|
|
|
|
|
|
এই সুযোগে... |
দুর্গা দিলেন ব্রহ্মাস্ত্র |
ছেলেমেয়েগুলো এত যত্ন নিয়ে, নিষ্ঠা ভরে পুজো করছে, দেবী তুষ্ট না হয়ে যান কোথা? ব্যস,
ধরিয়ে দিলেন আধুনিক কিছু অস্ত্রশস্ত্র। যাদের ইংরেজরা বলে ‘সফ্ট স্কিলস’। চিরশ্রী মজুমদার |
আজ খুব ভোর ভোর ঘুম থেকে উঠে পড়লে নাকি? কলা বউ স্নান করিয়ে এসে, এত ক্ষণে এক কাপ ধোঁওয়া ওঠা হেলথ্ ড্রিঙ্ক-এ চুমুক দিতে গিয়ে একটু কাগজ ওল্টাচ্ছ। নাকি এখন তোমার ঘড়িতে এগারোটা প্রায়? বুঝেছি, সারা রাত্তির ধরে ঠাকুর দেখেছ বোধ হয়। কোনও রকমে ব্যথাতুর শরীরটাকে টানতে টানতে ভোররাতে বিছানায়। আচ্ছা ব্যস্তবাগীশগণ, একটা চিন্তা কখনও মনে উঁকি দেয়? পুজোর ছুটিটায় কিন্তু এক দণ্ডও জিরোনোর উপায় রইল না যে। কাল ষষ্ঠীর হইহট্টগোলে রবিবারের আলসেমি পুরো ভুলে মেরে দিলে! সপ্তমীতে এ প্যান্ডেল টু ও প্যান্ডেল সব এনার্জি নিংড়ে টোটোটো। দুটোয় ঘুমোতে যাবার আগে ছ’টায় অ্যালার্ম দিতে হয়। আহা, অষ্টমী যে। যারা পুজোর জোগাড় করবে, তারা তো অক্টোবর মাসের সকাল সাড়ে ছ’টাতেই দুগ্গানাম জপতে জপতে স্নানে ঢুকবে। অন্যদেরও নিস্তার নেই। সাড়ে আটটা বাজলেই মাইক শাসাবে। ‘পল্লীবাসীবৃন্দকে জানানো হচ্ছে, দশের পল্লী সাধারণ দুর্গোৎসবে শেষ বারের মতো পুষ্পাঞ্জলি শুরু হচ্ছে। এর পরে কিন্তু আর...’. আসছি আসছি আসছি।
কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার। অত চিন্তা, অত রকমের দৌড়ঝাঁপ,কাজ-অকাজ-হুল্লোড়ে ঠাসা চব্বিশ ঘণ্টা অথচ এতটুকু ক্লান্তি, বিরক্তি, অভিযোগ কিচ্ছুটি নেই। সবটাই ভালবেসে, মহানন্দে। আর কোনও দিন সকাল পাঁচটায় উঠতে হলে প্রাণে এত খুশির তুফান ওঠে, সত্যি বলো? আসলে ওই পাঁচ দিন হরেক অভিজ্ঞতার আস্ত একটা কোলাজ। আনন্দ-হুল্লোড়ের খোলসেই মা দুর্গা কত কী শিখিয়ে দেন আমাদের! এইই রে, ছুটির দিনে ভুলিয়ে-ভালিয়ে সেই সিলেবাসে টানছি ভাবছ? আরে তুমি মজা-আনন্দই ভাবো না। আমি সেগুলো ধরেই একটু একটু করে দেখিয়ে দিই, তার মধ্যেও কত কী শেখার জিনিস লুকিয়ে আছে। পাড়ার পুজো ম্যানেজ করা থেকে, গাড়ি ভাড়া করে ঠাকুর দেখা, বন্ধুরা মিলে ফাংশনের রিহার্সাল দেওয়া সব ক’টাতেই তোমার দক্ষতাগুলো চুপচাপ ঘষামাজা হয়ে যায়। হয় হয়, Zানতি পারো না।
যেমন ধরো, যারা পাড়ার পুজোয় মারাত্মক ভাবে জড়িয়ে আছো। বড়দের সঙ্গে আঠা হয়ে গিয়ে পুজো সংগঠনের এ টু জেড পরিষ্কার বুঝে নিয়েছ। চোখ বন্ধ করলেই তো মাথায় ভেসে উঠবে নীল নকশাটা। ক’টা কমিটি, তার কয়টা সাব-কমিটি, কোন দায়িত্বে কে রয়েছে, কার কখন কোথায় ডিউটি পড়েছে। সব।
