছুই বাদ যায় না।
সকাল থেকে সন্ধে মণ্ডপটা গমগম করে। খুব মজা হয়। জানালেন অন্য এক আবাসিক সোমা রুদ্র। তাঁর কথায়, “দোলা আনা থেকে বিসর্জন এক মুহূর্তের জন্যেও মণ্ডপ ছেড়ে যান না কেউ। মণ্ডপটাই যেন অস্থায়ী ঠিকানা হয়ে যায়।”
পুজোর বেশ কিছু দিন আগে থেকেই স্থানীয় কমিউনিটি হলে শুরু হয়ে যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া। দিন-রাত এক করে কুশিলবরা ঝাঁপিয়ে পড়েন। জানা গিয়েছে, এ বার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সব দায়িত্ব মহিলাদের দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানের বিষয়টি একা হাতে সামলাচ্ছেন কেকা ভট্টাচার্য। তিনি জানান, গান আর নৃত্যের অনুষ্ঠান তো রয়েছেই। থাকছে নাটক, গীতি-আলেখ্যও। “আসছে আসছেই ভাল ছিল।” বললেন মুনমুন চট্টোপাধ্যায়। “মাঝে আর মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা। ভাবলেই চোখে জল এসে যায়।” নন্দা কর্মকারের গলায় হতাশ সুর।
খুশির হাওয়া ভারি করে দিল আসন্ন বিসর্জনের বেদনা। |