|
|
|
|
|
|
|
আপনার ছেলে হয়ত একটু বেশি কল্পনাপ্রবণ |
বয়ঃসন্ধির সময় অনেক ছেলেমেয়েরই আচরণে কিছু পরিবর্তন দেখা যায় যা আপাতদৃষ্টিতে
স্বাভাবিক বলে মনে হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড় হলে এগুলি ঠিক হয়ে যায়। না হলে সে
ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জানাচ্ছেন মন-চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম |
|
আমার ১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে খুব চিন্তায় পড়ে লিখলাম। এমনিতে ও বুদ্ধিমান, পড়াশোনাতেও ভাল। পড়াশোনার সঙ্গে আঁকা ও ক্যারাটে শেখে। চেহারা একটু ভারী বলে ক্যারাটেতে দিয়েছি, সেটা ও ভালবেসেই করে। ছাড়িয়ে দেব বললে মন খারাপ হয়। ও শান্ত ও নম্র। ওকে জিজ্ঞেস করে দেখেছি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়তে অসুবিধে হচ্ছে কিনা, তা হলে বাংলা মিডিয়ামে ভর্তি করব। ও তাতেও রাজি নয়। বলে, আমার কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। আমরা ওকে কোনও কাজে চাপ দিই না, ও ওর খুশি মতোই করে সব। কিন্তু গত কয়েক মাস হল ওর ব্যবহারে এমন কিছু নির্বুদ্ধিতা প্রকাশ পাচ্ছে যে বুঝতে পারছি না কী করব। অকারণে কেমন হাসে, বইয়ের ভেতর, হাতে যেখানে পারে পেন দিয়ে হিজিবিজি আঁকে। কার সঙ্গে কী ভাবে কথা বলবে ঠিক করতে পারে না। বললেও খুব আস্তে বলে, বোঝা যায় না। ডাক্তার দেখিয়েছি, কিন্তু কোনও অসুবিধাই ধরা পড়েনি। বাড়ির আর সকলে এবং আমারও মনে হয় বয়স আন্দাজে ওর বুদ্ধিটা কম। হয়তো এটা কোনও সমস্যাই নয়। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি ওর ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা দেখা দেয়, সেই ভেবে আপনাদের পরামর্শের জন্য লিখলাম। এটা কী কারণে হচ্ছে এবং এর সমাধান কী লিখে জানালে উপকৃত হব।
তনুশ্রী ভট্টাচার্য, রানাঘাট |
|
মাকে বলছি |
আপনার চিঠি পড়ে কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না যে, আপনার ছেলের সত্যিই কোনও সমস্যা আছে। এই বয়সে ছোটরা একটু আনমনা হতেই পারে। অনেক সময় অনেক বাচ্চাই ছোটবেলা থেকে কল্পনাপ্রবণ হয়। তাদের একটু অন্যমনস্ক হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।
আপনি লিখেছেন, ছোটবেলা থেকেই ও বুদ্ধিমান এবং পড়াশোনাতেও ভাল। তবে, এখন পড়াশোনায় মনোযোগের ঘাটতি দেখছেন কি না বা স্কুলের রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে কি না সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনও উল্লেখ নেই আপনার চিঠিতে।
অনেক সময়েই দেখা যায় যে, যে সব ছেলেমেয়েরা একটু শান্ত স্বভাবের এবং একই সঙ্গে লাজুক প্রকৃতির, বয়ঃসন্ধির সময় তাদের কিছু সমস্যা হয়। সাধারণত এই সময় তারা খুব বেশি লোকজনের সঙ্গে মিশতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। কিন্তু এটা পরে বড় হলে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। তা নিয়ে কিছু চিন্তা করার নেই।
স্কুলে ওর আচরণ কেমন, সেখানে ঠিকঠাক পড়াশোনায় মনোযোগ দিচ্ছে কি না বা ওর বন্ধু-বান্ধব আছে কি না এ সব ব্যাপারে খোঁজ নিন। ওর শিক্ষিক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলুন। ও যদি ক্লাসে অমনোযোগী থাকে বা শিক্ষক কোনও প্রশ্ন করলে তা ঠিক মতো বুঝতে না পারে, তা হলে ওর বিষয়ে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে। অনেক সময় বাচ্চাদের মধ্যে ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিয়েন্সি ডিসঅর্ডার’ দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে মনোবিদের পরামর্শ অনুযায়ী কাউন্সেলিং বা কখনও কখনও মনঃ-সংযোগ বাড়ানোর জন্য ওষুধও খেতে হয়।