এইটা তো জেনে গেছ, এই ছকটা মোটেও মহালয়ায় বানালে চলে না। তিন মাস আগে থাকতে প্ল্যান রেডি থাকা দরকার। থিমের পুজো করতে চাইলে তো নতুন ইংরেজি বছর পড়তেই ভাবনা চিন্তা শুরু করা চাই। কোন দেশ, কোন রাজ্য, কী বিষয়? কমিটি মিটিং করো ঘন ঘন। তার পর নেট-বই ঘেঁটে তাকে খোঁজো রে, দরকারে দল বানিয়ে সেই স্পটে পৌঁছে যাওয়াও চাই। দেশভ্রমণ হল, ফাঁকতালে একটু ফেলুদা-ব্যোমকেশগিরিও ঝালিয়ে নেওয়া হল। আর পুজোর অজুহাতেই রেফারেন্স ঘেঁটে পড়াশুনা, গবেষণা করার একটি সুবোধ অভ্যাস তোমার ভেতর জমিতে গেঁথে গেল, সেটাই বা বাদ দিই কী করে?
এই সংগঠন করতে গিয়েই দরকার হয় লোক চেনবার ক্ষমতার। কার দক্ষতা কোথায়, সেটা জানতে পারলে তবে তো তাকে ঠিক দলে ফেলা যাবে। আর দলগুলো পোক্ত হলে, টুকরো টুকরো কাজগুলো সময় মতো, খুব ভাল ভাবে উতরে যাবে। আর ওই টুকরোগুলোকে জুড়ে দিলেই তো কেল্লা ফতে। বেরিয়ে যাবে গোটা পুজোটাই। |
|
গ্রাফিক: অরিন্দম বিশ্বাস |
উদ্যোক্তাদের তাই একটু জহুরি মার্কা হতে হবে। বা ব্যাপারটা উলটে দিই। একটু হিরে চেনার বোধ থাকলেই তুমি ভাল উদ্যোক্তা। আহা, মুষড়ে পোড়ো না। নাই বা থাকল, ওই বোধ, সেন্স যা বল। সব কিছুই শিখে নেওয়া যায়। পুজোর খুঁটিনাটি কাজ করতে করতে তুমিও তো প্রচুর মানুষের কাছাকাছি আসবে। তাতেই লোক চেনার ক্ষমতাটাতে শান পড়বে বিস্তর। অন্তর্মুখী খোলসটা ছেড়ে বেরোবে, কইয়ে-বইয়ে হবে, লোককে দলে ভিড়িয়ে দেবার টেকনিকটাও ঠিক আয়ত্তে এসে যাবে দেখো। আচ্ছা, কয়েকটা সুতো ধরিয়ে দিই বরং। পাড়ার কেউ হয়তো স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়ছে। তাকে দলে টানো। সে বরং মণ্ডপসজ্জার দিকটা সামলাক। প্যান্ডেলের মডেল আঁকা, পরিকল্পনা, শিল্পীদের পরামর্শ দেওয়া, এ সব দায়িত্ব দাও তাকে। সেই রকম ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রদের আলোর ভাবনায় জুটিয়ে দাও। শুধুই বিষয়ের ছাপ্পা দেখে বাছাই নয়। বুদ্ধি লাগাও। মিশুকে যারা, সবার সঙ্গে ভীষণ র্যাপো, মানে পি আরটা ফাটাফাটি, তারা চাঁদা তোলার ফিট লোক। বিজ্ঞাপন তোলার, স্পনসরশিপ আনার কাজ, স্টল জোগাড় করবে তারা। যারা অঙ্ক-হিসেবশাস্ত্রে চৌখস, তারা পুরো অ্যাকাউন্টস সামলাবে। আর প্রত্যেকটা কাজের একটা সময়সীমা বেঁধে দিও। আর এ সব কিছুর কিন্তু লিখিত খসড়া চাই। হাতে লেখার যুগ তো গিয়েছে। কম্পিউটারে খটাখট টাইপ করে সক্কলকে একটা করে প্রিন্ট আউট দিয়ে দাও। এক্সেলটাও জলভাত হয়ে যাবে এক্কেরে।
