এ এক অচেনা রূপ! নেই নানা অস্ত্রে সজ্জিত দেবীর যুদ্ধংদেহি মূর্তি। যাঁর হাতের ত্রিশূল মহিষাসুরের বুক বিদীর্ণ করছে। মহিষাসুর দমনের বদলে যোগনিদ্রায় মগ্ন দেবী। ত্রিনয়নী ধ্যানরতা হয়ে বসে রয়েছেন বাহনের পিঠে। একটি নয় তিনটি সিংহ। দেবীর দশ হাতে অস্ত্র সম্ভার নেই। দু’দিকে দুই অসুর। তারাও প্রার্থনারত। আরাধনা করছে দেবীরই। দেবীর মাথার উপরে সার দিয়ে দেবদেবীরা। তাঁরা আশীর্বাদ করছেন। মণ্ডপে স্নিগ্ধ আলোকে মায়াময় হয়ে উঠছে দেবীর উপাসনা। ছন, পাট, খড়ের ছাওয়া ঘরে তিনি ধ্যানরতা। রেনেঁসা ক্লাবে এটাই থিম। দেবী মূর্তিতে চমক আনতে নতুন কিছু করার চেষ্টা বরাবরই করেন এই ক্লাবের কর্মকর্তারা। আগে যামিনী রায়ের ছবির আদলে দেবী মূর্তি গড়ে নজরও কেড়েছেন। গ্রিসের দেবদেবীর আদলেও মূর্তি করেছিলেন। এ বার অন্য রকম এই মূর্তি। শান্ত, শিব, সুন্দর। শিলিগুড়ি কুমোরটুলির গণেশ পাল তৈরি করছেন মূর্তিটি। দেবী দুর্গা যেমন বাহন সিংহের উপরে বসে তেমনই গণেশকে দেখা যাবে ইঁদুরের উপর চড়ে। পদ্মে বসে আছেন লক্ষ্মী। হাঁসে এবং ময়ূরে বসে সরস্বতী, কার্তিক। দেবীর হাতে কোনও অস্ত্র নেই। গণেশ কার্তিকের হাতেও গদা, চক্র, তির ধনুকের বালাই নেই। ক্লাবের পুজো কমিটির অন্যতম ভাস্কর সরকার বলেন, “ধ্যানময়ী দেবীর এই মূর্তিই এ বার আমাদের পূজোর থিম। গ্রাম বাংলার ছোঁয়া থাকছে মণ্ডপে। সব মিলিয়ে বাংলার সংস্কৃতির একটা দিক তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি দর্শকদের ভাল লাগবে।” গ্রাম বাংলার আটপৌড়ে জীবনের ব্যবহার হওয়া পাটি, বাঁশ, খড় এ সব দিয়ে তৈরি হয়েছে দেবীর উপাসনা গৃহ। টুকরো করে কাটা বাঁশ পর পর সাজিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বাড়ির আদলে মণ্ডপ। চাল ছাওয়া হয়েছে খড়, ছন দিয়ে। কোথাও পাটি কেটে তৈরি করা হয়েছে দেওয়ালের অংশ। মূল ঘরটি তিনটি তলায় ভাগ করা। নিচের অংশটি বড় সেখানেই দেবী থাকছে। তার উপরে আরও দু’টি ছোট চালা। মূল ঘরের দু’ পাশে ধানের গোলার আদলে ঘর। তাতেও বাংলার সংস্কৃতির ছোঁয়া। চারদিকে বেড়া দেওয়া। ঘট দিয়ে সাজানো হয়েছে ঘর। বাঁশ দিয়ে বেড়ার মত করে তাতে টাঙানো রয়েছে পাখি, ঘুড়ি। ক্লাবের এক কর্মকর্তা জানান, পুরুলিয়ার শিল্পীরা তাদের হাতের কাজ দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়ে তুলেছেন। |