সাধারণ ভাবে এই বয়সের বাচ্চারা যে ভাবে মেশে, তাতে যদি খুব বেশি রকম অসুবিধা দেখা দেয় অথবা যদি দেখা যায় বাচ্চাটি সব সময়েই নিজের মধ্যে রয়েছে, তা হলে কতগুলো ব্যাপার আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন, সে কি একই কাজ করছে? এক খেলাই বারবার খেলতে চাইছে? এই ধরনের লক্ষণ দেখা গেলে তখন বাচ্চাটির ‘অটিজম’ আছে কি না সেটা পরীক্ষা করতে হবে।
|
|
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য |
তবে, আপনার চিঠি পড়ে আমার একেবারেই মনে হচ্ছে না যে আপনার ছেলের কোনও সমস্যা রয়েছে। নিজের মনে হাসা, হাতে বা বইয়ে হিজিবিজি কাটা একটি ১০ বছর বয়সের ছেলের ক্ষেত্রে খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। অনেক সময়ই বাচ্চারা টিভি-তে যে কার্টুন বা অন্য মজার অনুষ্ঠান দেখে এবং পরে সেটার কোনও মজার অংশ মনে পড়লে হাসে। হাতে পেন থাকলে পড়ার বইয়ে বা অন্য কোথাও হিজিবিজি কাটার অভ্যেস অনেকেরই অনেক বড় পর্যন্ত থাকে। এটা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।
আপনি নিজে থেকে ওর সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন। ওর কি কোনও জায়গায় মিশতে অসুবিধে হচ্ছে? হলে, কেন হচ্ছে? যেখানে ও সপ্রতিভ থাকে, সেখানকার পরিবেশের বিশেষত্ব কী, কেন ওর সেটা ভাল লাগছে, তা বোঝার চেষ্টা করুন। অনেক সময়ই ছোটরা যাদের পছন্দ করে না বা যেখানে যেতে চায় না, সেখানে নিয়ে গেলে এ ধরনের আচরণ করে। ক্যারাটে ক্লাসে বা ওর বাড়ির বাইরের অন্য পরিবেশে ও কী করে, সেটাও একটু দেখতে হবে। তবে, চিকিৎসক ওর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখেননি। আমারও কখনওই মনে হচ্ছে না যে ওর আচরণে এখনও পর্যন্ত এমন কিছু প্রকাশ পেয়েছে, যা নিয়ে আপনি দুশ্চিন্তা করবেন। এই বয়সে কিছু সমস্যা হতে পারে, তবে তা নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। |
|
তোমাকে বলছি |
তোমার ঠিক কী পরিবেশে মানিয়ে নিতে অসুবিধে হয়, সে ব্যাপারে মা’র সঙ্গে কথা বলতে পারো। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মিশতে কোনও অসুবিধা হলে সেটা নিয়েও মা-বাবার সঙ্গে আলোচনা করো। তুমি নিজে ভালবেসে ক্যারাটে শেখো। জানো নিশ্চয়ই, এই খেলায় মনোযোগ এবং ক্ষিপ্রতা দুই-ই বাড়ে। সুতরাং, পড়াশোনার ক্ষেত্রেও তোমাকে এই মনোযোগ সাহায্য করবে। তোমাকে দেখতে হবে, কোন ধরনের পরিবেশে তুমি স্বাভাবিক ভাবে থাকতে পারছ না এবং সেটা কেন। যদি তোমার আঁকতে ইচ্ছে হয়, তখন বইয়ে হিজিবিজি না করে একটা সাদা কাগজে করতে পারো। আমরা প্রত্যেকেই ছোটবেলায় বইয়ের বিভিন্ন ছবিতে ডিজাইন করতাম এবং মজাও পেতাম। তোমার বয়সে সেটা স্বাভাবিক। তবে, তুমি আস্তে আস্তে বড় হচ্ছ, তাই কিছু কিছু অভ্যাসও ছেড়ে দিতে হয়। স্কুলে কোনও সমস্যা হলে অথবা বন্ধুদের সঙ্গে কোনও সমস্যা হলেও তা নিজে চেপে না রেখে বাবা-মা’কে জানাও। ১০ বৎসর বয়সে সব সমস্যার সমাধান নিজে করা যায় না, বাবা-মা সব সময়ই তোমার পাশে আছেন। তুমি শান্ত, নম্র ও বুদ্ধিমান। লেখাপড়াতেও ভাল। তাই ছোটখাট সমস্যা কোথাও হয়ে থাকলে বড়দের বলো, দেখবে আর কোনও সমস্যা থাকবে না।
|
অনুলিখন: শুভ্রা চক্রবর্তী |
|
ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা-বাবার সমস্যা? নাকি মা-বাবাকে নিয়ে ছেলেমেয়ের সমস্যা?
পড়ার খরচ নিয়ে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা? দূরের শহরে পড়তে যাওয়ার নামে মেয়ের গায়ে
জ্বর আসা? যে মুশকিলই হোক না কেন, পরিবারের সবাই মিলেই সমাধানে পৌঁছতে হবে।
এ বার থেকে‘প্রস্তুতি’-ও কথা বলবে গোটা পরিবারের সঙ্গেই। অভিভাবকদের বা
সন্তানের যে কোনও দুশ্চিন্তার কথা আমাদের জানান (এবং জানাও)
নিজেদের সমস্যা। সুচিন্তিত উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞরা।
ইমেল: prastuti@abp.in বিষয়: Haate Haat।
অথবা, চিঠি পাঠান (এবং পাঠাও) এই ঠিকানায়:
হাতে হাত, প্রস্তুতি,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০ ০০১ |
|
|
|
|
|
|