চালকুমড়ো ছুড়ে খেলা বড় আকর্ষণ খান্দরায়
মাটির জলাধারে বসানো থাকে সূক্ষ্য ছিদ্র থাকা তামার বাটি। সেই তামার বাটি ডুবে গেলেই শুরু হয় অষ্টমীর বলিদান পর্ব। গত ৪৮২ বছর ধরে এমন রীতিই চলে আসছে পাণ্ডবেশ্বরের কুমারডি গ্রামের রায়চৌধুরী পরিবারে।
রায়চৌধুরী বাড়ির সদস্যেরা জানান, বর্ধমানের রাজা রাজবল্লভ রায় স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই গ্রামে পুজো শুরু করেন। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর দিন ছাড়াও দশমীতে বলির রেওয়াজ আছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজো শুরুর বেশ কিছু দিন পরে ভাইদের মধ্যে গণ্ডগোল হওয়ায় রায়চৌধুরীদের অন্য একটি পুজো শুরু হয়। তবে দুই বাড়ির একই রীতিতে পুজো হয়। রায়চৌধুরীদের আত্মীয় মুখোপাধ্যায় ও চট্টোপাধ্যায়রা মিলে এই গ্রামেই একটি পুজো শুরু করেন প্রায় দু’শো বছর আগে। এ ছাড়াও এই গ্রামে বন্দ্যোপাধ্যায় ও চক্রবর্তী বাড়ির পুজোগুলি প্রায় দু’শো বছরের পুরনো। রায়চৌধুরী বাড়ির দু’টি পুজো ‘বড় মা’ এবং ‘মেজো মা’, চট্টোপাধ্যায় ও মুখোপাধ্যায় পরিবারের পুজোটি ‘ছোট মা’ নামে পরিচিত। বোধনের দিন জ্বালানো প্রদীপ পনেরো দিন আগলে রাখা হয়। পরিবারের সদস্য কল্যাণ রায়চৌধুরী জানান, কোনও এক বার প্রদীপ নিভে যাওয়ায় অমঙ্গল হয়েছিল। তাই এ ব্যাপারে সজাগ থাকা হয়। দশমীর দিন রায়চৌধুরীদের পুজোয় কুমারীপুজোরও আয়োজন হয়।
অন্ডালের খান্দরা সরকার বাড়িতে চলছে পুজো। ছবি তুলেছেন ওমপ্রকাশ সিংহ।
অন্ডালের খান্দরা গ্রামে সরকার বাড়ির পুজো প্রায় সাড়ে চারশো বছরের পুরনো। বাড়ির প্রবীণ সদস্য সাধনচন্দ্র সরকার জানান, তাঁদের এক পূর্বপুরুষ মুর্শিদাবাদের পাঁচথুপি থেকে বন্যার ভয়ে অন্ডালে চলে আসেন। বাড়ি থেকে আট ইঞ্চি লম্বা অষ্টধাতুর সিংহবাহিনী নিয়ে আসেন তিনি। দেবীকে এখানে প্রতিষ্ঠা করে নিত্যপুজোর আয়োজন হয়। দুর্গাপুজোর সময়ে অষ্টধাতুর পাশাপাশি মূর্তি গড়েও পুজো হয়। মাটির প্রতিমা বিসর্জন হয় দশমীতেই। তবে পারিবারিক রেওয়াজ মেনে, মহালয়ার পরের মঙ্গলবার থেকে ষোলো দিন প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়। ষোলো দিনের মাথায় আখহাঁড়িতে জল নিয়ে ঘাটে যান বাড়ির মহিলারা। তখন চাকা লাগানো দু’টি নৌকা নিয়ে যাওয়া হয় পুকুরে। চালকুমড়ো ছুড়ে খেলা হয়। পুরোহিত একটি সুতো মন্দিরে বেঁধে সেটি বিভিন্ন খুঁটিতে বেঁধে পুকুরে যান ও একই ভাবে মন্দিরে ফিরে আসেন। তার পরে হোমযজ্ঞের মধ্যে দিয়ে পুজো শেষ হয়। এই গ্রামেই আর এক সরকার পরিবারের পুজো হয়। সেটি ‘মায়ত্বস্থান’ নামে পরিচিত। এ ছাড়া গ্রামে বক্সি বাড়ির ‘খ্যাপা মা’ প্রসিদ্ধ। মন্দিরের রীতি, ডাকের সাজে দেবীকে সাজানো যাবে না। এখানে দেবীর কাছে ঢাক মানত করেন মানুষজন। পরিবারের সদস্য গৌতম বক্সি জানান, এর ফলে বাড়িতে প্রায় একশো ঢাক জমে রয়েছে। দেবীর আটটি হাত ছোট, দু’টি হাত বড়। মন্দিরের মেঝে মাটির তৈরি। এই গ্রামে বন্দ্যোপাধ্যায়, চক্রবর্তী, ঘোষ, মণ্ডল ও রায় বাড়ির পুজো মিলিয়ে মোট ১৩টি পুজো হয়।
উখড়ায় চক্রবর্তী বাড়ির পুজো ৩১২ বছরের পুরনো। বাড়ির সদস্য আনন্দ চক্রবর্তী জানান, পূর্বপুরুষ ক্ষুদিরাম চক্রবর্তী পুজো শুরু করেন। জনশ্রুতি, এক বার গ্রামের মুখোপাধ্যায় বাড়ির সদস্যেরা নবমীতে পুজো দিতে কল্যাণেশ্বরী যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, বলিদান শেষ। ফেরার সময়ে উখড়ার চক্রবর্তী বাড়িতে গিয়ে বলিদানের আদেশ পান। সেই থেকে এই পুজো ‘ছোট কল্যাণেশ্বরী’ নামে পরিচিত। অন্ডালের দীর্ঘনালা গ্রামে মণ্ডলদের দু’টি পুজো ‘বড় মা’ ও ‘ছোট মা’ নামে পরিচিত। কুণ্ডুদের পুজো ‘মেজ মা’ বলে খ্যাত। প্রতিটি পুজোই তিনশো বছর অতিক্রান্ত। এলাকার বাসিন্দা সন্তোষ ধীবর নিজে হাতে মূর্তি গড়ে পুজো শুরু করেন আট বছর আগে। প্রথম পাঁচ বছর নিজেই পুজো করতেন। গত দু’বছর বাইরে থেকে মূর্তি আনছেন তিনি। সন্তোষবাবু বলেন, “শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিন বছর নিজে পুজো করতে পারছি না।”
জামুড়িয়ার চিচুড়িয়ায় চক্রবর্তী বাড়ির পুজো প্রায় দু’শো বছরের পুরনো। বাড়ির সদস্য গৌতম চক্রবর্তী জানান, গ্রামে কোনও পুজো না থাকায় এক পূর্বপুরুষ পুজো শুরু করেন। পরে গ্রামে চক্রবর্তী, চট্টোপাধ্যায়, কুণ্ডু, ভট্টাচার্য, উকিলবাড়ির পুজো-সহ মোট সাতটি পুজো শুরু হয়। পরিহারপুরের গঙ্গোপাধ্যায় এবং ঘটক বাড়ির পুজো দু’শো বছর অতিক্রান্ত।
নিজস্ব নানা রীতি নিয়ে অমলিন এই সব বাড়ির পুজো।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.