বর্ধমানের প্রত্যন্ত এলাকায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পুজোয় কুমারটুলি থেকে আনা হচ্ছে প্রতিমা। এ কথা শুনে অবিশ্বাস করতে পারেন অনেকেই। কিন্তু বুদবুদ অ্যামুনিশন রোডের ছাত্র সমিতির পুজো দেখতে গেলে অবশ্য তাঁদের বিশ্বাস করতেই হবে। জেলার বেশ কিছু পারিবারিক পুজোতেও খোঁজ নিলে মেলে এমনই বেশ কিছু চমকপ্রদ রেওয়াজ। কোথাও দুর্গার সঙ্গে ছেলে-মেয়েরা নেই, কোথাও বা আবার শিব-দুর্গার সঙ্গে সন্তান-সন্ততি থাকলেও অসুর ও সিংহ নেই। জাঁকজমক না থাকলেও ঐতিহ্যে অমলিন এই সব পুজো। |
মানকরের মুখোপাধ্যায় বাড়ির প্রতিমায় দুর্গা, অসুর ও সিংহের মূর্তি রয়েছে। প্রায় আড়াইশো বছর ধরে এই পুজো চলে আসছে বলে দাবি বাড়ির সদস্যদের। সরকার পরিবারে আবার শিব ও দুর্গার সঙ্গে গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কার্তিক থাকলেও অসুর ও সিংহ থাকে না। শিব ও দুর্গা বসেন ষাঁড়ের পিঠে। শতাব্দী প্রাচীন খাঁ পরিবারে আবার শুধুমাত্র দেবীর মুখমণ্ডল পূজিত হয়। ভিড়সিন গ্রামের মুখোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো তিনশো বছরের বেশি পুরনো, জানান প্রবীণেরা। এখানে দুর্গার চার হাত। ভুবনেশ্বরীদেবী রূপে তিনি পূজিত হন। অষ্টমীতে কুমড়ো বলি ও নবমীতে আখ বলি দেওয়া হয়। মানকর গ্রামের কর পরিবার প্রতিষ্ঠিত পুজো এখন সর্বজনীন। আর্থিক কারণে এক সময়ে এই পারিবারিক পুজোটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন এগিয়ে আসেন পাড়ার বাসিন্দারা। তখন থেকে এই পুজো সর্বজনীন।
এলাকার সর্বজনীন পুজোগুলির মধ্যে সাড়া ফেলেছে সুকডাল মোড়ের সংহতি, মহাকালী হাইস্কুলের মাঠে ঝঙ্কারের পুজো, সুকান্তনগরের অগ্নিবীণা, বুদবুদ গ্রামের আমরা ক’জন, বুদবুদ বাজার ব্যবসায়ী সমিতি বা বিপিনপুরের নবোদয়ের পুজো। অধিকাংশেরই মণ্ডপ গড়া হয়েছে কাল্পনিক মন্দির বা সাবেকি রাজবাড়ির আদলে। সঙ্গে মানানসই আলোকসজ্জা। গত বার বুদবুদ গ্রামের আমরা ক’জন পুজো কমিটি চন্দননগর থেকে আলো এনেছিল। আশপাশের এলাকার বহু বাসিন্দা রাতে তা দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন।
বুদবুদ বাজারের ব্যবসায়ী প্রশান্ত দাস জানান, আগে দুর্গাপুজো মানেই বাসিন্দারা ছুটতেন দুর্গাপুর বা বর্ধমানে। পুজো দেখে গভীর রাতে ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরতেন। এখন আর সে দিন নেই। আশ মিটিয়ে এলাকার বাসিন্দারা পুজো দেখেন গ্রামেই। শহরের পুজোর মতো অত বাজেট হয়তো নেই। কিন্তু আন্তরিকতায় ঢেকে যায় ত্রুটি। |