গাঁট্টাগোঁট্টা কষ্টসহিষ্ণুদের নিরাপত্তার ভার দাও। ভলান্টিয়ার ব্যাজ আঁটা কুঁচোর দলও ওদের রাজত্বেই থাক। দড়ি-টড়ি দিয়ে লাইন আটকে ভিড় ম্যানেজ করে দেবে। দিদা, জ্যেঠিমারা থাকতে পুজোর দিকটা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতে হয় না। তাও একটু শান্ত আর গুছুনেদের ওঁদের আশপাশে বসিয়ে রাখো। ফল কাটতে আঙুল কাটবে না, প্রদীপ জ্বালাতে ছ্যাঁকা খাবে না, পুরুতমশাইয়ের সব নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে নৈবেদ্য, ফুল, ঘণ্টা ঠিকঠাক গুছিয়ে রাখবে।
যারা সাংস্কৃতিক দিকটা দেখবে, তাদের কিন্তু বিস্তর মাথা ঘামাতে হবে। চেনা-জানার মধ্যে গায়ক, নৃত্যশিল্পী, অভিনেতা-অভিনেত্রী তো পাওয়া গেল। কিন্তু পুরোটাই তো স্টেজে মারলে চলবে না। মাস দুয়েক আগে থাকতে নিয়মিত অনুশীলন করা চাই। অথচ এই পাড়াতুতো শিল্পীদল তো পেশাদার নয়, স্কুল-কলেজ-অফিস সামলে তবে তারা অনুশীলনের জন্য সময় দিতে পারবে। সেই বুঝে, অনুশীলনের সময় স্থির করা চাই। টুয়া হয়তো আটটার সময় টিউশন থেকে ফেরে। ওকে যে দৃশ্যে প্রয়োজন, সেটা না হয় সাড়ে আটটার সময় প্র্যাক্টিস করা হল। তত ক্ষণ অন্য দৃশ্যগুলো চলতে থাক। আর সুযোগ কাজে লাগাতে শেখো। হয়তো নতুন কোনও ব্যান্ড তৈরি করেছ। এই সুযোগে পাড়ার অনুষ্ঠানে নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দাও। আর গোটা কয়েক অতিরিক্ত গান বা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাও যেন থাকে। হতেই পারে, শিল্পী এসে পৌঁছলেন না, তখন কিন্তু ক্রাইসিস ম্যানেজ করার ব্যবস্থাটাও রাখতে হবে। অসুস্থতা, বৃষ্টি, আগুন, সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি চাই কিন্তু। সমস্যা আসুক কেউ চায় না। কিন্তু আগে থাকতে উপায় ভাবা থাকলে, দিশেহারা-অপ্রস্তুত লাগে না, সমস্যাটা তাড়াতাড়ি মিটে যায়। আর হ্যাঁ, পুরোহিত থেকে ভোগ রাঁধুনি, প্রতিটি প্রয়োজনের ব্যাক আপ প্ল্যান বানিয়ে রাখো। ব্যস, যে কোনও আপৎকালীন পরিস্থতি চটজলদি সামাল দিতে শিখে গেলে তুমি। এই ট্রেনিংটা পরে, পেশার জীবনে খুব কাজে দেবে দেখো।
