পুজো শুরু হয়েছে বছর চারেক। কিন্তু সেই পুজোর এতই টান, যে বাড়ি বা গ্রামের পুজোয় যাওয়ার সময়ও পাচ্ছেন না বর্ধমানের রামকৃষ্ণ রোডের শৈলক অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দারা।
বর্ধমানের এক চিকিৎসক শৈলেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাগান কেটে তৈরি হয়েছিল এই আবাসন। চিকিৎসকের পৌত্র অর্ণব মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুজো সাদামাটা হলেও, আমাদের ২৯টি পরিবারের কাছে এই পাঁচ দিন হল পরস্পরের সঙ্গে সময় কাটানোর দিন। পুজো মণ্ডপে বসে অঞ্জলি থেকে চণ্ডীপাঠ সমস্ত শুনি আমরা। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত চলে তিন বেলা খাওয়া দাওয়া। প্রতি দিনের জন্য ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ আর ডিনারের জন্য পরিবার পিছু দিতে হয়েছে মাত্র একশো টাকা।” |
পুজোর মেনু পৌছে গিয়েছে আবাসনের ফ্ল্যাটে-ফ্ল্যাটে। সপ্তমীর সকালে ছিল লুচি, আলুরদম আর মিহিদানা। দুপুরে ভাত, মুগের ডাল, মিক্সড ভেজ, মাছের কালিয়া আর চাটনি। রাতে ভেজ ফ্রায়েড রাইস, চিকেন কষা ও স্যালাড। এমনি করে প্রতিটি পুজোর দিনে রকমারি খাবারের তালিকা। কাল দশমীর সকালে হবে কচুরি, ঘুগনি আর সন্দেশ। দুপুরে থাকবে ভাত, আলুভাজা, মুগের ডাল, ছ্যাচড়া এবং ইলিশ। রাতে থাকবে মটন বিরিয়ানি, স্যালাড, বুরানি আর আইসক্রিম। সব মিলিয়ে যেন ভূতের রাজার বরে মহাভোজ!
একদা রাঁচির বাসিন্দা প্রবীর নন্দী এখন এখানেই থাকেন। আছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা অসিতাভ রায় মহাপাত্রও। দু’জনেই বললেন, “প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে এমন যোগাযোগ গড়ে উঠেছে যে এই পুজো ছেড়ে যেতে মন চায় না।” গলসির এক সময়ের বাসিন্দা লীনা সাঁই বলেন, “এত কাছে আমার শ্বশুরবাড়ি। তবু পুজোর সময় মনে হয়, এই আবাসনেই পড়ে থাকি। এতে আত্মীয়েরা খুবই ক্ষুব্ধ হন। আমার তবু আবাসন ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না।”
শৈলক আবাসনের পুজো কাছে টেনে নিয়েছে নাজেস নৌরোজ ও মহম্মদ সাহিনের মতো আবাসিকদেরও। তাঁদের দাবি, “এই উৎসবে কখন যে মিশে গিয়েছি, তা টেরও পাইনি। এখন পুজোর দিনগুলোতে আমরাও সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমস্ত কাজকর্ম করি।”
বিদায়ের বাঁশি বেজে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ফাঁকে ফাঁকে এখনই শুরু হয়ে গিয়েছে পরের বছরের পরিকল্পনা। কী হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে? আসছে বছরের মেনু-ই বা কী হবে? |