মোটর বাইকের ধাক্কায় শরীর শূন্যে লাফিয়ে ওঠার পরে পরে প্রথম মাটি ছুঁয়েছিল মাথা। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ায় শিলিগুড়ি হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তখনই রেফার করে দেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। সেখানেও চিকিৎসকেরা গুরুতর জখম ওই ব্যক্তিকে পরীক্ষা করে দেখার পরে কলকাতার পি জি হাসপাতালে রেফার করে দেন। জখম ব্যক্তি দীপক ঘোষ পেশায় সিকিউরিটি গার্ড। দুই ছেলেই পেশায় রঙ মিস্ত্রি। নিয়মিত কাজের ডাক পান না। এমন পরিবারের লোকেদের ক্ষেত্রে যেমন হয়, কলকাতায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো তো দূরের কথা, অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া জোগাড় করার সামর্থ্যও ছিল না। খবর পেয়ে এগিয়ে আসেন শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। তাঁরই উদ্যোগে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ওই ব্যক্তিকে ভর্তি করানো হয়। শনিবার সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরলেন দীপকবাবু। আর নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে রুদ্রনাথবাবু লিখিত দিয়ে এলেন, বিধায়ক ভাতার টাকা থেকে কিস্তিতে চিকিৎসার খরচ দিয়ে দেবেন তিনি।
দেশে চিকিৎসা খরচ যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তেমনই ওই অর্থ সংগ্রহের জন্য দুঃস্থদের হেনস্থার শেষ নেই। সংবাদপত্রে, টেলিভিশনের মাধ্যমে সাহায্য চেয়ে আবেদন জানানো থেকে পাড়ার ক্লাবের সাহায্য নিয়ে চাঁদা তোলা, কী না চলছে। কিন্তু নিজের প্রাপ্য ভাতার টাকা দিয়ে দুঃস্থের চিকিৎসা খরচ মেটানোর ব্যাপারে এসজেডিএ-র চেয়ারম্যানের এমন উদ্যোগে চোখের জল সামলাতে পারেননি দীপকবাবুর স্ত্রী সবিতা দেবী। তিনি বলেছেন, “মেডিক্যাল কলেজ যখন কলকাতায় রেফার করল, ভাবতেই পারিনি স্বামীকে জীবিত অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে যেতে পারব। কোথা থেকে খবর পেয়ে বিধায়ক যেভাবে এগিয়ে এসে আমার স্বামীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন তা সারা জীবন মনে রাখব।”
বিধায়কের খরচেই শনিবার ওই ব্যক্তিকে অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা হয়। এমনকী, সাত দিনের ওষুধও সঙ্গে দেওয়া হয়। পেশায় চিকিৎসক এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান বলেন, “চিকিৎসক হিসাবে একজন মরণাপন্ন রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা করাই আমার কাজ। এ ক্ষেত্রে বুঝতে পেরেছিলাম ওই পরিবারের পক্ষে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া কিংবা শিলিগুড়িতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। সেই জন্যই দায়িত্ব নিই। দীপকবাবু সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন জেনে ভাল লাগছে।”
দীপকবাবু দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন সেপ্টেম্বর মাসের ৩ তারিখে। তিন দিন পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে শিলিগুড়ির মাটিগাড়া এলাকার ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। নার্সিংহোমের চিকিৎসক তথা কর্ণধার ডব্লিউ এইচ চ্যাং বলেন, “রোগীর পরিস্থিতি খুবই জটিল ছিল। মস্তিস্কে অস্ত্রোপচারও করাতে হয়। এই ধরনের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে বিধায়ক এগিয়ে আসায় আমরা চিকিৎসায় দেরি করিনি।” সবিতা দেবীর অভিযোগ, যে দুর্ঘটনার পরে তাঁরা মোটর বাইকের নম্বর এবং চালকের নাম জানিয়ে শিলিগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।” |