এত মাথা এক সঙ্গে হলে ঠোক্কর লাগবেই। ও কেন শিল্পীদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবে আর আমি কেন চাঁদা তুলে বেড়াব, এই ধরনের অভিযোগ আসা খুব স্বাভাবিক। সমাধান হল প্রতি বছর দায়িত্বের রোটেশন। আর দেখবে যতই ঝামেলা লাগুক, শেষমেশ সমাধানের রাস্তাও ঠিক বেরিয়ে আসে। কী ভাবে সেটা হয় বলো তো? নিজের চাহিদা, অহংবোধগুলোকে, ক্ষেত্রবিশেষে একটু লাগাম পরিয়ে রাখতে জানতে হয়। আসলে আমরা সকলে এখন মা-বাবার একটি মাত্র সন্তান। সব সময় সেরাটা হাতের মুঠোয় পাই, সারা-ক্ষণ কত্ত যত্ন-আদর। তাই কোথাও এতটুকু অনাদর পেলেও মুখ গোমড়া হয়। বাইরের দুনিয়াটা কিন্তু, তোমাকে মা-বাবার মতো এত বাবা বাছা করে রাখবে না, সেখানে যদি সব সময় মনোযোগ আশা করে বসে থাকো, বিরাট ভুল করবে। আশাটা সব সময় মিটবে না, শুধু শুধু কষ্ট পাবে। তাই, এখন থেকেই অহংবোধটা চাপা দিতে শেখো। আর সেই বিশেষ বিদ্যেটা আয়ত্তে আনতে পুজোর থেকে ভাল সুযোগ আর পাবে না। সবাই চাইবে, তাদের কথাটাই অন্যরা মানুক। সেটা তো আর হয় না, সবাইকে একটা ঐক্যমত্যে আসতে হয়। আর এই মতের মিলটি যারা করিয়ে দিতে পারে, ভবিষ্যৎ তাদের জন্যই ম্যানেজারের কেবিনটি বুক করে রেখেছে। আর দেখবে, সব পাড়াতেই কিছু লোক আছেন যাঁদের মাথা বরফঠান্ডা। স্রেফ নরম গলায় ক’টা বাবা-বাছা বলে, মধ্যস্থতা করে সব মিটিয়ে দেন। পুজোর জোগাড়যন্ত্রে লেগে থাকতে থাকতে তুমিও অমন স্থিতধী মুনি মার্কা সফ্ট স্কিল কব্জা করে ফেলবে, দেখো।
পুজোর ছক কষার সময়ই আর একটা খুব গুরুত্বপূূর্ণ বিষয় বুঝতে পারবে। কেউ কেউ থাকে খুব সৃষ্টিশীল, দারুণ দারুণ আইডিয়া বার করতে পারে। কিন্তু, সেই চিন্তাগুলো বাস্তবায়িত করতে গেলেই, সব ঘুলিয়ে ফেলে। ওটা তার ঠিক আসে না। আবার আর এক দল হয়তো মিটিঙে তেমন কিছু বুদ্ধি দিতে পারছে না, ও দিকে কাজ শুরু হতেই দেখা গেল আলাদিনের জিনের মতো সব ফটাফট করে দিচ্ছে। টিমওয়ার্কে কিন্তু এই দুই দল সমান গুরুত্বপূর্ণ। মাথার কাজ, হাতের কাজ দুয়ের মধ্যে কেউ কিন্তু ছোট-বড় না। বরং ও দুটোর মধ্যে একটা সমন্বয়ের বড় প্রয়োজন। ও হ্যাঁ, শুধু এই কাজ দুটো না, সব ক’টা টুকরোর মধ্যেই কিন্তু একটা যোগাযোগ, সমন্বয় রক্ষা করে চলা চাই। আর সেই দায়িত্বটাও নিতে হবে কয়েক জন করিৎকর্মাকে। ওই সমন্বয়টি না থাকলেই কিন্তু গোটাটা হচপচ পাকিয়ে যাবে।
পুজোটা দেখতে লোকে ভিড় করুক, ক’টা পুরস্কার ক্লাবঘরে ঢুকুক, টিভি-কাগজে ছবি উঠুক, নিশ্চয়ই চাও? প্রজেক্ট পুজোটা হিট করাতে চাই, আমজনতার চাহিদা বোঝার বোধ। বুঝতে হবে লোকে কী খাবে, কী খাবে না। এই ‘বাজার’ ব্যাপারটা এক বার ধরতে পারলেই, পরবর্তী জীবনেও দারুণ কাজে লাগাতে পারবে। আরে, যে কাজই করো, তোমার উলটো দিকে তো এক জন বা একাধিক জন থাকবে। যারা নানা ভাবে তোমার গ্রাহক। তাদের নাড়িটা কী করে বুঝবে, সে তালিমটারও যথেষ্ট সুযোগ মিলবে এই মা দুগ্গার কেলাসেই।
