মা-মাটি-মানুষকে নিয়েই পুজোর থিম। থিম অনুসারে মণ্ডপও সাজিয়ে তোলা হয়। কিন্তু বাইরে থেকে শিল্পীদের এনে সেই কাজ করানোর পক্ষপাতী নন শিলিগুড়ির সুব্রত সঙ্ঘের কর্মকর্তারা। বরং স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে কী করা যায় সেটা ভেবে তাঁরা পরিকল্পনা করেন। তাঁদের ধারণা, বাংলার কুটির শিল্প অবহেলিত হয়ে পড়েছে। বাঁশের কাজ, বেতের কাজ এ সবের কদর কমেছে। কুলো, ঝুড়ি, পাটি যাঁরা বানান তাঁদের কাজের দাম নেই। শিলিগুড়ি নগর থেকে মহানগর হয়ে উঠছে আর ওই শিল্পীরা ব্রাত্য হতে বসেছেন। অথচ এর মধ্যেও সে উৎকর্ষ রয়েছে, এই শিল্পীদের কাজেও যে প্রাণ রয়েছে সেটাই এ বার মণ্ডপসজ্জায় তুলে ধরতে চান উদ্যোক্তারা। তালপাতা, নারকেল পাতার স্তূপ হয়েছে ক্লাবে। বাঁশ চেঁচে তৈরি হচ্ছে কয়েক হাজার কুলো ঝুড়ি, চালুনি। ক্লাবের ঘরে বসে সেই কাজ করছেন স্থানীয় শিল্পীরাই। গ্রাম বাংলার এ সব হরেক উপকরণ দিয়ে এ বার মণ্ডপসজ্জা সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। শহর এবং লাগোয়া এলাকার শিল্পীরাই সেই কাজ করছেন। কী থিম হচ্ছে গ্রাম বাংলার এই উপকরণ দিয়ে? শিল্পী এবং উদ্যোক্তারা জানালেন, পাতায় ছাওয়া ঘরে থাকবেন দেবী। তালপাতা, নারকেল, বাঁশপাতা দিয়ে তা তৈরি হবে। তৈরি করা হয়েছে গোটা পাঁচেক অতিকায় কুলো। এক একটা ৬ ফুটেরও বেশি লম্বা। তার মধ্যে মডেল তৈরি করে বসানো হবে। কোনটায় হাঁস, কোনটায় ময়ূর। শুধু বড় কুলোই নয় ছোট, মাঝারি মাপের কুলো, চালুনি তৈরি করা হয়েছে। বাঁশের চালুনি, ঝুড়ির উল্টো দিকে আইসক্রিম খাওয়ার পাতলা কাঠের চামচ দিয়ে ফুল, বাহারি নকশা করা হচ্ছে। বাঁশ কঞ্চি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ঘন্টা। পাতায় ছাওয়া ঘরে দেওয়ালে সার দিয়ে সাজানো থাকবে সেগুলি। প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকে চোখে পড়বে রবীন্দ্রনাথের মূর্তি। তৈরি হয়েছে বাঁশ, পাতা এ সব দিয়েই। মণ্ডপসজ্জার সঙ্গে মিল রেখে দশভূজাও তৈরি হচ্ছে বাঁশ দিয়ে। ক্লাবের পুজো কমিটির অন্যতম সঞ্জীব চক্রবর্তী, বিশ্বজিৎ বসুদের কথায়, “শহর বেড়ে ওঠার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে টিনের চালা বেড়ার ঘর। শহর লাগোয়া এলাকায় খড়ের চালাঘরও চোখে পড়ে না। বাঁশের ঝুড়ি, চালুনি ব্যবহারও অনেকে করেন না। বাংলার কুটির শিল্পীরা কাজ হারাচ্ছে। ওই ঐতিহ্যকে ফেরানো, ঘরের শিল্পীরা যদি কাজ দেওয়া যায় তার চেয়ে বড় কী আছে?” |