নিঃশব্দে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনিং চলে। টাইম ম্যানেজমেন্ট। শুধু পাড়ার পুজোয় পাঁচ দিন কাবার করে দিলে হয়? বচ্ছরকার দিনে মা-বাবার সঙ্গে ঠাকুর দেখা, স্কুল-কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে পুজোবার্ষিকী আড্ডা ইত্যাদি না থাকলে পুজোর মজা অনেকটাই মিস। অতএব পাঁচটা দিনকে ছোট্ট ছোট্ট সময় কুঠুরিতে ভাগ করো। যেমন পঞ্চমীর সন্ধেটা রাখো ঠাকুর দেখতে যাওয়ার জন্য, একটা গাড়ি আগে থাকতে বুক করে, মা-বাবা বা বন্ধুদের নিয়ে গোটা রাত ঘুরলেই ফাঁকায় ফাঁকায় কলকাতার সব ক’টা বড় পুজো দেখা হয়ে যাবে। অষ্টমী-নবমীতে পুজোর নির্ঘণ্টটাই বেশ ঠাসা। অঞ্জলি, সন্ধিপুজো, কুমারীপুজো, ভোগ ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন বন্ধুরা গোঁসা করলে তাদের আড্ডা দিতে নিজেদের প্যান্ডেলেই ডেকে নাও। দুই কুলই রইল। সব পরিকল্পনাই কিন্তু আগে থেকে গুছিয়ে নিতে হবে। তুমি কোন দিন কত ক্ষণ কাজ করতে পারবে, আগে থাকতে পুজো কমিটিকে বলে রাখলে ওঁদেরও সুবিধে হবে। আর এই অভ্যাসটা এখনই রপ্ত করে নিলে, ভবিষ্যতে যতই ব্যস্ত হয়ে পড়ো, ঠিক নিজের জন্য সময় বের করতে পারবে ।
সারা বছর হাঁ করে তাকিয়ে থাকি ক্যালেন্ডারের দিকে। আর দিনগুলো? এলেই হুস করে বেরিয়ে যায় কেমন। তখন এত্ত বিজি থাকি যে বুঝতেই পারি না। পরে মনে করে ভাবি, আরে-এ-এ জম্পেশ মজা হয়েছিল তো! দিদির পরীক্ষার সিট পড়ল উটকো কোনও জায়গায়, কেউ হদিশ দিতে পারে না। তুমি হঠাৎ লাফিয়ে উঠলে, ‘আমি চিনি তো, নবমীর দিন অমুক শিল্পীকে আনতে গেলাম না?’ চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেছ, ঝাঁ চকচকে ওয়েটিং রুমে অন্যরা গুটিসুটি মেরে বসে। তুমি কিন্তু আত্মবিশ্বাসে টানটান, ‘হুসসস, স্পনসরশিপ জোগাড় করতে এমন কত বাঘা বাঘা অফিসে যেতে হয়েছে, ঘবড়ানেকা নহি।’
তা হলে? দশমীর দিন যখন মা যখন আস্তে আস্তে গঙ্গার দিকে এগিয়ে যাবেন, ছোট্ট হয়ে আসবে উজ্জ্বল মুখটা, তখন কী বর চাইবে তা হলে? এই ক’দিনে কিন্তু বেশ কয়েকটা অস্তর ধরিয়ে দিয়ে গেছেন তোমার হাতে। সাংগঠনিক দক্ষতা, ধৈর্য-সহনশীলতা, স্মার্ট-মিশুকে স্বভাব, মানুষ চেনার ক্ষমতা, মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা, পরিণত বুদ্ধি, ধোনির মতো ‘শশাগড়া’ মাথা... দশটার বেশিই হবে। তাই, সব চাওয়া-টাওয়ার পরে মাকে বরং, একটা মিষ্টি করে ‘থ্যাঙ্ক য়্যু’ও জানিয়ে দিও!
|
|
|
|
|
|
|